চলন্ত অটোরিকশায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত চালক

13

বেশ কয়েকবছর আগে বেশ কয়েকটি চলন্ত সিএনজি অটোরিকশায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় হৈচৈ শুরু হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি ও সিলিন্ডারগুলোর রিফ্রেশমেন্ট করারক্ষেত্রে সিএনজি অটোরিকশা মালিক ও চালকদের বেশ সতর্ক হতে দেখা যায়। সিএনজি অটোরিকশার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়েছিল ‘একেকটি সিএনজি অটোরিকশা যেন একেকটি বোমা’। সেই কবে সিএনজি গ্যাস রিলিন্ডারগুলো লাগানো হয়, মেয়াদ উত্তীর্ণের পরও তা আর চেইঞ্জ করা হতো না, ফলে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মত মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় অনেক প্রাণের সংহার হয়েছিল। মধ্যখানে এজাতীয় দুর্ঘটনা কমলেও গত ২৫ মার্চ, চন্দনাইশ কলেজগেইট সংলগ্ন এলাকায় একটি চলন্ত সিএনজি অটোরিকশায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন লাগলে ঘটনাস্থলেই আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করেন চালক আবদুস সবুর। ঘটনাটি ছিল এসময়ের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা, মর্মান্তিক। কারণ বিস্ফোরণের পর হতবিহব্বল চালকের গাড়ি থেকে নেমে পড়ার সুযোগ হয়নি, তার আগেই আগুনে জ্বলসে যায় পুরো শরীর। সিটে বসা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা এ চালকের পুরো শরীরটা কয়লা হয়ে সিটের সাথে লেগে থাকে। মর্মান্তিক এ ঘটনা দেখে অনেকে মূর্ছা যাওয়ার অপেক্ষা। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি পোস্ট করেছে, যা মোটেই অনুচিত। এ জাতীয় ছবি প্রকাশ করা আইনতঃ অপরাধ হিসেবে গণ্য হলেও ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের অসচেতনতা ও আইনের ব্যাপারে অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
সিএনজি অটোরিকশার এ দুর্ঘটনার পেছনের ঘটনাটা ছিল আরো বেশি হতাশাজনক। দৈনিক পূর্বদেশসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যায়, সিএনজি অটোরিকশাটি লোকাল সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে পটিয়া থেকে সাতকানিয়া অভিমূখে যাচ্ছিল। কলেজ গেইটের পর বরুমতি ব্রিজসংলগ্ন মাজারের কাছে দোহাজারী টিআই পুলিশের ধাওয়া খেয়ে সিএনজিটা উল্টো সড়কে দ্রুতগতিতে পালাতে গিয়ে পেছন থেকে একটি মালবোঝাই কারগো ধাক্কা দিলে তাৎক্ষণিক অটোরিকশাটির সিএনজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতেই গাড়িটি পুরোপুরি পুরে যায়, সাথে চালকও। তবে অটোরিকশাতে থাকা একজন মহিলা যাত্রী তাৎক্ষণিক লাফদিয়ে প্রাণে বেঁচে যায়। মর্মান্তিক এঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে। ঘটনায় নিহতের জন্য শোক প্রকাশের পাশাপাশি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় অটোরিকশাটিকে ধাওয়াকারী পুলিশের প্রতি। অভিযোগ রয়েছে, হাইওয়ে রোডে তিন চাকার যানসহ অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার অধীন মইজ্জার টেক থেকে পটিয়া দোহাজারী শতশত অটোরিকশা চলতে দেখা যায়। এমনকি বাঁশখালী ও আনোযারা তথা পিবিআই সড়কজুড়ে প্রতিদিন হাইওয়ে পুলিশের নাকের ডগায় চলে অটোরিকশা। মইজ্জার টেক, পটিয়া, কলেজগেইট ও দোহাজারি এলাকার কিছু সোর্স ও লাইনম্যান এসব অটোরিকশাগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিয়মিত চাঁদা আদায় করে পুলিশসহ স্থানীয় প্রভাবশালীর কাছেও এ চাঁদা পৌঁছে যায়। ফলে সিএনজি অটোরিকশাগুলো দাপটের সাথে হাইওয়ে সড়ক মাতিয়ে চলে। এতে বাধা দেয়ার সাহসও কারও হয়না। কিন্তু ২৫ মার্চের ঘটনাটি কেন ঘটল, পুলিশ কেন অটোরিকশাটি ধাওয়া করল, আর চালক কেন দিকবিদিক না দেখে উল্টো পথে পালাতে গেল-তা বোধগম্য নয়। অনেকে এ ঘটনার জন্য দোহাজারি টিআই পুলিশকে দায়ি করছেন। আমরা মনে করি, ঘটনাটি অবশ্যই চাঞ্চল্যকর। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিৎ। নিরপেক্ষ তদন্ত রিপোর্টে ঘটনার পশ্চাদে যারাই দায়ি হোক, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে সড়কটিতে সবসময় বিরতিহীন দ্রæতগতির যাত্রি পরিবহন বাস ও মালবোঝাই বড় বড় কারগো-ট্রাকসহ ছোট বড় হাজারো প্রাইভেট গাড়ি চলাচল করে থাকে। গাড়ির সংখ্যা অনুযায়ী সড়কটি প্রশস্ত নয়। সম্প্রতি কিছুটা সম্প্রসারণ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে সবসময় সড়ক দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হলে সরকারি বিধি অনুযায়ী সকলপ্রকারের তিনচাকার গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হবে। একাজটি অবশ্যই স্থানীয় থানা প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশকে করতে হবে। স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতার সাথে। অটোরিকশাসহ তিন চাকার গাড়ি চলাচল বন্ধ করলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটা হ্রাস পাবে বলে এ এলাকার সর্বসাধারণের প্রত্যাশা। আমরা নিহত চালকের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এর সাথে আশা করছি, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা নিহত পরিবারের পাশে আর্থিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবেন।