ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড বর্বর ও ঘৃণিত অপরাধ মুলৎপাটন সম্ভব হবে

45

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধ দিন দিন বেড়ে চলছে। বাড়ছে নারীর প্রতি সহিংসতাও। কঠোর আইন, প্রচার প্রচারণা ও উচ্চ আদালতের নানা ধরনের নির্দেশনার পরও নারীর প্রতি সহিংসতা কমানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে কয়েকমাসের ব্যবধানে আমাদের দেশে ধর্ষণ অপরাধ উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম দেশ বাংলাদেশ যেখানে প্রগতিশীল ও আধুনিক ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বাস সেখানে ধর্ষণ ও নারী-শিশু নির্যাতনের মত সামাজিক অপরাধের আশঙ্কাজনক বিস্তার দুঃখজনক বটে। শুধু ধর্ষণের মধ্যেই এই অপরাধ সীমাবদ্ধ নেই। ধর্ষণের পর অপরাধ আড়াল করতে ধর্ষিতাকে অনেক সময় নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। সাম্প্রতিক সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রলীগের কর্মী নামধারী কিছু নরপশুদের দ্বারা স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ। যা নিয়ে এখন সারাদেশে তোলপাড় চলছে। এই ধর্ষণের ঘটনা এতটাই সাড়া জাগিয়েছে যে, একই সময়ে ঘটা অপরাপর ধর্ষণের ঘটনাগুলো আড়ালে চলে গেছে। যদিও প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশ ধর্ষকদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। এঘটনার রেশ না কাটতেই গত ৪ অক্টোবর আরও একটি নারী নির্যাতনের বর্বর ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় দেশবাসী রীতিমতো ক্ষুব্ধ। ঘটনাটি ২ সেপ্টেম্বর ঘটলেও ৩২ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ঘৃণার ক্ষোভ ঝড়ে পড়ে সারাদেশে। এঘটনার প্রায় একবছর আগে বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে রাতে তুলে নিয়ে এক বখাটের ধর্ষণের ঘটনা দেশে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সেই ধর্ষক মজনুর বিচার এখন চলছে।
দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা সারা বছর ধরেই ঘটছে। তবে সব ঘটনা আলোচনায় আসে না। ফলে আমরাও অবগত হই না। কিন্তু পরিসংখ্যান দেখলেই ধর্ষণ বৃদ্ধির উদ্বেগজনক চিত্র আমাদের সমানে উঠে আসে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) সারাদেশের ধর্ষণের ঘটনা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩২ জন। অর্থাৎ, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ। তার আগের বছর ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ৮১৮ জন নারী। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৭৫টি। এর মধ্যে গণধর্ষণের ঘটনা ২০৮টি। এ ছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ৪৩টি। ২০১৯ সালেও ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল ৭৬ জনকে। আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ জন নারী। ২০১৯ সালে যৌন হয়ানারীর শিকার হয়েছেন ২৫৮ জন নারী। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৭০ জন। অর্থাৎ শুধু ধর্ষণই নয়, নারীর প্রতি সহিংসতার অন্য চিত্রগুলোও ভয়াবহ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশও হচ্ছে। ধর্ষকরা গ্রেফতারও হচ্ছে। তারপরও থামছে না ধর্ষণের মতো অপরাধ। ভাইরাসের মতো সমাজের সকল স্তরে এই ব্যাধি ছাড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে সরকারের কাছে দাবি উঠেছে ধর্ষণের মত জগণ্য অপরাধেরে সবোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করার। আশার কথা সরকার সেই দাবি পুরনের ঘোষণা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং এ নির্দেশ দিয়েছেন আইন মন্ত্রণালয়কে। আইনমন্ত্রী সহসা আইন সংশোধন করে মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখা হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সিলেট এমসি কলেজ হোস্টেলে বর্বরোচিত সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জসহ বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক নারী-শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান ঘটনায় লাগাম টানতে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডকেই যথোপযুক্ত মনে করছে সরকার। বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ (সংশোধন) অনুযায়ী ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন। এবার ওই আইন সংশোধন করে মৃত্যুদন্ডের বিধান যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী সোমবার এ সংশোধনী মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। সূত্র জানায়, ধর্ষণ-সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে মৃত্যুদন্ডের বিধান যুক্ত করার পাশাপাশি এ-সংক্রান্ত মামলার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন ধর্ষণ-সংক্রান্ত মামলার তালিকা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে এ তালিকা প্রণয়ন করা হবে। এরপর এসব মামলার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে প্রধান বিচারপতির কাছে বিশেষ বেঞ্চ গঠনের জন্য অনুরোধ জানাবে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ব্যাপারে সচেষ্ট। তারই আলোকে ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচারের জন্য তালিকা প্রণয়ন এবং সেটি প্রধান বিচারপতি ও হাইকোর্টে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আশাকরি, এ আইন কার্যকর হলে দেশ থেকে ধর্ষণের মত বর্বর ও ঘৃণিত অপরাধ মুলৎপাটন সম্ভব হবে।