নগরীর ৪ পাহাড় ঘিরেই দুশ্চিন্তা

18

চট্টগ্রামে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৭টি পাহাড় আছে। এসব পাহাড়ের অবৈধ দখলদার আগেই চিহ্নিত করা হয়েছে। ধস এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো থেকে অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদের বিকল্প নেই। কিন্তু আইনি বাধার মুখে পড়ে উচ্ছেদ থেকে পিছপা হয়েছে প্রশাসন। আপাতত উচ্ছেদের পরিবর্তে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে হলেও মৃত্যুঝুঁকি কমানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মতিঝর্ণা পাহাড়, বাটালি হিল, সীতাকুন্ডের ছলিমপুর ও ফিরোজ শাহ পাহাড়ে উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আছে। এসব পাহাড় থেকে ৩০৭টি পরিবারকে সরিয়েছে শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নাজমুল আহসান পূর্বদেশকে বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোর মধ্যে চারটিতে প্রচুর মানুষ বসবাস করে। মতিঝর্ণা পাহাড়ে তো সাত তলা ভবনও আছে। উচ্চ আদালতে রিট থাকার কারণে এসব পাহাড়ে উচ্ছেদ চালানো যাচ্ছে না। আইনি জটিলতা না থাকলে এক দিনেই উচ্ছেদ করা যায়। এখন তা করতে গেলেই আদালত অবমাননা হবে। যে কারণে আমরা সতর্কতা জারি করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছি। শুধু মতিঝর্না পাহাড় থেকেই দেড় শতাধিক পরিবারকে সরানো হয়েছে।’
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি সূত্র জানায়, রেলওয়ের মালিকানাধীন ফিরোজ শাহ পাহাড়ে তিন হাজার পরিবারের বসবাস। আইনি জটিলতা থাকায় এ পাহাড়টি উচ্ছেদে তালিকাভুক্ত করা হয়নি। জেলা প্রশাসনের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের তালিকায় এই পাহাড়ের নাম নেই। কারণ, এ পাহাড়টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উচ্ছেদ তালিকায় রাখায় গত বছর উচ্চ আদালত থেকে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে শোকজ করা হয়েছিল। যে কারণে উচ্ছেদের পরিবর্তে শুধুমাত্র সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ পাহাড়টি রেলওয়ের মালিকানাধীন হলেও তাদের কাছে পাহাড়ের বিষয়ে কোনও তথ্য নেই।
পাহাড়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মতিঝর্ণা ও বাটালী হিল পাহাড় দুটি। মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল নিয়েও উচ্চ আদালতে কমপক্ষে আটটি রিট আছে। জেলা প্রশাসনের তালিকায় এ পাহাড়ে ৩২০টি পরিবার বসবাস করে দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে সেখানে দুই হাজারের অধিক পরিবার বসবাস করে। সেখানে গড়ে উঠেছে সাত তলা ভবন। রেলওয়ে ও জেলা প্রশাসন এ জমি লিজ না দিলেও প্রভাবশালী মহল পাহাড় দখল করে গড়ে তুলেছে স্থাপনা। যা ভাড়া দিয়ে প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন দখলদাররা। এ আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশই পাহাড়ে উচ্ছেদ ঠেকাতে ব্যয় করছেন তারা।
আরেকটি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় হলো সীতাকুন্ডের জঙ্গল ছলিমপুর পাহাড়। এ পাহাড়ে প্রচুর মানুষের বসবাস। পাহাড় কেটে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বাড়িঘর। পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারীরা প্রশাসনের উচ্ছেদ ঠেকাতে ২০১৭ সালেই উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। এ রিটের কারণে কোনোভাবেই অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে পারছে না প্রশাসন। যে কারণে এই পাহাড়ে মৃত্যুঝূঁকি আছে। এক নামেই জঙ্গল ছলিমপুরকে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও সেখানে ছোটবড় ১৮টি পাহাড় আছে।
২১তম পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার যত রিট মামলা আছে তা দ্রæত নিষ্পত্তি করতে জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। কিন্তু আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান না থাকায় রিট নিষ্পত্তিতেও বেগ হতে হচ্ছে। এদিকে বৃষ্টিপাত বাড়ার সাথে সাথে পাহাড় ধসের ঝুঁকি বাড়ায় অধিক মানুষের বসবাস থাকা পাহাড়গুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে প্রশাসনের।
সরানো হয়েছে ৩০৭ পরিবার : গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের এলাকায় ৯৮ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। বৃষ্টিপাত বাড়ার সাথে সাথে প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা পাহাড়েই ব্যয় করেছেন পুরো সময়। জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ সব এসিল্যান্ড ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিয়েছেন। পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরাতে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল ১০টি আশ্রয়কেন্দ্র। সেখানে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। এরমধ্যে সীতাকুন্ড জঙ্গল ছলিমপুরে ৩০টি পরিবার, কাট্টলীতে ১০৭টি পরিবার, মতিঝর্ণায় ১৫০টি পরিবার ও পোড়া কলোনিতে ৩০টি পরিবারকে সরানো হয়েছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নাজমুল আহসান পূর্বদেশকে বলেন, ‘সকাল থেকেই পাহাড়ে গিয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে। মানুষজনকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। অধিক বৃষ্টি হওয়ার পরেও মানুষগুলো অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করেন। চারটি পাহাড়ের বাসিন্দাদের সরানোর তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। বাকিসব পাহাড়ের বাসিন্দাদেরও সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।’