দেশে ৮০% খেজুরই আসে ইরাক থেকে

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

বাংলাদেশে সাধারণ্যে খেজুর সৌদি আরবের ফল হিসেবে পরিচিত হলেও দেশে চাহিদার ৮০ শতাংশ খেজুরের জোগান ইরাক থেকে আসে বলে আমদানিকারকরা জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, জর্ডান ও মিশর থেকেও বাংলাদেশে খেজুর এলেও দাম কম বলে ইরাক থেকেই বেশি আসে।
ইফতারিতে সবাই খেজুর রাখতে চাওয়ায় রোজায় এই ফলের চাহিদা যায় বেড়ে। আর বাংলাদেশে তা উৎপাদন হয় না বলে পুরোটাই আমদানি করতে হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেবল রমজানেই বছরের ৫০ শতাংশের বেশি খেজুর বিক্রি হয়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা খেজুর চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর হয়ে ঢোকে দেশের বাজারে। মিশরের মেডজুলের মতো অল্প কিছু খেজুর আসে বিমানে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসের মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে তাজা ও শুকনো খেজুর (খেজুর ও খুরমা) আমদানি হয়েছিল ৮২ হাজার ২৮ টন।
সহকারী কমিশনার আব্দুল হান্নান জানান, গত বছরের জুলাই থেকে গত মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে দেশে ৭৬ হাজার ২৫১ টন খেজুর আমদানি হয়েছে। এখনও খেজুর আমদানি হচ্ছে। আরও তিন মাস হবে। তবে রোজায় আমদানিটা বেশি হয়।
খেজুর আমদানিকারকরা বলছেন, সারা বছরে যে খেজুরের চাহিদা, তার চেয়ে তিন থেকে চারগুণ চাহিদা বেড়ে যায় রোজায়। সেই চাহিদা মেটাতে ছয় মাস আগে থেকেই খেজুর মজুদ করতে থাকেন তারা। সেসব খেজুর সংরক্ষণ করা হয় হিমাগারে।
ফল আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, রোজায় খেজুরের চাহিদা ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টন। বছরের বাকি ১১ মাসে এই চাহিদা থাকে ১০ হাজার টনের মতো।
এ বছর রোজা উপলক্ষে ৪০ হাজার টন খেজুর আমদানি হয়েছে বলে জানান তিনি। সিরাজুল বলেন, আমদানির ৮০ শতাংশই ইরাক থেকে আসা সবচেয়ে কম দামের ‘জাহেদী’ খেজুর। এটি পিপিই ব্যাগেও আসে, ১০ কেজির কার্টনেও আসে। যেটা পিপিই ব্যাগে আসে, সেটার পাইকারি দাম ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। আর যেটা ১০ কেজির কার্টনে আসে, সেটা ১০০ টাকা কেজি। কার্টনেরটা কিছুটা প্রসেসিং করা থাকে।
ইরাকের জাহিদীর পর বেশি আসে আমিরাত গোল্ড। আমিরাত থেকে আসা এই খেজুর পাইকারি বাজারে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
সিরাজুল জানান, নাগাল, রেজিস, দাব্বাস ও লুলু খেজুরও আসে আমিরাত থেকে। নাগাল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি রেজিস খেজুর ১৪০ টাকায়, দাব্বাস ও লুলু খেজুর (বরই খেজুর) ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
তবে খুচরা বাজারে জাত ও ধরন ভেদে কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা বাড়তিতে খেজুর কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। খবর বিডিনিউজের
সৌদি আরব থেকে আজওয়া, আম্বার, মাবরুম, মাশরুক, সাফাওয়ি বা কালমি এবং ইরান ও জর্ডান থেকে মরিয়ম খেজুর আসে। মিশর থেকে আসে বড় আকারের খেজুর মেডজুল।
সাথী ফ্রেশ ফ্রুটের কর্ণধার সিরাজুল বলেন, আগস্ট থেকে সিজন শুরু হলেই আমরা আমদানি শুরু করি। অক্টোবর পর্যন্ত দামটা ঠিক ছিল। নভেম্বর থেকে জাহাজের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায়, বেশি দামে খেজুর কিনতে হয়েছে আমাদের। নরমাল কনটেইনার ১০০০ থেকে ১৫০০ ডলারে যেগুলো আনতাম, সেটা হয়ে গেছে ৪০০০-৪৫০০ ডলার। এ কারণেই দামটা শেষের দিকে বেশি ছিল। এবার ইরাকে কম খেজুর হয়েছে, ইরাকেরটার দাম একটু বেশি ছিল এবার। নইলে আমরা আরও কমে বিক্রি করতে পারতাম। অন্যান্যগুলোর দাম কম ছিল।
যে পরিমাণ খেজুর আমদানি হয়েছে, তা রোজায়ই বিক্রি হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
দেশে ফলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাদামতলিতে ২০ বছর ধরে খেজুরের ব্যবসা করছেন শাকিল ফ্রেশ ফ্রুটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল হক। তিনি জানান, খেজুর যখন নতুন গাছে ধরে, তখনই তাদের সেটা কিনে রাখতে হয়। রমজানের ছয় মাস আগে থেকেই তারা খেজুর সংরক্ষণ করতে শুরু করেন। খেজুরের চাহিদা রমজানে অনেক বেশি বেড়ে যায়। আমরা যে খেজুর এনেছি, সেটা বিক্রি প্রায় শেষের দিকে। এখন খুচরা ব্যবসায়ীরা এটা বিক্রি করবে। আমরা খেজুরগুলো এনে কোল্ড স্টোরে সংরক্ষণ করে রাখি। সেখান থেকেই আমরা বিক্রি করি’।
প্যাকেজিং এবং মেয়াদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এসব প্যাকেটের গায়ে খেজুরের নাম, প্যাকেজিং ডেট ও মেয়াদের তারিখ সুন্দরভাবে লেখা থাকে’।
মহামারির খড়গে সৌদি আরবে বিদেশিরা হজ করার সুযোগ না পাওয়ায় সেখানে আজওয়ার বিক্রি একদম কমে গেছে। এ কারণে এই খেজুর এবার অনেক কম দামে আমদানি হয়েছে বলে জানান তিনি, বলেন- আজওয়ার সবচেয়ে ভালোটা এবার সাড়ে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি, যেটা গতবারও ৯০০ টাকায় বিক্রি করেছিলাম।