চকরিয়ায় জমির বিরোধে শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা

50

চকরিয়ায় জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে হাফেজ রুহুল আমিন (৫৭) নামে এক বৃদ্ধকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় নিহতের বড়ভাই মৌলানা আমিনুর রশিদকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় আমিনুর রশিদকে প্রথমে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল শনিবার সকাল ৯টার দিকে নিহত হাফেজ রুহুল আমিনের বাড়ির পশ্চিম পাশের বিলে এ ঘটনা ঘটে।
দূর্বৃত্তদের হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হাফেজ রুহুল আমিন উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম কৈয়ারবিল নয়াপাড়া গ্রামের মৃত মৌলানা আমিন উল্লাহ’র ছেলে ও স্থানীয় কৈয়ারবিল মখজনুল উলুম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। দাম্পত্য জীবনে তার ৪টি পুত্র ও ৪টি কন্যা সন্তান রয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে নিহতের সুরতহাল রিপোর্ট শেষে তার লাশটি ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে স্থানীয়দের সহায়তায় আটক করে পুলিশ। আটক বেলাল উদ্দিন একই এলাকার মৃত মো. শফির ছেলে।
এদিকে এ হত্যাকাÐের পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজী মো. মতিউল ইসলাম, চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এ কে এম শফিকুল আলম চৌধুরী। এ সময় তারা এ হত্যাকান্ড নিয়ে এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দূর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হাফেজ রুহুল আমিনের বড়ভাই মৌলানা আমিনুর রশিদের ভোগ দখলীয় জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল একই এলাকার মৃত মো. শফির ছেলে বেলাল উদ্দিন গংয়ের। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে মৌলানা আমিনুর রশিদ প্রতিপক্ষ বেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও চকরিয়া থানায় পৃথক দুটি অভিযোগও দায়ের করেন। বর্তমানে এসব অভিযোগ স্ব স্ব স্থানে বিচারাধীন রয়েছে। থানা ও ইউনিয়ন পরিষদে বিচারাধীন মামলার নিস্পত্তি না হওয়ার আগেই গতকাল শনিবার সকালে বেলাল উদ্দিন দলবল নিয়ে মৌলানা আমিনুর রশিদের ভোগ দখলীয় জমির আধাপাকা ধান কেটে নেয়। মৌলানা আমিনুর রশিদ তার ছোটভাই হাফেজ রুহুল আমিনকে সাথে নিয়ে তাদের ধান কাটতে বারণ করেন। এসময় দূর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় হাফেজ রুহুল আমিন। এ ঘটনার পরপরই এলাকার লোকজন মৌলানা আমিনুর রশিদকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানান তার স্বজনরা।
নিহত হাফেজ রুহুল আমিনের স্ত্রী কামরুন্নাহার বলেন, গত ২০ বছর পূর্বে স্থানীয় আবুল কালাম মেম্বারের কাছ থেকে ২০ শতক (৬০ কড়া) জমি ক্রয় করে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখল করে আসছিলেন আমার স্বামী হাফেজ রুহুল আমিন ও তার বড়ভাই মৌলানা আমিনুর রশিদ। গত কিছুদিন পূর্বে আমাদের বাড়ির পার্শ্ববর্তী মৃত মো. শফির ছেলে বেলাল উদ্দিন ওই জমি তার দাবি করে জোর পূর্বক দখলে নিতে চাইলে আমার ভাসুর (স্বামীর বড় ভাই) মৌলানা আমিনুর রশিদ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও চকরিয়া থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। বর্তমানে এসব অভিযোগ স্ব স্ব স্থানে বিচারাধীন রয়েছে। থানা ও ইউনিয়ন পরিষদে বিচারাধীন মামলার নিস্পত্তি না হওয়ার পূর্বেই গতকাল শনিবার সকালে বেলাল উদ্দিন দলবল নিয়ে আমার ভাসুর মৌলানা আমিনুর রশিদের ভোগ দখলীয় জমির আধাপাকা ধান কেটে নিলে তিনি আমার স্বামী হাফেজ রুহুল আমিনকে সাথে নিয়ে তাদের ধান কাটতে বারণ করেন। এসময় দূর্বৃত্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করলে ঘটনাস্থলেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যায় আমার স্বামী হাফেজ রুহুল আমিন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত মৌলানা আমিনুর রশিদকে প্রথমে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নিহত হাফেজ রুহুল আমিনের স্ত্রী কামরুন্নাহার আরও বলেন, জায়গা জমি নিয়ে আমার অপর ভাসুর মাস্টার মামুনুর রশিদের সাথে আমাদের বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধের সূত্র ধরে ইতিপূর্বে মামুন মাস্টার তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে আমার এক ছেলেকে কুপিয়ে আহত করে। বিষয়টি নিয়ে থানা ও আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি। পারিবারিক এ বিরোধকে কেন্দ্র করে মামুন মাস্টার প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে এ ঘটনা ঘটাতে পারেন বলেও জানান তিনি।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশ বেলাল উদ্দিন নামে একজনকে আটক করেছে। ঘটনার পরপরই পুলিশের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে থানা পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।