পরিচালনায় আসছে সৌদি বিনিয়োগকারী আরএসজিটি

42

ফারুক আবদুল্লাহ

চট্টগ্রাম বন্দরের নবনির্মিত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এই টার্মিনালে বিনিয়োগ ও পরিচালনায় এ পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে সৌদি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি)। ইতোমধ্যেই নবনির্মিত পিসিটি পরিচালনায় আগ্রহী এ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপিএ) ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরশেনের (আইএফসি) সাথে একটি লেনদেন উপদেষ্টা সেবা চুক্তি করেছে। যাতে পদ্ধতিগত বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়।
বন্দর সূত্র জানায়, পিসিটিতে বিনিয়োগ ও পরিচালনায় এই পর্যন্ত যারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তাদের মধ্যে এগিয়ে আছে সৌদি আরবের বিনিয়োগকারী আরএসজিটি। সবকিছু ঠিক থাকলে এই প্রতিষ্ঠানটি পিসিটি পরিচালনার জন্য মনোনীত হতে পারে। এছাড়া অন্যদের মধ্যে রয়েছে ডেনমার্কের এপি মোলার মার্স্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ড (ডিপি ওয়ার্ল্ড), সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল, আদানি পোর্টস এবং ভারতের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
জানা যায়, পিপিপিএ ঢাকায় আইএফসি’র সাথে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নিয়ে একটি লেনদেন উপদেষ্টা সেবা চুক্তি করেছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও পিপিপিএর চেয়ারম্যান আহমেদ কায়কাউস এবং নৌপরিবহন সচিব মো. মোস্তফা কামালের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের ইক্যুইপ, অপারেট এবং রক্ষণাবেক্ষণ’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গত শনিবার পিপিপিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইব্রাহিম এবং আইএফসির ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ম্যানেজার নুজহাত আনোয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এ টার্মিনালে অপারেশন শুরু হলে বছরে চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় ৫ লাখ একক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। একই সাথে বন্দরের মূল জেটির চেয়ে পিসিটিতে কম সময়ে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। এটি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনালের সংখ্যা হবে মোট চারটি। আর বন্দরের মূল জেটির সংখ্যা দাঁড়াবে ২১টি।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ প্রায় ১২ ভাগ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সেই ভাবে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে না। তাই বন্দরে আরও নতুন টার্মিনাল নির্মাণের প্রয়োজন। কিন্তু গত প্রায় ১২ বছরে নতুন কোনো টার্মিনাল নির্মিত হয়নি। সর্বশেষ ২০০৭ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল। দীর্ঘদিন নতুন টার্মিনাল ও জেটি নির্মাণ না হওয়ায় পণ্যের প্রবৃদ্ধি মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে এই বন্দর। প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সক্ষমতা বাড়াতে তিনটি বড় প্রকল্প বন্দর কর্তৃপক্ষ হাতে নিলেও বে-টার্মিনালের আংশিক ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে। আর এখনও লালদিয়া টার্মিনাল ফাইলপত্রেই সীমাবদ্ধ। এ প্রকল্প দুটির ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের ওপরই বেশি জোর দিচ্ছে। নবনির্মিত পিসিটি উদ্বোধনের অপক্ষোয় রয়েছে বলে জানান বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য মতে, বন্দরের ড্রাই ডক থেকে বোট ক্লাবের মধ্যবর্তী ৩২ একর জায়গায় ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পিসিটি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের ১৩ জুন প্রকল্পটির অনুমোদনের পর বাস্তবায়নে সময়সীমা নির্ধারিত ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ৩৯৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করে আরডিপিপি পাঠানো হয়। টার্মিনালটি অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হলে একসঙ্গে তিনটি জাহাজ থেকে ভেড়ানো সম্ভব হবে। প্রকল্পে তিনটি কন্টেইনার ও একটি তেল খালাসের জেটি থাকবে। টার্মিনালটি সাগরের কাছাকাছি হওয়ায় বন্দরের বর্তমান জেটির চেয়ে কম সময়ে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। সাড়ে নয় মিটার ড্রাফটের এবং ১৯০ মিটার জাহাজ ভেড়ানো যাবে এই টার্মিনালে। পিসিটি প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।
পিসিটির প্রকল্প পরিচালক বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান সরকার বলেন, নবনির্মিত পিসিটি এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। টার্মিনালটি অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হলে একসঙ্গে তিনটি জাহাজ থেকে ভেড়ানো সম্ভব হবে। এটিতে তিনটি কন্টেইনার ও একটি তেল খালাসের জেটি রয়েছে। টার্মিনালটি সাগরের কাছাকাছি হওয়ায় বন্দরের বর্তমান জেটির চেয়ে কম সময়ে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। সাড়ে নয় মিটার ড্রাফটের এবং ১৯০ মিটার জাহাজ ভেড়ানো যাবে এই টার্মিনালে।