টয়লেটে রাখা হয় জমির গুরুত্বপূর্ণ দলিল

95

পটিয়ায় সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের জন্য জমি মিলছে না।এতে প্রায় এক দশক ধরে অলস পড়ে আছে ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা। জায়গার অভাবে রেকর্ড রুম না থাকায় টয়লেটে রাখা হয় জমির গুরুত্বপূর্ণ দলিল। বৃটিশ আমল থেকে পটিয়া ভূমি অফিসের একপাশে জমি রেজিস্ট্রার কাজ চলত। তাতে লেখকদের বসার স্থান সংকুলান না হওয়ায়, অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বসতে না পারায় ১৬ বছর আগে একটি ভাড়া ঘরে স্থানান্তর করা হয় রেজিস্ট্রারের কার্যালয়। সে থেকে ১৬ বছর ধরে ভাড়া ভবনের একাংশ সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। তাতেও পর্যাপ্ত স্থান সংকুলান হচ্ছে না। অবস্থা বিবেচনায় পটিয়া আসনের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর চেষ্টায় সাব রেজিস্ট্রার ভবনের জন্য টাকা বরাদ্দ পায়। কিন্তু সদর এলাকায় জমি না পাওয়ায় ভবন নির্মাণ থমকে আছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পটিয়া সাব রেজিস্ট্রার ভবন নির্মাণ না হওয়ায় হতাশ পটিয়াবাসী।
জানা গেছে, সাব রেজিস্ট্রার ভবন নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ থাকলেও সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগের অভাবে পটিয়ায় তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ কারণে পটিয়া উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন, পৌরসভা ও কর্ণফুলীর ৫টি ইউনিয়নের ভূমির ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রতিদিন রেজিস্ট্রি করতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন। সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সহকারী, মোহরার, টিসি মোহরার, নকলনবিশ ছাড়াও দ্বিতীয় তলায় প্রায় ৮০জন দলিল লেখক বসতে না পারায় দোকান ভাড়া নিয়ে অনেকে দলিল প্রস্তুতের কাজ করেন। এ কার্যালয়ে বছরে প্রায় একশ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। স্থানীয় কর আদায় করতে সম্প্রতি প্রতিটি উপাজেলায় সাব রেজিস্ট্রার অফিসে এনআরবিসি ব্যাংকের অধীনে বুথও চালু করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত স্থান আর নিজস্ব ভবন না থাকায় ভোগান্তি যেন দূর হচ্ছে না।
সরেজমনি দেখা গেছে, সাবেক মহকুমা শহরের উপজেলা প্রশাসনের প্রধান ফটক এলাকায় ভাড়া বাসায় চলছে গুরুত্বপর্ণ পটিয়া সাব রেজিস্ট্রার অফিসটি। এ অফিসে নেই দলিল ও বালাম রাখার নিরাপদ রেকর্ড রুম। প্রতিদিন সাব রেজিস্ট্রার অফিসে আসা ভূমির দাতা ও গ্রহীতাদের বসার স্থান পর্যন্ত নেই। যার কারণে বয়স্ক নারী-পুরুষ ও মহিলাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। স্থানীয় সাংসদ ভূমি অফিসের খাস খতিয়ান দেখে সরকারি জমি খুঁজে বের করা অথবা ভালো লোকেশনে ক্রয় করার মত একটি জমি খুঁজে নেয়ার পর তাকে অবগত করার জন্য ৪ বছর আগে সাব রেজিস্ট্রারকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু সাব রেজিস্ট্রারের আন্তরিকতার অভাবে খাস জমি বা বিক্রয়যোগ্য খুঁজে বের না করায় নিজস্ব ভবন নির্মাণ সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।
পটিয়া দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা ও সাংগঠনিক সম্পাদক প্রণব দাশ জানিয়েছেন, জনগুরুত্বপূর্ণ পটিয়া সাব রেজিস্ট্রার অফিস। কিন্তু দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ভাড়া বাসায় চলছে। নিজস্ব ভবনের অভাবে সাব রেজিস্ট্রার অফিস ছাড়াও দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও দাতা-গ্রহিতারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ইতোপূর্বে পটিয়া উপজেলা প্রশাসনের জায়গায় একটি নিজস্ব ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নিলেও তা অদৃশ্য কারণে বাস্তবায়ন হয়নি। যার কারণে ভাড়া বাসায় সাব রেজিস্ট্রার অফিস ও দলিল লেখক সমিতির কার্যক্রম চলছে।
পটিয়া উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, উপজেলা প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে পটিয়া সাব রেজিস্ট্রার অফিসের নিজস্ব ভবন নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি উপজেলায় সাব রেজিস্ট্রার অফিস নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতা করলেই পটিয়া সদরেই সাব রেজিস্ট্রার অফিস ভবন নির্মাণ সম্ভব। শীঘ্রই চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করবেন বলে জানান। যাতে সরকারি অর্থে সাব রেজিস্ট্রার অফিস ভবন নির্মাণ কাজ যায়। পটিয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান জানিয়েছেন, উপজেলা প্রশাসনের অভ্যন্তরে সাব রেজিস্টার অফিস ভবন নির্মাণের কোন সুযোগ নেই। সাব রেজিস্ট্রার অফিস যেহেতু রাজস্ব আদায় করবে সেহেতু তাদের বাইরে থাকতে হবে।