ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদের দ্বাদশ আয়োজন

82

ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদ উদ্যোগে গত ২ আগস্ট শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে পাঁচ গীতিকবির গান নিয়ে আয়োজন করা হয় “তব, চরণ নিম্নে, উৎসবময়ী”। অনুষ্ঠানের শুরুতে শ্রাবণী দাশের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস,কবি ও সাংবাদিক নাজিমুদ্দীন শ্যামল এবং কবি-প্রাবন্ধিক আবুল মনসুর আহমেদ। এরপর শুরু হয় সঙ্গীত পরিবেশনা। একে একে ছন্দানন্দের শিল্পীরা গেয়ে শোনান ঘন বরষায়, মধুছন্দ মধু গন্ধ, আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি, তারা সুখের লাগি, আমি কান পেতে রই ও আমার, হলো না মালা গাঁথা, কে আবার বাজায় বাঁশি, শিউলি তলায় ভোর বেলায় কুসুম কুড়ায়,জানি জানি প্রিয় এই জীবনে মিটবে না স্বাদ, আমার যাবার সময় হলো দাও বিদায়।
গানের মধ্যে দিয়ে ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদের শিল্পীরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন, অতুল প্রসাদকে স্মরণ করেন। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন দেবমিতা, অনিষা, কনা, সুষ্মিতা, শিমলা, রিকা, প্রজ্ঞা, অনন্যা, আফরোজা, পিয়াসা, অনন্যা, দিপান্বিতা, মুন্নি, পুষ্পিতা, কাক্সিক্ষতা, নকশী, অহনা, স্নেহা, সুদীপ্তা, উপমা, অন্তি, পূর্বা, দেবশ্রী ও দীপা। সংগীত পরিচালনায় ছিলেন ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদের পরিচালক নন্দ দুলাল গোস্বামী, দেবমিতা নন্দী ও অনিষা দাশগুপ্তা। কি-বোর্ডে সৃজন রায়,তবলায় প্রীতম আচার্য্য, ভায়োলিনে শ্যামল দাশ.গিটারে বাবুল দে এবং মন্দিরায় ছিলেন ফারুক হোসেন।
বৈচিত্র্যময় বাংলা গানের সৃষ্টির সারথী পঞ্চ গীতিকবি ইতিকথা :
বাংলা গানের ঐতিহ্য বহু প্রাচীন। চর্যাগীতিগুলো বাংলা গানের প্রাচীনত্বের সাক্ষ্য বহন করে। বঙ্গভূমিতে ষোড়শ শতকের দিকে কীর্তনের ঝড় উঠেছিল। তখন রাধা-কৃষ্ণের গান চারিদিকে প্রবলভাবে উপস্থাপিত হতে থাকে। কানুর গান ছাড়া আর কোন গানই যেন নাই। সামাজিক এবং রাজনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব যুগে যুগে অনেক সুন্দরকে অবক্ষয়ের ধারায় ঠেলে দেয়। অবক্ষয়ের সে প্রভাব অষ্টাদশ শতকে বাংলা সংগীতে ও পরিলক্ষিত হয়। তবে এখনও সেই প্রভাবের ছায়া থেকে আমরা একেবারে যে মুক্ত তা বলা যাবে না।
তৎকালে রাম প্রসাদ সেনের (১৭২০সন থেকে ১৭৬০ সন) শ্যামাসংগীত এবং রামনিধি গুপ্তের (১৭৪২ সন থেকে ১৮৩৯সন) টপ্পা রুচির পরিবর্তন আনে এবং আমরা একটা বিনাশ থেকে রক্ষা পাই। উনিশ শতকই হলো বাংলা গান বাংলা সাহিত্যে এক রেঁনেসার যুগ । সে শতকেই বঙ্গ দেশে সৃজনশীলতার জোয়ার বয়ে যায়। আর আমরা শিল্পের ধারায় নতুন নতুন সৃষ্টির সাথে পরিচিত হতে থাকি।
গীতিকবিতা, কাব্য, সনেট, নাটক, ছোটগল্প ও উপন্যাস যুগের চাহিদাকে যেন উদ্ভাসিত করল। আজও আমরা সেই সৃষ্টিশীলতার মাধুর্য্যে নিজেদের খুঁজে পাই। এখন ও আমরা চিন্তা ও চেতনায় বৈভবে সেই সৃষ্টির সাধনায় নিমগ্ন হই। উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ হতে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পযর্ন্ত এই পঞ্চ প্রদীপের আলোকের ঝর্ণাধারায় সিক্ত হয়েছিল বাংলা গীতিকাব্য ও সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের গানের সাথে বেশি ভাগ মানুষ পরিচিত থাকলেও সংরক্ষণ বা আলাদা চর্চার অভাবে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন, অতুল প্রসাদের গানের সাথে অনেকের স্বাভাবিকভাবে পরিচয় নেই। আর এই সংগীতের দিকপালদের নতুন প্রজন্মে মাঝে তুলে ধরতে ২০০৭ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদ চট্টগ্রাম।