নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণে বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই

57

দৈনিক পূর্বদেশসহ স্থানীয় ও জাতীয় সহযোগী পত্রিকাগুলোর গতকালের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে ৬টি প্রশাসনিক জোনে বিভক্তির উদ্যোগ এবং এ উদ্যোগ কার্যার্থে নির্বাহী কর্মকর্তা পদায়ন করার জন্য জনপ্রশাসন সচিবকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের চিঠি প্রেরণ করা। সংবাদটি চট্টগ্রাম নগরবাসীর জন্য আশাব্যঞ্জক। চসিক নির্বাচিত মেয়র আ.জ.ম.নাছির উদ্দিন ও তাঁর পরিষদের মেয়াদ শেষে সরকার রাজনীতিক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনকে প্রশাসক নিয়োগ দেন। অপরদিকে কাউন্সিলরদের কাজ তদারকি করতে কোন পরামর্শক নিয়োগ না দেয়ায় নগরবাসীর প্রয়োজনীয় সেবা কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় নগরীর প্রায় ৬০ লাখ মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে নগরীকে প্রশাসনিক জোনে বিভক্তি বা বিকেন্দ্রকরণ ছাড়া আর কোন বিকল্প আছে বলে আমাদের মনে হয়না। তাছাড়া এ জোন বিভক্তি ও নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান নির্বাচিত পরিষদ থাকাকালীন যেখানে কার্যকর হওয়ার কথা, সেখানে ৭বছর পর সংকটকালীন সময়ে তা কার্যকর হলে নগরবাসী উপকৃত হবেন। প্রশাসকও তাঁর অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে কাজের গতি বাড়াতে পারবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। বুধবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব নাজনীন ওয়ারেস স্বক্ষরিত পত্রে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসক নিয়োগের সাথে সাথে পুরাতন পরিষদ বিলুপ্ত হয়েছে বিধায় বর্তমানে সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর না থাকায় ওয়ারিশান সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম/মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রদানসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সচল রাখার জন্য আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ জরুরি। তাই চসিককে ছয়টি অঞ্চলে জরুরি ভিত্তিতে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা পদায়নের জন্য নির্দেশক্রম অনুরোধ করা হলো।’
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় যে, ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে ছয়টি অঞ্চলে বিভক্ত করতে হবে। যাতে সিটি করপোরেশনের প্রদত্ত নাগরিক সেবাগুলো অধিকতর নিশ্চিত করা হয়। প্রতিটি আঞ্চলিক অফিস থেকে প্রশাসনিক কাজ, হিসাব রক্ষণ, জোনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, সমাজকল্যাণ, পূর্তকাজ ও রক্ষণাবেক্ষণ, বৈদ্যুতিক কাজ ও রক্ষণাবেক্ষণ, বস্তিবাসীদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তা প্রদান ও প্রশিক্ষণের দেওয়া কথা রয়েছে। প্রত্যেক আঞ্চলিক অফিসে একজন প্রধান থাকবেন এবং কেন্দ্রীয় সিটি করপোরেশনের সমন্বয় করে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ রয়েছে প্রজ্ঞাপনটিতে। সরকারি প্রজ্ঞাপন থাকলেও বাস্তবায়নে কোনো ধরনের প্রদক্ষেপ নেননি তৎকালীন বিএনপি সমর্থিত মেয়র এম মনজুর আলম। এরপর আ.জ.ম. নাছির উদ্দিনের পাঁচ বছরে জোন বিভক্তির আর কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। বর্তমান প্রশাসক দায়িত্ব নেয়ার পর প্রশাসনিক ও নাগরিক সেবা কার্যক্রমে গতি ফেরাতে জোন বিভক্তির উদ্যোগ নেন, সর্বশেষ তা কার্যকর হতে যাচ্ছে বলে আমাদের ধারণা। আমরা আশা করব, এ উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বাস্বায়নে দ্রæত ব্যবস্থা নেবে। একইসাথে আমরা বলতে চাই, প্রশাসক সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়ন কার্যক্রমের তদারকি এবং যথাসময়ে সম্পন্ন করতে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এর পাশাপশি বিজ্ঞ প্রশাসক প্রশাসনিক ও শিক্ষা ক্ষেত্রে পদোন্নতি, অধ্যক্ষ পদে নিয়মিতকরণ এবং শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের স্থায়ীকরণের মাধ্যমে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনারও উদ্যোগ নেবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা। উল্লেখ্য যে, ১৯৮৮ সালে সরকার চসিককে ৩ হাজার ১৮০টি সাংগঠনিক পদের অনুমোদন দেয়। কিন্তু চাকরির প্রবিধানমালা অনুমোদন না হওয়ায় দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় কোনো নিয়োগ ও পদোন্নতি দিতে পারেনি সংস্থাটি। ফলে অতিরিক্ত দায়িত্ব ও চলতি দায়িত্ব দিয়ে কাজ সেরে এসেছে সংস্থাটি। সর্বশেষ গত বছরের ১১ জুলাই ১৯৮৮ সালের অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোর চাকরির বিধিমালার অনুমোদন হয়। ফলে এখন নিয়োগ বা পদোন্নতিতে কোনো ধরনের আইনগত জটিলতা নেই।