জলাবদ্ধতা নিরসনে নেয়া মেগা প্রকল্পের অধীনে ৫টি খালের মুখে আগামী জুলাই মাসে বসানো হচ্ছে স্লুইস গেইট (রেগুলেটর)। ইতোমধ্যে মহেশখাল, কলাবাগিচা, মরিয়মবিবি, টেগপাড়া ও ফিরিঙ্গিবাজার খালের মুখে স্লুইস গেইটের কাঠামো তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নেদারল্যান্ড থেকে আনা আধুনিক প্রযুক্তির স্লুইস গেইটের পার্টস বসানোর মাধ্যমে জলাবদ্ধতা থেকে অনেকটা মুক্তি পাবে নগরবাসী। আগামী দুইমাসের মধ্যে নেদারল্যান্ড থেকে আধুনিক প্রযুক্তির স্লুইস গেইটগুলো চট্টগ্রামে আসবে। জুলাইয়ের মধ্যে বসানো হবে মহেশখাল, কলাবাগিচা, মরিয়ম বিবি, টেগপাড়া ও ফিরিঙ্গিবাজার খালের মুখে।
প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামের ৫টি খালের মুখে বসানো এসব রেগুলেটরের কারণে জলাবদ্ধতা সমস্যা থেকে অনেকটা রেহাই পেতে পারেন চট্টগ্রামবাসী। এসব স্লুইস গেইট স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করবে। নদীতে জোয়ারের পানি যখন বেড়ে শহরের দিকে পানি চাপ দিবে তখন স্লুইস গেইটগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। আবার ভাটার সময় সাগরে পানি কমে গেলে শহরের পানি বের করতে গেইট খুলে দিতে হবে। এতে পানি সাগরে নেমে যাবে। সাগরের পানি বেড়ে যাওয়া এবং শহরের মধ্যে বৃষ্টির কারণে পানি বাড়ার সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য থাকছে বড় পাম্পের ব্যবস্থা। যে পাম্পের মাধ্যমে শহরের পানি দ্রুত সেচ করে বের করে দেয়া যাবে। তাছাড়াও নৌযান চলাচলের পথ রাখা হয়েছে স্লুইস গেইটে। প্রায় ২০ ফিট প্রশস্ত নেভিগেশন লক সিস্টেমের মাধ্যমে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা থাকছে মহেশখাল ¯øুইস গেইটে।
জলাবদ্ধতা মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী বলেন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবস্থার রেগুলেটরগুলো আগামি বর্ষার আগেই চালু করার চেষ্টা আছে। মহেশখালসহ ৫টি খালের মুখে রেগুলেটরের কাঠামোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। রেগুলেটরের সরঞ্জামগুলো আনা হচ্ছে নেদারল্যান্ড থেকে। আমাদের অর্ডার অনুযায়ী পার্টসগুলো তৈরি হয়ে গেছে। এখন সেগুলো যথাযথ প্রক্রিয়াতে আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে দুইমাসের মতো সময় লাগবে। সেগুলো লাগাতেও কিছুদিন সময় লাগবে। জুলাইয়ের মধ্যে আমরা পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে পারবো আশা করছি।
চট্টগ্রাম নগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের জন্য দেশে প্রথমবারের মতো বসানো হচ্ছে নেদারল্যান্ডের কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালের স্লুইস গেইটগুলো। দেশের অন্যান্য জায়গায় বসানো স্লুইস গেইটের তুলনায় কম্পোজিট স্লুইস গেইট হবে দীর্ঘস্থায়ী। সহজে মরিচা ধরবে না, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার সমন্বয় থাকবে; ফলে কয়েক যুগেও স্লুইস গেইটের তেমন কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে বসানো পাঁচটি সুইস গেইটের আকার সমান হবে না। মহেশখালের স্লুইস গেইটের তুলনায় অন্যান্য স্লুইস গেইটগুলোর আকার অনেকটা ছোট হবে।
স্লুইস গেইটগুলোর আকার ও ধারণ ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী বলেন, অন্য চারটি স্লুইস গেইটের তুলনায় মহেশখালের স্লুইস গেইটের আকার ও ধারণক্ষমতা বেশি হবে। মহেশখালে ১২টি ভেন্ট দিয়ে পানি ঢুকবে আর বের হতে পারবে। একটি নেভিগেশন গেইট থাকবে। নেভিগেশন গেইট দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারবে। তিনটি বড় আকারের পাম্প থাকবে। খুব দ্রæত পানি বের করে দেয়া সম্ভব হবে। প্রতি সেকেন্ডে ৫ কিউবিক মিটার পানি পাস করতে পারবে একেকটি পাম্প। আর অন্য চারটি রেগুলেটরে ২টি করে ভেন্ট থাকবে। কোনো নেভিগেশন গেইট থাকবে না। দুটি করে ছোট আকারের পাম্প থাকবে। প্রতি সেকেন্ড ১০ কিউসেক পানি পাস করতে পারবে পাম্পগুলো।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময় ২০২০ সালের জুন মাস। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ বছরের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে সিডিএ। পরে একই বছরের ২৮ এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে। প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খালের মাটি অপসারণ, ছয় হাজার ৫১৬ কাঠা ভূমি অধিগ্রহণ, নতুন ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ, ১৭৬ কিলোমিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ৪৮টি পিসি গার্ডার ব্রিজ প্রতিস্থাপন, বন্যার পানি সংরক্ষণে তিনটি জলাধার, ছয়টি আরসিসি কালভার্ট প্রতিস্থাপন, পাঁচটি টাইডাল রেগুলেটর, ৪২টি সিল্টট্রেপ স্থাপন, ২০০টি ক্রস ড্রেন কালভার্ট নির্মাণ এবং ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রোড সাইড ড্রেনের সম্প্রসারণ, দুই হাজার বৈদ্যুতিক পুল স্থানান্তর, ৮৮০টি স্ট্রিট লাইট স্থাপন এবং ৯২টি ইউটিলিটি লাইন স্থানান্তরের কথা রয়েছে।