নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা দূর করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের

33

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে তত শঙ্কা বাড়ছে। ভোটার থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ সবার মনেই প্রশ্ন ভোট দিতে পারবেন কীনা। নির্বাচন কমিশন বলছেন, সুষ্টু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সবরকমের প্রস্তুতি তারা নিয়েছেন। ভোট দেয়ার জন্য মানুষকে ভোট কেন্দ্রে আসতে হবে। কারণ এটি তাদের অধিকার। তবে মানুষের মনের ভয় দূর করার মেকানিজম তাদের কাছে নেই। আর মাত্র ১০দিন পর চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচন। চলছে প্রার্থীদের প্রচার। পোস্টার আর নানা প্রতীকে ছেয়ে গেছে নগরী। তারপরও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা কাটেনি। অনেকেরই মনে প্রশ্ন ‘ভোট দিতে পারবেনতো’? ভোটের পরিবেশ থাকবে তো? ভোটারদের এসব প্রশ্নের কারণ সম্প্রতি পাঠানটুলি ওয়ার্ডে ২ প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা, চাঁন্দগাও দুই প্রতিদ্ব›দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনাসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত, প্রচারণায় বাধা, পোস্টার ছিঁড়া ইত্যাদি ছোট থেকে বড় বহু ঘটনা ইতোমধ্যে ঘটে গেছে।
এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে চাইলেও আদৌ সেই সুযোগ হবে কিনা- তা নিয়ে নিত্য আলোচনা চলছে নগরজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় পাশাপাশি প্রতিদ্ব›দ্বী। তবে আশার কথা হচ্ছে, প্রতিদ্ধন্ধি দলগুলোর মেয়র প্রার্থীরা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে তাদের প্রচারণা চালাচ্ছেন, সর্বত্র পোস্টার ও ব্যানার চোখে পড়ার মত। যদিও শুরুর দিকে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে পোস্টার লাগাতে না দেয়া ও ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ ছিল। তবে এই সহাবস্থান কতদিন বজায় থাকবে তা নিয়েও সন্দেহ আছে। আমরা আশা করি, এসহ অবস্থান নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। তবে এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। ছোট হোক, বড় হোক যেকোন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
সম্প্রতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতার উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশিষ্টজনরা বলেছেন যতই দিন যাচ্ছে নির্বাচনে উদ্বেগের উপাদানগুলো বাড়ছে। প্রতিনিয়ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সংকুচিত হচ্ছে। তাই নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ বাড়ছে। তাঁদের মতে, “নির্বাচন কমিশন ব্যর্থতার অনেক নজির রেখেছে। তারপরও আমরা আশা করব এবার তারা যদি ভালো কিছু পদক্ষেপ নিয়ে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারে তাহলে কিছুটা হলেও তাদের ইমেজ পুনরুদ্ধার হবে।”
এ ক্ষেত্রে আমরা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটির নির্বাচনে এমন অভিযোগের জবাবে নির্বাচন কমিশনের এক সদস্যের দেয়া উর্দতি প্রণিধানযোগ্য বলে মনে করি। তাঁর ভাষায় “শহরে বা বাংলাদেশে সবাই নির্ভয়ে চলাফেরা করছেন। অফিস আদালত কাজকর্ম সমানে করছেন। বাজারে যাচ্ছেন, ব্যবসা করছেন। কিন্তু ভোট দেয়ার ব্যাপারে বলছেন আমি ইনসিকিউরড ফিল করছি। এখন আমরা কী করতে পারি। আমরা কী করলে সিকিউওরড ফিল করবেন। সেই ক্ষমতা আমাদের আছে কিনা। ওই সামর্থ্য আমাদের আছে কিনা। এটা নিশ্চিত তাহলে মনের ভয়। এখন মনের ভয় দূর করার কোনো মেকানিজম আমাদের কাছে নাই।”
তিনি বলেন, “আমরা সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। ফিজিক্যালি যাতে কিছু না হয় তার নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছি। আপনাদেরকে বলব আপনারা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যান। আপনি নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন। এই নিশ্চয়তা আমরা দিচ্ছি।” দেশের জনগণ নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা রেখে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন, তবে ভোটাররা একটি নিশ্চয়তা চাই, ভোটর যেন তার নিজের ভোটটা দিতে পারেন। এ দায়িত্ব অবশ্যই নির্বাচন কমিমনকে নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে, যেমন রাজনৈতিক দল, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও ভোটারদের। সব দায় নির্বাচন কমিশনের উপর বর্তিয়ে আমরা যদি হাত-পা বেঁধে ঘরে বসে থাকি, তবে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ার কিছুটা দায় আমাদের উপর বর্তাবে।