নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমছে, ফিরছে স্বস্তি

7

মনিরুল ইসলাম মুন্না

নগরীর বিভিন্ন বাজারে বেশ কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এক মাসের ব্যবধানে পণ্যমূল্য হ্রাসে ভোক্তারা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা, কিছু বড় প্রতিষ্ঠান রমজান উপলক্ষে কিছু পণ্যে ছাড় দেওয়ার ফলে বাজারে স্বস্তি ফিরছে বলে দাবি ক্রেতাদের।
তবে রমজানে অধিক ব্যবহৃত ছোলা, বেসন, খেজুরসহ সব ধরনের মাংস ও ফল এখনো বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে দাম নির্ধারণ করা হলেও তা অনেকে মানছেন না। গতকাল বুধবার নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু পণ্যের দাম কমলেও একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দুই মাস আগে থেকে এসব পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি করে আসছিল। এখন দাম কমিয়ে অনেকে ক্রেডিট নিচ্ছেন।
এর আগে গত রবিবার বসুন্ধরা গ্রুপ এবং সোমবার সিটি গ্রুপের সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘পবিত্র রমজানে কতিপয় সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ রেখে মূল্যবৃদ্ধি করার কারণে সাধারণ ভোক্তা কষ্ট পাচ্ছে। সিটি গ্রæপের মতো অন্যান্য খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী খোলা বাজারে বিশেষ ছাড়ে বিক্রি করলে সাধারণ ভোক্তাদের কষ্ট লাঘব হবে।’
সিটি গ্রুপের চট্টগ্রাম সেলস অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক শহীদ আলী রেজা বলেন, ‘রমজান মাসজুড়ে সাধারণ ভোক্তাদের জন্য আকর্ষণীয় মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় ১০টি পণ্য বিক্রয় অব্যাহত থাকবে। তীর অ্যাডভান্সড সয়াবিন তেল ১ লিটার ১৬৩ টাকার পরিবর্তে ১৫৬ টাকা, তীর অ্যাডভান্সড সয়াবিন তেল ৫ লিটার ৮০০ টাকার পরিবর্তে ৭৬৫ টাকা, তীর সরিষার তেল ২৫০ এম.এল বোতল ৯৫ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা, তীর ছোলা বুট ১ কেজি প্যাক ১২৫ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা, তীর চিনিগুড়া চাল ১ কেজি প্যাক ১৭০ টাকার পরিবর্তে ১৩৫ টাকা, জীবন পানি ৫০০ এম.এল বোতল ২০ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা, জীবন পানি ১ লিটার ২৫ টাকার পরিবর্তে ১৫ টাকা, তীর চিনি ১ কেজি প্যাক ১৪৬ টাকার পরিবর্তে ১৪০ টাকা, তীর ফিরনি মিক্স ১৫০ গ্রাম প্যাক ৬০ টাকার পরিবর্তে ৪৫ টাকা এবং তীর হালিম মিক্স ২০০ গ্রাম প্যাক ৬৫ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকায় বিক্রয় করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।’
খুচরা বাজার ঘুরে জানা যায়, প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৩-১৬৫ টাকায়। যা আগে ১৭৩-১৭৫ টাকা ছিল। প্রতিকেজি প্যাকেট আটা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা এক মাস আগে ৬৫ টাকা ছিল। খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা, যা আগে ৭০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। যা আগে ১৮০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকায়, যা এক মাস আগে ২৫০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি হলুদ ২৫০-২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ৩০০-৩৫০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। যা আগে ৯৫০-১০০০ টাকা ছিল।
এদিকে ভারত থেকে আমদানির খবরে অবৈধভাবে মজুত পেঁয়াজ বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। যা এক মাস আগে ১২০ টাকা ছিল। অর্থাৎ, অর্ধেকে নেমে এসেছে দাম।
রিয়াজউদ্দিন বাজার জে.কে স্টোরের ম্যানেজার মো. মামুন বলেন, ‘আড়তে দাম কমিয়ে দেওয়ায় আমরাও পেঁয়াজের দাম কমিয়েছি। এখান মানভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় খুচরা বিক্রি করছি।’
এদিকে খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে মান ও দামভেদে সাদা মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। যা রোজার আগে ৭০ টাকা ছিল। মান ও বাজারভেদে প্রতিকেজি বেসন বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকায়। যা আগে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হতো। এছাড়া ইফতারে শরবত তৈরিতে ব্যবহৃত ইসবগুলের ভুসি, ট্যাং, রুহ-আফজা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি ইসবগুলের ভুসি রোজার আগে ১ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন ২ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি প্যাকেটজাত ট্যাং বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৮০০ টাকা। বড় সাইজের রুহ-আফজা বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকায়। যা আগে ৩৫০ টাকা ছিল। ছোট সাইজের রুহ-আফজা বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়। যা আগে ২০০ টাকা ছিল। সোমবার প্রতিলিটার খোলা সরিষার তেল বিক্রি হয়েছে ২৬০-২৭০ টাকায়। যা আগে ২৫০-২৬০ টাকা ছিল।
খুচরা বাজারে প্রতিকেজি লাল আপেল ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ২৬০-২৭০ টাকা ছিল। কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি। যা আগে ২৮০-৩০০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি আনার বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা। যা আগে ৩১০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি বরই বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। যা আগে ৭০-৮০ টাকা ছিল। পেয়ারার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। যা আগে ৬০-৭০ টাকা ছিল।
তাছাড়া কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী খুচরা পর্যায়ে গরুর মাংস কেজিতে সর্বোচ্চ ৬৬৪ টাকা ৩৯ পয়সা এবং খাসির মাংস ১০০৩ টাকা ৫৬ পয়সায় বিক্রি করতে হবে। কিন্তু খুচরা বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ ও খাসির মাংস ১১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার ১৯৫ থেকে ২১০ টাকা ও সোনালি ৩৫০ টাকা। দেশি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন পূর্বদেশকে বলেন, সরকারের একাধিক তদারকি সংস্থা বাজারে কাজ করছে। এতে করে কিছু পণ্যের দাম রোজায় কমাতে শুরু করেছে। তবে দেখা গেছে, যেসব পণ্যের দাম কমছে-তা রোজার আগেই দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন বেশি দামে বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা করে এখন দাম কমানো হচ্ছে। এছাড়া বাজারে এখনও অনেক পণ্য অযৌক্তিক দামে বিক্রি হচ্ছে। তদারকির মাধ্যমে সেগুলোর দামও নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এতে ক্রেতার স্বস্তি ফিরবে।