নগরজুড়ে মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংসের অভিযান

49

ফগার মেশিন দিয়ে মশার ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে দিনব্যাপী ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ সম্পন্ন করেছে সিটি কর্পোরেশন। গতকাল নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিচ্ছন্নকর্মী উন্মুক্ত স্থান, নালা-নর্দমা ও রাস্তাঘাটে এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়াও সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করার বিষয়ে সচেতনতা কর্মসূচি পালন করা হয়। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আদালত ভবন এলাকার বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের নিচে এডিস মশা নিধন ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হয়।
গতকাল সকালে অপর্ণা চরণ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ আঙ্গিনায় ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ সময় তিনি বলেন, যেদিন থেকে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে সেদিন থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভারত থেকে সংগ্রহ করা ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করার নানা উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা দেশে প্রথম বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা চালু করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী রুটিন মতো সারা বছর এডিস মশার বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। সদিচ্ছা, সৎ মানসিকতা, কর্তব্যবোধ চাই। ৪১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলররা সচেতনতামূলক কাজের তদারক করবেন। সচেতনতাই আমাদের রক্ষা করবে। নিজে সচেতন হবেন, অন্যদের সচেতন করবেন। বাড়ির ফুলের টব, ফ্রিজের ট্রে, এসির পানি তিনদিন পর পর ফেলে দেবেন।
মেয়র বলেন, দুই হাজার সালে কলিকাতা শহরে ডেঙ্গু রোগ মহামারি আকার ধারণ করেছিল। সেদিন তারা ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। সেই কর্মসূচির সুফল পাচ্ছে আজ অর্থাৎ ১৯ বছর পর। বর্তমানে কলিকাতা শহরে কোনো ডেঙ্গু রোগী নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, আমরা বীরের জাতি, মাত্র নয় মাসে একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীকে পরাজিত করেছি। ছিনিয়ে এনেছি স্বাধীনতা। শুধু তাই নয়, পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ গড়তেও সক্ষম হয়েছি আমরা। ডেঙ্গুমুক্ত নগর গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে সিটি মেয়র বলেন, আজ থেকে শুরু হলো একযোগে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা অভিযান। আমরা ডেঙ্গুমুক্ত চট্টগ্রাম গড়েই ছাড়বো।
সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ বিভাগ জানায়, চসিকের আওতাধীন ৪১টি ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্ন বিভাগের ৩৬৪৭ জন পরিচ্ছন্নকর্মী এবং ৯২ জন সুপারভাইজার একযোগে উন্মুক্ত স্থান, নালা-নর্দমা ও রাস্তাঘাটে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশগ্রহণ করেছে । তবে এ অভিযান আজকের (বৃহস্পতিবার) দিনের মধ্যে সমীবদ্ধ নয়, সারা বছর এডিস মশার প্রজনন স্থান ধ্বংসের জন্য কাজ করবে চসিক। এই কর্মসূচি সার্বিকভাবে তদারকি করবেন ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। এই পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির সফলতা নির্ভর করবে নগরবাসীর সদিচ্ছা, সৎ মানসিকতা ও দায়িত্ববোধের উপর।
এ সময় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ডেঙ্গু একটি বাস্তবতা। আগেও ছিল, এখনও আছে। তবে শঙ্কা নয়, চাই সচেতনতা। সমস্যার মূলে আঘাত করতে হবে। আপনার টেবিলের নিচে, বাড়ির ছাদে এডিস মশা আছে। এডিস মশার প্রজনন স্থল নির্মূল করতে হবে। এক্ষেত্রে ১ হাজার মানুষের জ্বর হলে ২ জনের ডেঙ্গু রোগ হতে পারে। ভরা পেটে প্যারাসিটামল, বেশি করে পানি, ফলের জুস খাবেন। তরল খাবার খাবেন। বিশ্রাম নেবেন। ব্যথার ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ এই চিকিৎসকের।
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. তৈয়ব আলী ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মশা পায়ে কামড়ায়। পায়ে মোজা থাকলে কামড়াতে পারবে না মশা। ক্লাবে বসে থাকলে পা নাড়াতে থাকবে। ইংলিশ কমোডের ঢাকনা দিয়ে আর সাধারণ কমেডের ওপর কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার জন্য ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ এই চিকিৎসকেরও।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ বাচ্চু , শৈবাল দাশ সুমন, তারেক সোলেয়মান সেলিম, অর্পণা চরণ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য এসএম সাইফুদ্দিন, চসিক প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার সেলিম আকতার সেলিম চৌধুরী, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ আলী, রাজনীতিক জামশেদুল আলম এবং অর্পণা চরণ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।