চবিতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা নেই, চলছে নিয়োগ প্রক্রিয়া

30

শাহরিয়াজ মোহাম্মদ, চবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বাংলা বিভাগে নতুন শিক্ষকের প্রয়োজন নেই। তবুও বিভাগটির প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্তকে অমান্য করে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমন অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, যেকোনো বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সভা হয়। সভায় উপস্থিত অধিকাংশ সদস্যের ভোটের ভিত্তিতে অথবা সর্বসম্মতিক্রমে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন হবে কি হবে না তার সিদ্ধান্ত হয়। পরে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল হয়ে রেজিস্ট্রার ও উপাচার্য বরাবর যায়। এরপর মূলত শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়।
তবে এই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলা বিভাগে নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন বিভাগটির একাধিক শিক্ষক।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ইতোমধ্যেই ১৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে গতবছর নতুন শিক্ষকের চাহিদা জানতে চেয়ে বিভাগ বরাবর চিঠি দেয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সভায় আলোচনা হয়। সভায় বিভাগে নতুন শিক্ষক প্রয়োজন নেই মর্মে সিদ্ধান্ত হয় এবং সে বিষয়ে জানিয়ে কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দেয় বিভাগ কর্তৃপক্ষ।
তবে প্ল্যানিং কমিটির সেই সিদ্ধান্তকে আমলে না নিয়েই শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ২৩ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, বাংলা বিভাগে একজন স্থায়ী সহকারী অধ্যাপক, একজন স্থায়ী প্রভাষক ও পাঁচজন অস্থায়ী প্রভাষক নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. তাসলিমা বেগম পূর্বদেশকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভাগের কাছ থেকে শিক্ষকের চাহিদা চেয়েছিল। তখন আমি সভাপতি ছিলাম না। তবে তৎকালীন সভাপতি এ বিষয়ে এজেন্ডাভুক্ত করে প্ল্যানিং কমিটির সভা আহŸান করেছিলেন। উপস্থিত সভার সকলের সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় যে নতুন শিক্ষকের প্রয়োজন নেই। বিষয়টি জানিয়ে বিভাগ থেকে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়ার পরও আমাদের না জানিয়ে তাঁরা শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
এ বিষয়ে কোনো ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন কী না- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. তাসলিমা বলেন, আমরা পুনরায় প্ল্যানিং কমিটির সভা আহবান করব। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্ত অমান্য করে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভাগটির শিক্ষকরা। বিভাগটির অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিউল আযম (ডালিম) পূর্বদেশকে বলেন, বিভাগের শিক্ষক প্রয়োজন হলে বিভাগ নিজেই কর্তৃপক্ষকে জানায়। কিন্তু এখানে উল্টো কর্তৃপক্ষই বিভাগের কাছে শিক্ষকের চাহিদা জানতে চাচ্ছে। এবং এ নিয়ে প্ল্যানিং কমিটি নতুন শিক্ষকের প্রয়োজন নেই বলে জানালেও তার গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এটা সরাসরি আইন পরিপন্থি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় দায়িত্বশীল পর্যায়ে থেকে এ ধরণের কাজ কখনোই কাম্য নয়। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠনমূলকভাবে সব হোক কিন্তু কোনোভাবেই দুর্নীতি না হোক।
বিষয়টির সমালোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরাও। চট্টগ্রাম শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্ল্যানিং কমিটিকে উপেক্ষা করে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়াটা স্পষ্ট ’৭৩ এর আইনের লঙ্ঘন। শিক্ষক প্রয়োজন আছে কি-না সেটা প্ল্যানিং কমিটি জানবে। এই সিদ্ধান্তকে ভায়োলেট করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছাড়া কিছু নয়। শিগগির শিক্ষক সমিতির মিটিং হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে আমরা কী পদক্ষেপ নিবো।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি পক্ষ দাবি করছে, বিভাগের কোনো সিদ্ধান্তের সাথে যদি উপাচার্য একমত না হন তখন উপাচার্য সে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা চাইতে পারেন। যদি পুনর্বিবেচনার পর প্ল্যানিং কমিটি একই সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন তখন তা সিন্ডিকেটে পাশ হয়। কিন্তু বাংলা বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য রেজিস্ট্রার অফিস থেকে একাধিকবার চিঠি দেয়া হলেও সে চিঠির প্রত্যুত্তর দেয়নি বিভাগ কর্তৃপক্ষ। যার কারণে উপাচার্য বিষয়টি সরাসরি সিন্ডিকেটে রিপোর্ট করে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।
তবে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়ায় আইনের লঙ্ঘন হয়নি বলে দাবি করছেন রেজিস্ট্রার অফিসের শিক্ষক নিয়োগ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. হাছান মিয়া। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, কোনো বিভাগের শিক্ষকের মৃত্যু বা অবসরজনিত কারণে কোনো পদ খালি হলে সে পদ পূরণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট ৩ মাসের মধ্যে নতুন শিক্ষকের চাহিদা জানানো প্ল্যানিং কমিটির দায়িত্ব। যদি প্ল্যানিং কমিটি তা না করে তাহলে উপাচার্য ক্ষমতাবলে সিন্ডিকেটে রিপোর্ট করে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিতে পারবেন। ১৯৯৪ সালের ১৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপাচার্যের সে ক্ষমতা আছে। তার উপর ভিত্তি করেই বিভাগের শূন্য পদ পূরণ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এটিকে আইন লঙ্ঘন বলার কোনো সুযোগ নেই।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, বিষয়টি যখন সামনে আসে তখনই আমি উপাচার্যকে মৌখিকভাবে বলেছি যে, আপনি যে পদ্ধতিতে গেছেন সেটা ঠিক নয়। আপনি অন্য একটা পদ্ধতিতে যান। এরপর উপাচার্যের সঙ্গে আমার আর কথা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে আমি চট্টগ্রামে যেতে পারছি না। পরবর্তীতে গেলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।