চবি ছাত্রলীগের অবরোধ

12

চবি প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধ করে রেখেছে শাখা ছাত্রলীগের ৭টি উপগ্রুপ। গতকাল সোমবার সকাল ৬টা থেকেই ক্যাম্পাস অবরুদ্ধ করে রাখে তারা।
এদিন স্থগিত হয়েছে ৯টি বিভাগের চ‚ড়ান্ত পরীক্ষা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব বিভাগেই ক্লাস কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়নি বলে জানা গেছে।
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ছাত্রলীগের এই অবরোধ কর্মসূচির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, সোমবার সকাল ৬টায় শাখা ছাত্রলীগের ৬টি উপগ্রুপ একত্রিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক ও দুই নম্বর ফটক আটকে দেয়। গ্রুপগুলো হলো- ভার্সিটি এক্সপ্রেস, বাংলার মুখ, রেড সিগনাল, কনকর্ড, এপিটাফ এবং উল্কা। প্রতিটি গ্রুপই সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাসির উদ্দীনের অনুসারী বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত। এসময় তারা ৩ দফা দাবি জানায়। দাবিগুলো হলো- পদবঞ্চিত ত্যাগী ও পরিশ্রমী কর্মীদের মূল্যায়ন করে কমিটিতে অন্তর্ভুক্তকরণ, কমিটিতে পদপ্রাপ্ত নেতাদের যোগ্যতা অনুযায়ী যোগ্যস্থানে ক্রমানুসারে পুনর্মূল্যায়ন করা, কমিটিতে পদপ্রাপ্ত বিবাহিত, চাকরিজীবী ও দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাগ্রহণ। পরে তাদের এসব দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে শাখা ছাত্রলীগের আরেক উপগ্রুপ বিজয়। তারা শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
অবরোধকারীদের বাধার মুখে শাটল ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে শহর থেকে ছেড়ে যেতে পারেনি। এছাড়া শিক্ষকদের আনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তর থেকে কোনো শিক্ষক বাস শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেতে পারে নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ১৫টি বিভাগের ১৭টি চ‚ড়ান্ত পরীক্ষা ছিল। যার ৯টি বিভাগের ১১টি পরীক্ষাই স্থগিত করা হয়েছে ছাত্রলীগের অবরোধের ফলে। এছাড়া প্রায় সব বিভাগেরই ক্লাস কার্যক্রম স্থগিত ছিল।
এদিকে পরীক্ষা ও বছরের শেষের দিকের গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস স্থগিত হওয়ার ফলে ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থীরা। কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, আন্দোলন ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে অথচ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তাছাড়া সোমবার পরীক্ষা থাকায় একদিন আগেই (রবিবার) শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে চলে এসেছিলেন পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু সোমবার অবরোধের ফলে তাদের পরীক্ষা আর হয়নি। এছাড়া অবরোধের বিষয়টি জানতে না পেরে অনেকেই সকালে ক্যাম্পাসে চলে আসেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে। এসে শুনেন পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এসব ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
অন্যদিকে গতকাল সোমবার থেকে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার পর্ব শুরু হয়েছে। ছাত্রলীগের অবরোধের ফলে হয়রানির শিকার হন সাক্ষাৎকার দিতে আসা শিক্ষার্থীরাও।
দুপুর বারোটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মূল ফটক খোলে দিলেও অবরোধ তুলে নেয় নি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। গতকাল সন্ধ্যায় রিপোর্ট পাঠানোর আগ পর্যন্ত মূল ফটক খোলা থাকলেও অবরোধ চলমান ছিল।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও আন্দোলনরত ভিএক্স গ্রুপের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় পূর্বদেশকে বলেন, প্রশাসনের অনুরোধে সাধারণ পথচারী ও সাক্ষাৎকার দিতে আসা প্রথম বর্ষের ভর্তিচ্ছুদের যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য আমরা সাময়িক ফটক খুলে দিয়েছি। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলমান থাকবে।
শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ও উপগ্রুপ রেড সিগনালের নেতা রাকিবুল হাসান দিনার বলেন, শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা আমাদের জানিয়েছিল যে মূল কমিটি বর্ধিত করে পদবঞ্চিত সিনিয়র কর্মীদের পদায়ন করা হবে। কিন্তু তা না করে তারা এখন হল ও অনুষদ কমিটির নামে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। তাই আমরা ক্যাম্পাস অবরোধের ডাক দিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবরোধ চলবে।
এসব বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল পূর্বদেশকে বলেন, যেসব সিনিয়র নেতাকর্মীরা পদের যোগ্য ছিল তারা প্রত্যেকেই পদ পেয়েছে। এরপরেও যদি কেউ মনে করে থাকে যে সে পদ পায়নি তাহলে সে যেন তার নেতার সাথে কথা বলে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক কাউকে পদ দিতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে ক্যাম্পাসের গেইট আটকে দিয়ে যারা শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত করছে তাদের বিরুদ্ধে যেন প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভ‚ঁইয়া বলেন, তাদের যা দাবি তা তো আমরা পূরণ করতে পারব না। আমরা তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করছি। তারা এখন মূল ফটক খুলে দিয়েছে। তারা যদি আবারো ঝামেলা করার চেষ্টা করে তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।