চট্টগ্রামে হবে ৪ হাজার শয্যার হাসপাতাল

63

চট্টগ্রামে চার হাজার শয্যার হাসপাতাল গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
গতকাল শনিবার দুপুরে নিজ সংসদীয় আসনে অবস্থিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। শিক্ষ উপমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে একটি বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, হাসপাতাল তৈরির পর রোগী বৃদ্ধির অনুপাতে সুবিধা বাড়েনি। এ অঞ্চলের বেসরকারি খাতে চিকিৎসা সেবা কিছুটা মিলছে। তবে তা অপ্রতুল্য। তবে গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার স্বাস্থ্যখাতে প্রচুর বিনিয়োগ করছে। এর সুফল চট্টগ্রাবাসী পাচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এ হাসপাতালের সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনে সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোর তাৎক্ষণিক সমাধান সম্ভব। আগে সমস্যা জেনে কীভাবে সমাধান করা যাবে সেটি বের করতে হবে। এজন্য গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান জানান মন্ত্রী। সম্প্রতি স্পেশাল আয়া-ওয়ার্ডবয় নামে স্বেচ্ছাসেবককে হাসপাতাল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে হাসপাতালে সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। তাদের পরিবর্তে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে লোকবল নিয়েছেন, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
এ ব্যাপারে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, স্পেশাল আয়া-ওয়ার্ডবয়দের নিয়োগে ভিত্তিগত সমস্যা আছে। তারা বেতন-ভাতা ছাড়া কাজ করতো। তারা চলে যাওয়াতে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সেটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে এত রোগীকে চিকিৎসা দেয়া কষ্টসাধ্য। সম্পদের অপ্রতুল্যতা এবং দীর্ঘদিন ধরে জমতে জমতে সংকট পাহাড়সম হয়েছে। এত সীমাবদ্ধতার মধ্যে যে সেবা দেওয়া হচ্ছে তা উল্লেখ করার মতো। জনগনের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে চিকিৎসক-নার্সহ সংশ্লিষ্টদের পক্ষে এটি সম্ভব হচ্ছে।
এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন বলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল উল্লেখ করেন।
এর আগে চমেক হাসপাতালের বীর উত্তম শাহ আলম মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মন্ত্রী। এ সময় চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমদ, চমেক অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মো. জাহাঙ্গীরসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি হাসপাতাল বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন।
শুরুতে হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগে যেয়ে রোগীদের খোঁজ-খবর নেন মন্ত্রী। এরপর নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। কেন্দ্রের সামনে আনোয়ার হোসেন নামে এক নবজাতকের পিতার সঙ্গে কথা বলেন তিনি এবং সেখানে থাকা রোগীর স্বজনদের অনুরোধ করেন, অযথা হাসপাতালে ভিড় না করতে।
পরে মেডিসিন বিভাগ হয়ে হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম দেখতে যান মন্ত্রী। বিভাগটিতে মুক্তিযোদ্ধা বøক, ক্যাথল্যাবসহ একাধিক ইউনিট ঘুরে দেখেন তিনি। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে চার হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল গড়তে একটি প্রকল্প রূপরেখা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন চট্টগ্রামের আরেক সংসদ সদস্য ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ইতোমধ্যে নির্দেশনা অনুযায়ী চমেক অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মো. জাহাঙ্গীর, হাসপাতালের পরিচাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমদসহ সংশ্লিষ্টরা এক দফা বৈঠক করেছেন।

‘দক্ষ ব্যবসায়ী ও
বিনিয়োগকারী
চাই’
বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের গুরুত্ব তুলে ধরে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, আমরা ফড়িয়া ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও পুঁজি সংগ্রহকারী চাই না। দক্ষ ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও পুঁজি সংগ্রহকারী চাই। জ্ঞাননির্ভর বিনিয়োগের বিকল্প নেই। গতকাল শনিবার নগরের কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, আশার বাণী শুনিয়ে পুঁজিবাজার পরিবর্তন করা কী সম্ভব? জেনে বুঝে বিনিয়োগ করা গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনী ইশতেহার কমিটির সদস্য হিসেবে যখন কাজ করি তখন পুঁজি বাজারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। পুঁজিবাজারে আমাদের সক্ষমতা ক্রমে বাড়ছে। বাংলাদেশ অর্থনীতিতে বিশ্বের বিস্ময়। আমাদের দরকার অর্থনৈতিক সুশাসন।
তিনি বলেন, স্ট্রাকচারাল প্রবলেম সমাধান করবো। আমরা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। তেমনি সরকারি সংস্থাগুলোকেও জবাবদিহি করতে হবে। আমরা টেকসই সমাধান চাই। সর্বস্ব নিয়ে, ধার করে পুঁজিবাজারে আসে। এটি মহৎ কাজ। নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে বিএসইসির আইনি সক্ষমতা বাড়ানো বিনিয়োগকারীদের দাবি।
তিনি বলেন, আমরা পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করতে চাই। উদ্দেশ্য সঠিক না হলে পুঁজিবাজার এগোবে না। জনগণের অর্থ নিয়ে ছিনিমিনি যারা খেলবে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।-খবর বাংলানিউজের
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ‘দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম’ এর অংশ হিসেবে এ কনফারেন্স আয়োজন করে। বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিএসইসির কমিশনার প্রফেসর মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী, ড. স্বপন কুমার বালা, খন্দকার কামালুজ্জামান প্রমুখ।
ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের প্রধান হাতিয়ার জ্ঞান। জেনে বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে, জেনে শুনে নয়। বাজারের গভীরতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের বিকল্প প্রডাক্ট আনতে হবে। ২০৪১ সালে ধনী দেশে উন্নীত হতে হলে এটি একটি পয়েন্ট। দেশি বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নিচ্ছি। ক্ষুদ্র ও মাঝারী বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
তিনি জানান, ২৭ এপ্রিল ময়মনসিংহে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের বিভাগীয় কর্মসূচি শেষ হবে। বিনিয়োগ শিক্ষা পেলে কৌশল নির্ধারণ করতে পারবেন বিনিয়োগকারী। ভারত, শ্রীলংকার মতো আমরাও বিনিয়োগ শিক্ষা পাঠ্যবইতে আনতে চাই।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ কীভাবে বাড়ানো যায় সে লক্ষ্যে কাজ করছি। কারসাজি বন্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব কিন্তু অবিবেচনা প্রসূত বিনিয়োগের দায় নিতে পারব না। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের প্রধান লক্ষ্য। বাজার স্থিতিশীল রাখতে কাজ করছি আমরা।
প্রফেসর মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে। বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমকে মূলধারার পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিনিয়োগ শিক্ষার কোনো বয়স নেই। পেশাজীবীদের বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের কৌশল ভিন্ন হবে।
বক্তারা বলেন, সচেতন ও বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত বিনিয়োগকারী তৈরি করতে চায় বিএসইসি। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে এ আয়োজন।
কনফারেন্সে বিভিন্ন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিপুল সংখ্যক পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী অংশ নেন।