নির্বাচন নয়, ১০ দফা আদায়েই মনোযোগী বিএনপি

16

এম এ হোসাইন

নির্বাচন নিয়ে কোনো মনোযোগ নেই বিএনপির। আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা, সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত না নিলেও রাজপথের আন্দোলন জোরদারের মাধ্যমে দাবি আদায়ের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে দলটি। ১০ দফা দাবি আদায়ে মাঠে আছেন তারা। সাথে যুক্ত হয়েছে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফার রূপরেখা’ও।
বিএনপি নেতারা বলছেন, রাষ্ট্র একটি গর্তে পড়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে আবার উঠে দাঁড়ায়। বর্তমানেও রাষ্ট্র গর্তের মধ্যে আটকে আছে। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তারেক রহমানের নেতৃত্ব দরকার। ১০ দফা দাবি আদায়ের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে রাষ্ট্রকে দখলদারমুক্ত করতে হবে। এরপর ২৭ দফা রূপরেখা অনুযায়ী রাষ্ট্রের কাঠামো ঠিক করা হবে। এর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। বর্তমান রাষ্ট্র কাঠামোতে নির্বাচনে যাওয়ার পরিবেশ নেই। সরকারকে হটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিবে বিএনপি।
গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ও তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থাসহ ১০ দফা দাবি দিয়েছে বিএনপি। অতঃপর ১৯ ডিসেম্বর ২৭ দফার রূপরেখা ঘোষণা করে। মূলত তাদের দাবি হচ্ছে সরকারের পদত্যাগ। দলটি ইতোমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষে ডান, বাম, ইসলামীসহ সরকার বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে সঙ্গী করেছে। আগামী ১১ জানুয়ারি সবগুলো দল যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে একইদিন নিজ নিজ উদ্যোগে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। ধারাবাহিকভাবে আরো বড় ধরনের আন্দোলনের পরিকল্পনাও আছে তাদের।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাকশালী সরকারের কারণে দেশ যখন গর্তে পড়ে যায়, তখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশ আবার ঘুরে দাঁড়ায়। এখন ফ্যাসিবাদ সরকারের কারণে দেশ আবার গর্তে পড়েছে। এই গর্ত থেকে উঠে দাঁড়ানোর জন্য তারেক রহমানের ১০ দফা। দাবি আদায়ে চলমান আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা নিয়ে সবাইকে জানাতে হবে। সবার মাঝে এসব বিষয় ছড়িয়ে দিতে হবে।’
অবশ্য নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি বিগত দুইটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই উড়িয়ে দিচ্ছে আওয়ামী লীগের সরকার। ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে হোঁচট খাওয়ার পর নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনে সঙ্গীদের নিয়ে গত ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল করেছে। পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে আগামী ১১ জানুয়ারি সারাদেশে বিভাগীয় শহরে ৪ ঘণ্টা গণঅবস্থান করবেন নেতাকর্মীরা। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্য রাজনৈতিক দল ও জোটও একই দিনে একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এভাবে আবারও মানববন্ধন, লংমার্চ, গণঅনশন, সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সরকারের ওপর চাপ তৈরির জন্য বিভিন্ন উপায় নিয়েও ভাবা হচ্ছে। অবস্থা বুঝে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি ঠিক করবে যুগপৎ আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা দলটি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু জানান, ‘১১ জানুয়ারি থেকে আমাদের আন্দোলনের গতি বা গতিবেগ দিন দিন বাড়ানো হবে। নতুন কর্মসূচি আসবে। আমি মনে করি শিগগিরই আসবে সরকার পতনের নতুন কর্মসূচি। সেই আন্দোলনে সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে।’
এদিকে কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে রাখা হয়েছে একজন দলনেতা ও সমন্বয়ক। চট্টগ্রামের দলনেতা করা হয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানকে, সমন্বয়ক করা হয়েছে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমকে। ইতোমধ্যে নেতাদের তত্ত¡াবধানে প্রস্তুতি সভা করছেন নেতাকর্মীরা। তাছাড়া গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনে প্রশাসনের কাছে লালদীঘি, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব অথবা ওয়াসা মোড়ের রাস্তা ব্যবহারে অনুমতি চেয়েছে দলটি।
উল্লেখ্য, বিএনপির ১০ দফার মধ্যে রয়েছে বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগ, একটি দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তরবর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি ও বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করা, রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে দ্রæত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।