চিন্ময় কুমার ঘোষ

2

একজন মহাত্মা ও হিন্দুধর্মের সংস্কারক। চিন্ময় ১৯৩১ সালের ২৭ আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার শাকপুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। ১৯৪৩ সালে অসুস্থতার কারণে তার পিতা মৃত্যুবরণ করেন এবং এর কয়েক মাস পর তার মাও মারা যান। ১৯৪৪ সালে ১২ বছর বয়সী চিন্ময় শ্রী অরবিন্দ আশ্রমে তার ভাই ও বোনদের কাছে চলে যান। সেখানে তার বড় ভাই হৃদয় ও চিত্ত আগেই ছিল।
আশ্রমে তিনি পরবর্তী ২০ বছর বিভিন্ন আধ্যাত্মিক কার্যক্রম, যেমন ধ্যান, বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য অধ্যয়ন ও আশ্রমের কাজ করেন। চিন্ময় প্রায় আট বছর আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক নলিনী কান্ত গুপ্তের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। তিনি তার লেখাগুলো বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিতেন। ১৯৬৪ সালে তিনি নিউ ইয়র্ক সিটি চলে যান এবং সেখানে যোগ ধর্ম চর্চা শুরু করেন। নিউ ইয়র্কের কুইন্স শহরে প্রথম মেডিটেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরে ৬০টি দেশে তার অনুসারীর পরিমাণ দাড়ায় ৭,০০০। এছাড়া লেখক, শিল্পী, কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে তিনি বিভিন্ন কনসার্ট ও মেডিটেশন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন।
চিন্ময়ের অনুসারীদের মতে, তিনি বাংলায় এবং ইংরেজি ভাষায় গীতসহ সহগ্রাধিক সঙ্গীতের সুর করেছেন। তার মধ্যে অনেকগুলো গান গীত ও পান্ডুলিপি আকারে শ্রী চিন্ময়ের গান এবং অডিও আকারে রেডিও শ্রী চিন্ময়ে প্রকাশিত হয়। তিনি জ্যামাইকাতে দুইটি গানের অ্যালবাম প্রকাশ করেন। ১৯৭৬ সালে মিউজিক ফর মেডিটেশন নামে একটি ফোকওয়ে রেকর্ডস অ্যালবাম প্রকাশ করেন। শ্রী চিন্ময় সেন্টার অনুসারে, চিন্ময় ১২০,০০০ এর অধিক কবিতা লিখেছেন। এর মধ্যে অনেকগুলো কবিতা হল সুক্তির মত – ছোট কিন্তু পুর্ণাঙ্গ ছত্র, যেমন ‘আমরা সত্যই অসীম, যদি আমরা চেষ্টা করার সাহস করি এবং আস্থা রাখি’। চিন্ময় ধ্রæপদী ধাঁচের কাব্যের কয়েকটি ভলিউম প্রকাশ করেন।
প্রধান প্রধান পুরস্কার ও সম্মাননাসমূহ হল- বিশ্ব সমদূত, ১৯৯০ সালে বৌদ্ধ ভিক্ষু কর্তৃক প্রদত্ত। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রথম অ-বৌদ্ধ যিনি এই পুরস্কার লাভ করেন। মহত্মা গান্ধী বিশ্ব ঐক্য পুরস্কার, ১৯৯৬ সালে ভারতীয় বিদ্যা ভবন থেকে মার্টিন লুথার কিংয়ের স্ত্রী করেটা স্কট কিংয়ের সাথে যৌথভাবে। ফ্রেড লেবো পুরস্কার, ১৯৯৬ সালে নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যারাথন পরিচালক অ্যালান স্টেনফেল্ড ও রোম ম্যারাথনের সভাপতি উমবের্তো সিল্‌ভেস্ট্রির হাত থেকে। হিন্দু অফ দ্য ইয়ার, ১৯৯৭ সালে এবং হিন্দু রেনেসাঁ পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন হিন্দুজম টুডে থেকে যোগ ব্যায়াম শিক্ষা প্রদানের জন্য। তিনি ১১ অক্টোবর, ২০০৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। সূত্র: বাংলাপিডিয়া