দেশে নতুন বছরে মৃত্যুর রেকর্ড

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

ওমিক্রনের দাপটে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটিই চলতি বছরের একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে গত বছরের ৯ অক্টোবর সর্বোচ্চ ২১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ নিয়ে দেশে মোট ২৮ হাজার ৩২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
একই সময়ে ৩৩ হাজার ৩৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০ হাজার ৩৭৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ১০ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ১৪৯ জন।
গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ও কোভিড ইউনিটের প্রধান ডা. মো. ইউনুস স্বাক্ষরিত বিশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।
নমুনা পরীক্ষা কমে যাওয়ায় গত একদিনে কম রোগী শনাক্ত হলেও শনাক্তের হার ৩১ শতাংশের উপরেই রয়েছে। নতুন শনাক্ত ১০ হাজার ৩৭৮ জনকে নিয়ে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ১৪৯ জনে।
সরকারি হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় সেরে উঠেছেন ১ হাজার ১০৯ জন, তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত সুস্থের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭৮।
বাংলাদেশে মহামারি শুরুর পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যু ঘটলেও বছর গড়িয়ে করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা চূড়ায় উঠেছিল। গত বছরের ৫ ও ১০ আগস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারির মধ্যে একদিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
এরপর মৃত্যুর সংখ্যা কমতে কমতে গত ডিসেম্বরে মৃত্যুহীন দিনও দেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ওমিক্রনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার মধ্যে মৃত্যুও আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত বছরের ৯ অক্টোবরে ২১ জনের মৃত্যুর খবর আসার পর শনিবারের আগে আর এত মৃত্যু দেখা যায়নি।
অতি সংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়লেও এতদিন মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখে অনেকের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদাসীনতা দেখা গেলেও বিশেষজ্ঞরা বরাবরই সতর্ক করে আসছিলেন। ওমিক্রনের দাপটে গত কয়েক দিন ধরেই দিনে রোগী শনাক্তের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি ছিল।
শনিবার তা ১১ হাজারের নিচে নামলেও গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষাও আগের দিনের চেয়ে ১৩ হাজার কম হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
শুক্রবার ৪৬ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ৪৪০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা মহামারিকালে দেশে সর্বোচ্চ সংখ্যা।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম সংক্রমণ ধরার পর ডেল্টার দাপটে গত বছরের ২৮ জুলাই রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ হাজার ৩৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ১০ হাজার ৩৭৮ রোগী শনাক্ত হওয়ায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ১০ শতাংশে।
গত ডিসেম্বরে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ঘোরাফেরা করছিল ২০০ থেকে ৩০০ এর ঘরে। শনাক্তের হার নেমে এসেছিল ২ শতাংশের নিচে। এখন তা আবার ঊর্ধ্বমুখী।
মহামারির মধ্যে সার্বিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬০ শতাংশ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী দেশে এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৮১ হাজার ৩৪২ জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক রোগী নিশ্চিতভাবে সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল এক লাখ ৭২ হাজার ১০৩ জন।
গত একদিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ৭ হাজার ১৭ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের ৬৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আগেরদিনও এ বিভাগে ৯ হাজার ২২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল, যা ছিল দিনের মোট আক্রান্তের ৫৯ শতাংশের বেশি।
গত কয়েক মাস ধরেই দৈনিক শনাক্ত রোগীর একটি বড় অংশ থাকে ঢাকার। তবে গত সপ্তাহখানেক ধরে দেশের অন্যান্য জেলাতেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত একদিনে ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৬৩৭৯ জন, ফরিদপুরে ১০৪ জন এবং গাজীপুরে ১৪৫ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৮০৯ জন, কক্সবাজারে ৪৯৮ জন, নোয়াখালীতে ১২৮ জন, চাঁদপুরে ১৩০ জন এবং কুমিল্লায় ১৯১ জন; রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলায় ১৭৭ জন, বগুড়ায় ১০০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া খুলনা বিভাগের মধ্যে যশোরে ১১৭ জন; সিলেট বিভাগের সিলেট জেলায় ২৪৫ জন; এবং ময়মনসিংহে ১১৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত একদিনে।
যে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ১৪ জন পুরুষ, ৭ জন নারী। তাদের মধ্যে ১২ জন ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের দুইজন, রাজশাহী বিভাগের একজন, খুলনা বিভাগের দুইজন, বরিশাল বিভাগের একজন, রংপুর বিভাগের দুইজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন একজন। তাদের ১২ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। তিনজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর এবং ছয়জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ছিল।
বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৫৬ লাখ ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ। বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৩৬ কোটি ৯৪ লাখ।