ডিসেম্বরে চালু হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ

132

এম এ হোসাইন

কাজ অসম্পূর্ণ অবস্থায় চালু হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। পতেঙ্গা অংশের ১১ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে চলতি বছর উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা ভাবছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ অনেক বাকি থাকলেও যানজটের কথা চিন্তা করে একাংশ উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। মূলত বঙ্গবন্ধু টানেলের গাড়ি চলাচলের ফলে যানজটের চাপ সামলাতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডিএ। ডিসেম্বর থেকে এ অংশ যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হতে পারে।
চারটি আলাদা ভাগে ভাগ হয়ে এগিয়ে চলছে নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ। চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট পিলার ৩৭৯টি। দেওয়ানহাট-লালখান বাজার এলাকার কিছু অংশ ছাড়া বাকি প্রায় সবগুলো পিলার নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। কাঠগড় থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের ঢালাইয়ের কাজও শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরে চালু হতে পারে বঙ্গবন্ধু টানেল। টানেলের সাথে যান চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে এক্সপ্রেসওয়েরও। দুটি প্রকল্প একই সময়ে চালুর কথা থাকলেও এক্সপ্রেসওয়ের কাজ এখনো অনেক বাকি। ফলে নির্ধারিত সময়ে এক্সপ্রেসওয়ে চালু না হলে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। বিষয়টি সামনে রেখে এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা অংশে সম্পূর্ণ থাকা ১১ কিলোমিটার অংশ খুলে দেয়ার কথা চিন্তা করছে সিডিএ।
সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, প্রকল্পটির কাজ এখন ৬৫ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। টানেলের সাথে সাথে এক্সপ্রেসওয়েরও কিছু অংশ খুলে দেয়ার জন্য কাজ করা হচ্ছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে। চট্টগ্রামে তৈরি হবে বিনিয়োগ পরিবেশ। বিকশিত হবে পর্যটনশিল্প। যানজটমুক্ত হবে সড়ক।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির র‌্যাম্প ও লুপসহ মোট দৈঘ্য হবে ২০ কিলোমিটার। চার লেনের এই এক্সপ্রেসওয়ের প্রশস্ততা হবে ৫৪ ফুট। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৯টি এলাকায় ২৪টি র‌্যাম্প (গাড়ি ওঠানামার পথ) থাকবে। নগরীর টাইগারপাসে চারটি, আগ্রাবাদে চারটি, বারিক বিল্ডিং মোড়ে দুটি, নিমতলী মোড়ে দুটি, কাস্টমস মোড়ে দুটি, সিইপিজেডে চারটি, কর্ণফুলী ইপিজেডে দুটি, কাঠগড়ে দুটি, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় দুটি র‌্যাম্প থাকবে। লালখান বাজার থেকে বারিক বিল্ডিং, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, সল্টগোলা থেকে সিমেন্টক্রসিং, সিমেন্টক্রসিং থেকে সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত আলাদাভাবে কাজ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পতেঙ্গা থেকে নিমতলী মোড় পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের মূল কাজ শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এ অংশের বাকি কাজও সম্পন্ন করা হবে। এরপর টানেলের উদ্বোধনের সাথে সাথে এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ১১ কিলোমিটারও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। যদিও পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হতে আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, টানেলের কাজ শেষ হচ্ছে। টানেল চালু হলে গাড়ির চাপ বাড়বে। এ সময়ের মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েরও প্রথম অংশের কাজ শেষ হবে। পতেঙ্গা থেকে বন্দর নিমতলা পর্যন্ত অংশ আমরা উন্মুক্ত করে দিব। এতে যানজটের উপর একটি বড় প্রভাব পড়বে। বাকি কাজ শেষ হতে আমাদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে।
মূল শহর থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রাপথের দূরত্ব কমাতে সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র‌্যাঙ্কিনকে। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রæয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের পিলার পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের কাজ শুরুর কয়েক মাসের মাথায় নিরাপত্তা এবং পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির আশঙ্কায় আপত্তি তোলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সিডিএকে কাজ বন্ধ রাখার জন্য চিঠিও দেয়া হয়। এরপর আপত্তি তোলে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এসব বিপত্তি শেষ না হতেই পিডিবির খুঁটি সরাতে গড়িমশি, বৃষ্টিসহ নানা প্রতিবন্ধতা দেখা দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নে। তাছাড়া প্রকল্পের শুরু থেকেই আপত্তি ছিল নগর পরিকল্পনাবিদদের। সিডিএ বলছে, এসব বিপত্তি নিষ্পত্তি হয়ে এগিয়ে চলছে প্রকল্প কাজের। ২০২৩ সালে প্রকল্পটি দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে।
উল্লেখ্য, সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ের অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন, নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ, টোল প্লাজা নির্মাণ, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে কন্ট্রোল টাওয়ার নির্মাণ, বিভিন্ন পয়েন্টে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ, সাউন্ডপ্রæফ ব্যারিয়ার স্থাপন ও বৈদ্যুতিক পুল স্থানান্তরসহ বিভিন ক্ষেত্রে ধারণার চেয়ে খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। এতে অতিরিক্ত প্রকল্প ব্যয় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা খরচ বৃদ্ধি পাবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের সময়সীমা থাকলেও তাও একবছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।