দেড় বছরেও চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ

14

পটিয়া প্রতিনিধি

পটিয়া পৌরসভায় গত বছর ১৫ ফেব্রæয়ারি নির্বাচনের দিন প্রকাশ্যে খুনের ঘটনায় করা মামলাটি গত দেড় বছরেও গতি পায়নি। এ খুনের অনেক প্রত্যক্ষদর্শী থাকার পরও মামলার প্রায় দেড় বছরেও চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ।
কাউন্সিলর প্রার্থী ও সাবেক কাউন্সিলর আবদুল মন্নানের ছোটভাই আবদুল মাবুদকে খুনের ঘটনায় নব নির্বাচিত কাউন্সিলর সরোয়ার কামাল রাজিবকে হুকুমদাতা হিসেবে প্রধান আসামি করে মামলাটি করা হয়েছিল। এছাড়া মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৩ নং আসামি মো. রায়হান (১৯) মাবুদকে ছুরিকাঘাত করে খুন করেন।
জানা গেছে, মামলায় আসামি করায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. রায়হান। তার পিতা সামশুল আলম ড্রাইভার দাবি করেন, রায়হান সম্পূর্ণ নির্দোষ। রায়হান নয় ছুরিকাঘাত করেছে আরেক যুবক। প্রকৃত খুনি কে, তা তদন্ত করা হলে তার পুত্র দায় থেকে মুক্তি পাবে এবং শিক্ষাজীবন ফিরে পাবে। তিনি মামলার সুষ্ঠু তদন্তের আবেদন করেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির কাছে।
মামলার বাদি জানান, ভুলবশত আসল খুনির নাম মামলায় দেয়া হয়নি। রায়হান ছুরিকাঘাত করেছে বলে উল্লেখ করা হলেও পরে জানতে পেরেছি ছুরিকাঘাত করেছে পটিয়া থানাহাটস্থ ব্যবসায়ী আবু তাহেরের পুত্র জানে আলম। পুলিশও প্রকৃত খুনির বিষয়ে অনেকটা নিশ্চিত।
জানা গেছে, গত বছরের ১৫ ফেব্রায়ারি পটিয়া পৌরসভার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ছুরিকাঘাতে খুন হন সাবেক কাউন্সিলর ও নির্বাচনের প্রার্থী আবদুল মন্নানের ছোটভাই আবদুল মাবুদ। ওই ঘটনায় সরোয়ার কামাল রাজিবকে হুকুমদাতা হিসেবে প্রধান আসামি এবং ৩ নম্বর আসামি স্কুল ছাত্র রায়হান ছুরিকাঘাত করেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
রায়হানের পিতা সামশুল আলমের আবেদন জানানোর পর চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মূল খুনি কে, তা বের করার নির্দেশ দিয়ে আবেদনটি পটিয়ায় প্রেরণ করেন। ওই আবেদনের ৪ মাস পার হলেও কোন তদন্ত করেনি পটিয়া থানা পুলিশ। তদন্তে ঘটনাস্থলে যাননি কোন অফিসার এবং আবেদনকারীকেও ডাকা হয়নি।
সামশুল আলম বলেন, মামলা ঝুলে থাকায় তার ছেলে রায়হান লেখাপড়া করতে পারছে না। মামলার বাদিসহ এলাকার সবাই জানেন আসল খুনি কে? মামলাটির নিরপেক্ষ তদন্ত হলে রায়হান মামলার দায় থেকে মুক্তি পাবে। মাবুদকে খুনের পর খুনি উল্লাস করতে করতে পালিয়ে যায়। কিন্তু মামলায় দায় দেয়া হয়েছে আমার পুত্র রায়হানের ওপর। মামলা চালানোর জন্য অর্থ আমার কাছে নেই। আসল খুনি চিহ্নিত হলে রায়হান মামলার দায় থেকে মুক্তি পাবে। দীর্ঘসূত্রীতায় মামলার সব আলামত হারিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে মামলার প্রধান আসামি ও পটিয়া পৌরসভার কাউন্সিলর সরোয়ার কামাল রাজিব মামলার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে জানান, তিনি ও তার প্রতিপক্ষ তথা মামলার বাদি উভয়ে কেন্দ্রের ভেতরে ছিলেন। কিন্তু মাবুদ খুন হয়েছেন কেন্দ্রের অনেক দূরে। এরপরও শুধুমাত্র হয়রানির উদ্দেশ্যে তাকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। প্রকৃত খুনিকে খুঁজে বের কারার জন্য তিনি আহবান জানান।
মামলার বাদি ও সাবেক কাউন্সিলর আবদুল মন্নান জানান, দীর্ঘ সময় পার হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে চার্জশিট না দেয়া দুঃখজনক। পুলিশ বার বার মেডিক্যালের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের কথা বলে সময় পার করছেন।
আসল খুনি কে জানতে চাইলে তিনি জানান, হত্যার ঘটনায় মোট ১১ জন জড়িত ছিল। কিন্তু মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮ জনকে। তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না, তাই ৩ জন মামলার এজাহার থেকে বাদ পড়ে গেছে। মামলা দায়েরের পরে জানতে পারেন, তার ভাইকে ছুরিকাঘাত করেছে থানাহাটস্থ এক ব্যবসায়ী আবু তাহেরের পুত্র জানে আলম। আর মামলায় উল্লেখিত ৩ নম্বর আসামি রায়হান তার ভাইকে ওই অবস্থায় লাথি দিয়ে পুকুরে ফেলে দিয়েছিলেন। মামলার চার্জশিটে আসল খুনিসহ অন্য ৩ জনের নাম আসবে বলে আশা করেন তিনি।
ঘটনাস্থল থেকে দূরে ও ভোটকেন্দ্রের ভেতরে থাকার পরও নির্বাচিত কাউন্সিলর রাজিবকে প্রধান আসামি কেন করা হল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজিবের প্রতিপক্ষ খুন হয়েছে। মামলায় তাকে আসামি করা না হলেও রাজিব হুকুমদাতা হিসেবে গণ্য হতেন।
পটিয়া থানার এসআই হাবীব বলেন, মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। তাই এ বিষয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
পটিয়া থানার ওসি (তদন্ত) রাসেদুল ইসলাম জানান, আমরা আসল খুনিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আশা করি, আসল খুনিকে চার্জশিটভুক্ত করা হবে।