নিয়মমাফিক জীবনধারায় জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধ

4

ডা. সোমা চৌধুরী

বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় বারো হাজার নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং প্রায় সাড়ে ছয় হাজার নারী অকালে মারা যান। সাম্প্রতিক সময়ে এই ক্যান্সার নিয়ে সরকার এবং অন্যান্য অনেক সংগঠন সচেতনতার জন্য একসাথে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ভয়াবহ এই রোগ ‘প্যাপিলোমা ভাইরাস’ নামে এক প্রকার ভাইরাসের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কারো শরীরে এই ভাইরাস থাকলে যৌন মিলনের সময় পুরুষের শরীর থেকে নারীর দেহে এটি ঢুকে যায়।
ঝুঁকিপূর্ণ নারী তারা, যারা অল্প বয়সে যৌন সংগম করেন, স্বামী বা যৌনসংগীর শরীরে ভাইরাসটি থাকলে, একাধিক যৌন সংগী থাকলে, দীর্ঘদিন ফলোআপ ছাড়া জন্মনিরোধক পিল গ্রহণ করলে, যৌনবাহিত রোগ থাকলে, অধিক সন্তান গ্রহণ করলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে, স্বাস্থ্যকর খাবার না খেলে এবং ধূমপান করলে এ রোগের বিস্তার ঘটে।
জরায়ুর ক্যান্সার প্রতিরোধই সর্বাধিক উত্তম। কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেমন: বাল্যবিবাহ না দেয়া, কম সন্তান গ্রহণ করা,প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং যৌন সম্পর্কে একাধিক সংগী না রাখা। এছাড়া ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য স্ক্রিনিং পরীক্ষা যেমন: ভায়া, প্যাপ্সস্মিয়ার নিয়মিত করা দরকার। পাশাপাশি জরায়ু ক্যান্সারের ভ্যাক্সিন গ্রহণ করা ও ধূমপান না করা জরুরি।

জরায়ু ক্যান্সারের ভ্যাক্সিন: এইচপিভি ভ্যাক্সিন গ্রহণের জন্য ১১-১২ বছর বয়স থেকে ২৬ বছর পর্যন্ত উত্তম সময়। তবে ৯ বছর বয়স থেকে এটি নেয়া যায়। এই বয়সে সম্ভব না হলে জীবনের যে কোন সময় এটি নেয়া যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যৌনজীবন শুরুর আগে এইচপিভি টিকা গ্রহণ অত্যন্ত কার্যকর। প্রথম ডোজ নেয়ার একমাস পর দ্বিতীয় ডোজ এবং ছয় মাসে তৃতীয় ডোজ নিতে হবে। কিশোরীদের জন্য দুই ডোজ ভ্যাক্সিন নিতে হবে। আমাদের দেশে প্রতিডোজ টিকা প্রায় ২০০০-২৫০০ টাকা। তবে বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে কিশোরীদের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে সীমিতভাবে টিকা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী অর্থাৎ পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে প্রথম দফায় এক ডোজ টিকা পাবে। এটা মনে রাখা প্রয়োজন, টিকা নিলেও জরায়ুর ক্যান্সার এর স্ক্রিনিং টেস্ট সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করাতে হবে। মরণঘাতী ক্যান্সার যাতে প্রতিরোধ করা যায় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা যায় সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। অনেক মেয়েরা নিজের ব্যাপারে খুব উদাসীন। ক্যান্সার আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী এত দেরীতে ডাক্তারের কাছে যান যখন তিনি আর চিকিৎসার পর্যায়েই থাকেন না। অথচ একটু সচেতনতা আর নিয়মমাফিক জীবনধারা অবলম্বন করে নারীরা জরায়ু ক্যান্সারকে সহজেই প্রতিরোধ করতে পারে। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা, স্ক্রিনিং করা, চিকিৎসা করা এবং পরিবারের সব নারী ভ্যাক্সিন গ্রহণ করা অবশ্য কর্তব্য। আসুন, সচেতন হই এবং মরণব্যাধি জরায়ুর ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করি।
লেখক: অবস্ ও গাইনী বিশেষজ্ঞ