নির্বাচন কমিশনের জালে ‘ঘাট আনোয়ার’

23

রাহুল দাশ নয়ন

সন্দ্বীপ যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম কুমিরা গুপ্তছড়া ঘাটের ইজারাদার এসএম আনোয়ার হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে ঘাটের ইজারাদার হওয়ায় সন্দ্বীপের মগধরা ইউনিয়নের এই চেয়ারম্যান ‘ঘাট আনোয়ার’ হিসেবেই অধিক পরিচিত। ঘাটের ইজারাদার হয়েও খাস আদায় বাবদ জেলা পরিষদের পাওনা (গত মার্চ পর্যন্ত) দুই কোটি ৮৯ লক্ষ ৯৮ হাজার ৭৫০ টাকা অর্থ পরিশোধ করেননি। এর মধ্যে কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটের ইজারাদার আনোয়ার হোসেন এবার স›দ্বীপ উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে মনোনযন পত্র জমা দেন। এটা জানতে পেরে বকেয়া টাকা আদায়ের লক্ষ্যে গত ১৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) তার প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেয় জেলা পরিষদ। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘জেলা পরিষদের প্রাপ্য টাকাতো অবশ্যই দিতে হবে। এ ঘাটে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। তাকে বহুবার বলেছি কিন্তু টাকা দিচ্ছে না। অথচ প্রতিদিন ঘাটে ভাড়া আদায় করছে। অবশ্যই আমরা টাকা উদ্ধারে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব। সরকারি টাকা খেলাপী থাকায় তার প্রার্থীতাও বাতিল হয়েছে।’
এদিকে গতকাল (বুধবার) মনোনয়ন পত্র যাচাইকালে হলফনামায় তথ্য গরমিলের অভিযোগে আনোয়ারের মনোনয়ন পত্র বাতিল করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তা। প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে জানতে কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটের ইজারাদার এসএম আনোয়ার হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি প্রার্থীতা ফেরত চেয়ে আপিল করবেন বলে জানান। তবে জেলা পরিষদের বকেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরে কল দিবেন বলে মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন।
চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, ‘সন্দ্বীপের দুইজন প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে। হলফনামায় তথ্য গরমিলের অভিযোগে তাদের মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়। জেলা পরিষদের চিঠির প্রেক্ষিতে আনোয়ারের মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়েছে কিনা সেটা এখনই বলা যাবে না।’
জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, জেলা পরিষদের মালিকানাধীন কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটের ইজারাদার এসএম আনোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন খাস আদায় বাবদ দৈনিক ৭৫ হাজার টাকা ও ভ্যাট-আয়কর ২৫ শতাংশ মিলিয়ে ৯৩ হাজার ৭৫০ টাকা সরকারি পাওনা পরিশোধ করেনি। সে হিসেবে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঘাট পরিচালনার যে অঙ্গীকার করেছিল তার শর্ত ভঙ্গ করেছেন ইজারাদার আনোয়ার। তার কাছ থেকে গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত জেলা পরিষদের পাওনা দুই কোটি ৮৯ লক্ষ ৯৮ হাজার ৭৫০ টাকা। এর আগে গত ২২জানুয়ারি কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটের ইজারাদারকে খাস আদায়ের অর্থ জমা করতে চিঠি দিলেও কর্ণপাত করেননি। অথচ ইজারদার অঙ্গীকার করেছিলেন, প্রতি মাসে খাস আদায়ের অর্থ অগ্রিম হিসেবে মাস শুরু হওয়ার সাত দিন পূর্বে পে-অর্ডার আকারে জেলা পরিষদে জমা করা হবে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঘাট ইজারা নিয়ে জেলা পরিষদের সাথে সম্পাদিত সেই অঙ্গীকারনামার চারটি শর্ত ভঙ্গ করেছেন ইজারাদার আনোয়ার হোসেন।
সন্দ্বীপের বাসিন্দা শাহাদাৎ আলম বলেন, নৌপথে সন্দ্বীপ যেতে মানুষের ভোগান্তির কমতি নেই। ইজারাদারের হাতে জিম্মি সন্দ্বীপের মানুষ। তার নিয়ন্ত্রিত নৌযান ছাড়া অন্য কারোও নৌযান এই রুটে চলাচল করতে পারে না। যে কারণে বাড়তি ভাড়া গুনেই যাত্রীদের সন্দ্বীপ যাতায়াত করতে হয়। সরকারি নিয়মে কিলোমিটারে দশ টাকা ভাড়া নেয়ার কথা থাকলেও অল্পদূরুত্বে নেয়া হচ্ছে ৩৮০ টাকা। ঘাট ইজারা দিয়েই দায় সেরেছে জেলা পরিষদ। এই ঘাটের শৃঙ্খলা ফেরাতে কোন উদ্যোগ নেয়নি জেলা পরিষদ।