দেড় বছরে শততম বাইপাস সার্জারির মাইলফলকে

15

পূর্বদেশ ডেস্ক

অবসরের পর ২০২১ সালে রক্তনালীতে ‘ব্লক’ ধরা পড়ে ষাটোর্ধ্ব মোয়াজ্জেম হোসেনের। এক বছর অস্ত্রোপচার এড়িয়ে চিকিৎসা নেন। পরের বছর অসুস্থতা বাড়লে পরীক্ষায় দেখা যায় তার ব্লক রয়েছে চারটি। ভারত ঘুরে শেষ পর্যন্ত বাইপাস অস্ত্রোপচার করান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দেশের অন্যতম পুরনো ও বড় এ সরকারি হাসপাতালে ‘বাইপাস সার্জারি’ হয় তা অনেকের মত জানা ছিল না বেসরকারি
চাকরি থেকে অবসর নেওয়া মোয়াজ্জেমেরও। অনেক কম খরচেই এখানে চিকিৎসা করাতে পারছেন তিনি। খবর বিডিনিউজ।
বুধবার তার ছেলে সাকিব জানান, এখন অনেকটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার দিন গুনছেন তার বাবা। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে লাখ টাকার মত। অথচ রক্তনালীতে দ্বিতীয় দফায় যখন চারটি ব্লক ধরা পড়ে তখন বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখেন খরচের পরিমাণ অনেক বেশি।
পরে বাবাসহ ভারতে যান তারা। সেখানে জানতে পারেন, অস্ত্রোপচারে শুধু হাসপাতালেই খরচ হবে চার লাখ টাকা। ওষুধ ও যাতায়াতসহ অন্যান্য হিসাব করে দেখেন অঙ্কের পরিমাণটা অনেক বড়।
পরে খোঁজ পেয়ে চলে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাইপাস সার্জারি বিভাগে। গত ডিসেম্বরের ভর্তি হন বছর কয়েক আগে চালু হওয়া এখানকার কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগে। গত ১৫ জানুয়ারি বাইপাস সার্জারি হয় তার। অনেকটাই নতুন এ বিভাগে এখন পর্যন্ত একশর বেশি বাইপাস সার্জারি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। গত ১১ জানুয়ারি শততম অস্ত্রোপচারের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তারা।
২০১৯ সালে ৭ জুলাই বিভাগের কার্যক্রম শুরু হলেও মাঝে কোভিড মহামারীর কারণে অস্ত্রোপচার বন্ধ ছিল। এ সময়টুকু বাদ দিলে সেখানে ‘দেড় বছরের মত’ কার্যক্রম চলেছে বলে জানান বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ইশতিয়াক আহমেদ।
পুরনো এ হাসপাতালে নবীন এ বিভাগ চালুর প্রসঙ্গে তিনি জানান, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ নেই শুনে অবাক হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী; বলেছিলেন ‘এটা কিভাবে সম্ভব’।
ডা. ইশতিয়াক জানান, পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাতেই দ্রুত এ বিভাগ চালু করা হয়। ২০১৬ সালে শেষের দিকে এখানে বদলি হয়ে আসেন তিনি।
প্রথমে ছোট পরিসরে বিভাগটি খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে আধুনিক যন্ত্রপাতি যুক্ত হয়। কয়েকজন চিকিৎসক, একটি অপারেশন থিয়েটার আর কিছু বেড নিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৯ সালের ১০ জুলাই এ বিভাগে প্রথম সার্জারি হয়, জানান তিনি।
আস্তে আস্তে গুছিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়ে এই সার্জন বলেন, এরপর মহামারীতে বিভাগটি কোভিড রোগীদের জন্য ছেড়ে দিতে হয়। সংক্রমণ কমে এলে আবার চালুসহ সব মিলিয়ে তারা এখন পর্যন্ত কাজ করতে পেরেছেন ১৭ থেকে ১৮ মাস।
সময়ের এ হিসাবের মধ্যে গত ১১ জানুয়ারি বিভাগে শততম বাইপাস সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে ডা. ইশতিয়াক বলেন, বাইপাসসহ ওপেন হার্ট সার্জারি মিলিয়ে দুইশ’রও বেশি অস্ত্রোপচার করেছেন তারা।
হৃদরোগের অস্ত্রোপচারে এখানকার মত এত অল্প খরচ কোথাও নেই দাবি করে তিনি বলেন, অল্প খরচে এ সমস্ত অপারেশন করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের আর কোথাও করা সম্ভব নয়। প্রথমদিকে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে সার্জারিগুলো করা যেত। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্টের দাম বেড়ে তিনগুণ হয়ে যাওয়ায় সার্জারির খরচে এখন ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মত লাগছে।
বর্তমানে ভর্তি এক রোগীর স্বজন সায়েমা বেগম তার শাশুড়ী নাসিমা বেগমের (৫০) সঙ্গে এ বিভাগে কিছুদিন ধরে আছেন।
নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকার বাসিন্দা সায়মা বলেন, চার বছর ধরে তার শাশুড়ীর বুকের ব্যাথা। চিকিৎসকের পরামর্শে এনজিওগ্রাম করলে রক্তনালীতে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। ‘রিং’ (স্ট্যান্ট) পরাতে বিভিন্ন হাসপাতালে কথা বলেন তারা। কোনখানেই সাড়ে ‘তিন লাখের’ নিচে নামেনি। এরমধ্যে তারা ঢাকা মেডিকেলের এ বিভাগে কথা শোনেন। পরিচিত একজনের মাধ্যমে এখানে অস্ত্রোপচার করেছেন এমন একজনের অভিজ্ঞতা শোনার পর সন্তুষ্ট হয়ে ভর্তি হন বলে জানান সায়মা।
এখন পর্যন্ত আনুমানিক মোট ৯৫ হাজার টাকার মত লাগার হিসাব দিয়ে তিনি বলেন, আইজ-কাইলই হয়ত ছুটি দিয়া দিব।
বিভাগটিতে এখন ১৬টি বেড, ছয় বেডের হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) ও পাঁচ বেডের আইসিইউ এবং একটি অপারেশন থিয়েটার রয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেলের সহকারী পরিচালক আশরাফুল আলম জানান, হৃদরোগের সব ধরনের চিকিৎসাই এখন এক ছাতার নিচে মিলছে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে এত সহজ ও সাশ্রয়ী উপায়ে ঢাকা মেডিকেলে কার্ডিয়াক সার্জারির সুযোগে সাধারণ মানুষ উপকার পাচ্ছেন।