টানা তাপপ্রবাহে অস্থির জনজীবন

9

পূর্বদেশ ডেস্ক

তীব্র গরমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জনজীবন যখন অস্থির হয়ে উঠেছে, তখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কিছু জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসলেও সেটি খুব বেশি স্থায়ী হবে না বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। গত কয়েক বছর যাবত দেখা যাচ্ছে, বৈশাখ মাসের এই সময়টিতে তাপমাত্রা এ রকম থাকে এবং এবারও সেটির ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি মাসে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মনে উদ্বেগও বাড়ছে। সাধারণত দেখা যায়, গরম বাড়লে বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দেয়। এমন অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর যে পূর্বাভাস দিচ্ছে সেটি গরম নিয়ে দুশ্চিন্তা আরো বাড়িয়ে তুলছে। খবর বিবিসি ও বিডিনিউজের।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, আগামী ২০ এপ্রিলের পরে গরমের তীব্রতা আরো বৃদ্ধির পূর্বাভাস করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।
দেশের কিছু জায়গায় ইতোমধ্যে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা এ মৌসুমের সর্বোচ্চ। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
এর আগে গত ৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সবশেষ সোমবার বরিশালের খেপুপাড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বলা হয় মাঝারি আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। এরপর ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।
ঢাকা বিভাগে ফরিদপুরে ৩৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহী বিভাগে ঈশ্বরদীতে ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রংপুর বিভাগে সৈয়দপুরে ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ময়মনসিংহে ৩৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সিলেট বিভাগে শ্রীমঙ্গলে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটিতে ৩৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, খুলনায় কুমারখালৗ ও মংলায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বরিশালের খেপুপাড়ায় ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গত এক দিনে।
এপ্রিল বাংলাদেশের উষ্ণতম মাস। এ মাসে গরমের পাশাপাশি কালবৈশাখীরও দাপট থাকে বেশি।
দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, এ মাসে দুই থেকে চারটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ এবং এক থেকে দুটি তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। অতি তীব্র তাপপ্রবাহে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে।
চলতি মাসে ১-২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে; যার মধ্যে একটি নিম্নচাপ/ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেছেন, কয়েকদিন পরে ময়মনসিংহ, সিলেট এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিছু জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। তবে সে সম্ভাবনা কম বলে তিনি উল্লেখ করেন। যে বৃষ্টিপাত হবে তাতে গরমের তীব্রতা কমবে না। গরমের তীব্রতা কমে আসার জন্য যে ধরনের বৃষ্টিপাত প্রয়োজন সেটির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
আজ বুধবার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগ বলেছে, গত বছরের এই দিনে অর্থাৎ ১৬ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। তখন তাপমাত্রা ছাড়িয়েছিল ৪০.৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী সপ্তাহ নাগাদ ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁতে পারে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কেমন থাকবে? : বিদ্যুৎ বিভাগের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গতকাল সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট। সোমবার ২৪৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় কোন লোডশেডিং ছিলনা।
বিদ্যুৎ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গতকাল সর্বোচ্চ চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট। অন্যদিকে সর্বোচ্চ উৎপাদন ১৫ হাজার ৮৯০ মেগাওয়াট। সে হিসেবে লোডশেডিং হবার কথা নয় বলে দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগের পরিসংখ্যানে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, প্রতি বছর এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে। একদিকে গরম এবং অন্যদিকে সেচের চাহিদা। এবারও আমরা মনে করছি যে এপ্রিল মাসটাই হবে সর্বোচ্চ চাহিদা মাস। তিনি বলেন, চলতি মাসে সর্বোচ্চ চাহিদা হবে ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। গতবার আমরা ১৬ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন করেছি। এবার হয়তো ১৬৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন করতে পারবো। যদি লোডশেডিং হয়ও তাহলে ৫০০ থেকে এক হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করা লাগতে পারে।
দেশের পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে এবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছিল। গতকাল দিনের বেশিরভাগ সময় তাপমাত্রা ৩৮ডিগ্রি ছিল।
রাঙামাটির বাসিন্দা কায়সার আহমেদ বলছেন, সেখানকার মানুষ বৃষ্টিপাতের দিকে তাকিয়ে আছেন।
তিনি বলছিলেন, গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিংও কিছু বেড়েছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে বলে তিনি জানান। তবে জেলা শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি বেশি খারাপ বলে তিনি উল্লেখ করেন।