জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে ক্ষোভের আগুন ফেসবুকে

33

কয়দিন আগেই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিতে গিয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী জলাবদ্ধতায় এবার নগরীতে গলা পানির আশংকা করেছিলেন। সেটা পুরোপুরি সত্য না হলেও কাছাকাছি গেছে গতকালের জলাবদ্ধতা। গতকাল রবিবার সকাল থেকে মাঝারি বৃষ্টিতেই তলিয়ে গেছে বন্দর নগরীর অধিকাংশ এলাকা। বিভিন্ন স্থানে হাঁটু থেকে বুক সমান পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নাগরিকরা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। এ সময় জলাবদ্ধতায় অতিষ্ঠ নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাঙ্গাত্মক পোস্ট দিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন। সারাদিন বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা নিয়ে সরব ছিল বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও। এ সময় তারা জলবদ্ধতার জন্য সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন।
জাহাঙ্গীর আলম নামে খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ী ফেসবুকে লিখেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাননীয় চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনারা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না। এটি কোনো ময়লা আবর্জনা জমানোর মাঠ নয়। চাক্তাই খালের বর্তমান দৃশ্য এটি। আজ একদিনের বৃষ্টিতে বেহাল অবস্থা। আমাদের সামনে বর্র্ষা মৌসুম; তাই দয়া করে বাকলিয়াবাসী ও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের রক্ষা করুন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জালাল উদ্দিন লিখেন, প্রকল্পের পর প্রকল্প আসে, একজনের পর আরেকজন মেয়র হন। তবে ভাগ্য পরিবর্তন হয় না নগরবাসীর। অনেক তারকারা আবার শুষ্ক মৌসুমে ঘুরতে এসে এখানে ইউরোপের ছায়া খুঁজে পান।
মো. সোহেল নামে এক শিক্ষার্থী লিখেন- হাটতে, বসতে অভিনন্দন পাওয়া নেতারা কিভাবে জলবদ্ধতা নিয়ে কাজ করবে? ২নং গেইট, বহদ্দারহাট, চকবাজারে আজ কোনো মিছিল হচ্ছে না? সরকার আর কত কোটি টাকা বরাদ্দ দিলে নেতাদের মন ভরবে? নাকি জলবদ্ধতা নিরসন শিখতে একটা টিমের বিদেশ সফর লাগবে?
আকবর হোসেন নামে আরেক শিক্ষার্থী পোস্ট করেন, ঢাকার দুঃখ মিরপুর, চট্টগ্রামের দুঃখ মুরাদপুর। আমাদের একজন ফাটাকেষ্ট দরকার যে এক সপ্তাহের মধ্যে নয়, অন্তত এক বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম শহরের জলবদ্ধতা নিরসন করতে পারবে।
সাংবাদিক প্রবীর বড়ুয়া লিখেছেন, পানির নীচে মুরাদপুর আমরা এখন সিঙ্গাপুর।
তবে কেউ কেউ জলাবদ্ধতার জন্য নাগরিকের অসচেতনতাকেও দায়ী করেন। আরিফ উদ্দিন নামে একজন ময়লার ভাগাড়সাদৃশ্য একটি খালের ভিডিও’র বর্ণনায় লিখেন, ভাইপুতেরা, চিটাগং শহর সুইমিংপুল না হয়ে কি সাহারা মরুভূমি হবে? আগে নিজেরা ভালা হ।
মুজিবুল হক নামে এক শিক্ষার্থী লিখেন, নালা নর্দমায় আপনারা পলিথিন ফেলছেন তাই জলাবদ্ধতা হইছে, যদিও তাগো ভাষায় এটা সাময়িক জলযট। মেয়র খুব ভালো মানুষ, আপনারা যে পলিথিন ফেলানোর কারণে নগর ডুবে গেছে সেই দোষ আপনাদের উপর দেন না। তিনি সিডিএকে দূষলেন, সিডিএও আপনাকে দোষ দেয় না। কর্পোরেশনকে দূষেন। মাঝখানে করে বেঁচে যাচ্ছেন। এ জন্য দুইপক্ষকে আপনাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ।
আবুল মনসুর নামে একজন লিখেন, যত দোষ রেজাউল ঘোষ, আগেরগুলো ভেরি জোস। যেভাবে নতুন মেয়য়ের সমালোচনা করা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে এর আগে শহরে কোনোদিন পানি উঠেনি। এই মেয়রই এত পানি এনে শহর ডুবিয়ে দিলো। উনিই প্রথম মেয়র।
এ সময় জনপ্রতিনিধিরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী ফেসবুকে একটি দায়সারা পোস্ট করেন যে- নগরীতে দীর্ঘ সময় বৃষ্টি হওয়ায় বড় ড্রেনে ময়লা জমে পানি উঠে যাওয়াতে জনগণের দুর্ভোগ এড়াতে দ্রæততার সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তবে মেয়রের পোস্টের কমেন্ট বক্সে অনেকে বিদ্রæপাত্মক কমেন্ট করেন। হাতে জালসহ একটি ছবি পোস্ট করে ফয়সাল হাওলাদার ফরহাদ নামে একজন লিখেন, ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার জন্য আজ জাল দিয়ে মাছ ধরার সুযোগ পেলাম।
রুহুল্লা আল বেলাল নামে একজন কমেন্ট করেন, গত এক বছর ধরে নগরীর প্রতিটি বড় নালা/খাল পরিস্কার করার জন্য বিভিন্ন মিডিয়া এবং সচেতন নাগরিক সচিত্র তাগিদ দিলেও আমাদের সিটি কর্পোরেশন কোনো কর্ণপাত করেন নাই। যার ফলশ্রুতিতে আজকের এই ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। নিশ্চয়ই এখন সিডিএ এবং সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করা হবে। গত এক বছর করলোটা কি?