ঘূর্ণিঝড় ও তাপদাহের মাস এপ্রিল-মে

10

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি এপ্রিল এবং আগামী মে মাসে যুগপৎভাবে ঘূর্ণিঝড় ও তাপদাহের আলামত বিদ্যমান রয়েছে। এই দু’মাসে বঙ্গোপসাগরে পৃথকভাবে অন্তত এক থেকে দু’টি করে নিম্নচাপ সৃষ্টি হবে। যার মধ্যে একটি করে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ কালবৈশাখী ঝড়ে পরিপূর্ণ চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে। অধিদপ্তরের তিন মাস মেয়াদী আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
আহাওয়ার অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এমনিতেই আবহাওয়ার স্বাভাবিক আচরণ ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। আমরা আবহাওয়ার বিভিন্ন সূচকগুলো পরিমাপ এবং জলবায়ুর সম্ভাব্য গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে দেখেছি এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাপদাহ বা উষ্ণতা আরও অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে। সাগরে একাধিক ঘূর্ণিঝড়ও সৃষ্টি হতে পারে। সবমিলিয়ে চরম বৈরী বা প্রতিক‚ল আবহাওয়া পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হতে পারে।
আবহাওয়ার তিনমাস মেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি এপ্রিল মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সাথে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্যাঞ্চলে দু-তিন দিন মাঝারি থেকে তীব্র কালবৈশাখী ও বজ্রঝড় এবং অন্যত্র চার-পাঁচদিন হালকা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী ও বজ্রঝড় হতে পারে। এ ছাড়া উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র এক থেকে দুটি মৃদু বা মাঝারি তাপদাহ বয়ে যেতে পারে। তার পরবর্তী মে মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সাথে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
জলবায়ু বিশারদদের মতে, নামে বৈশাখ যুক্ত থাকলেও শীতের বিদায়ের পর ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, সমগ্র পূর্ব এবং উত্তরপূর্ব ভারতে যে ঝড় বয়ে যায়- তাই কালবৈশাখী। বাংলা বর্ষের শুরুতে মানে বৈশাখ মাসে এ ঝড় তুলনামূলকভাবে বেশি হয় বলেই এ ঝড় কালবৈশাখী নামে পরিচিত লাভ করেছে। কালবৈশাখীর আসল নাম ‘নর-ওয়েস্টার।’ অর্থাৎ উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে এই ঝড় ধেয়ে আসে বলে একে বলে ‘নর-ওয়েস্টার’। তাই বলে কালবৈশাখী শুধুমাত্র বৈশাখ মাসেই (১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত) দেখা যাবে-এমনটি নয়। কালবৈশাখী এবং সাধারণ ঝড়ের মধ্যে পার্থক্য বিচার করারও কিছু মাপকাঠি রয়েছে। মোটা দাগে বলা যায়, ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটারের বেশি এবং স্থায়ীত্ব অন্তত এক মিনিট হলে সেটাই কালবৈশাখী ঝড়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন মূলত ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম শুরুর প্রাক প্রস্তুতির সময় চলছে। চলতি ও আগামী মাসেও ঝড়-ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ আবহাওয়া বিরাজ করবে। দেশে এবার শীত বিদায়ের পরপরই শুরু হয় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায় উষ্ণ মৌসুমের শুরুতেই। তাপপ্রবাহের মধ্যে মধ্য-পশ্চিম বঙ্গোসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়; যদিও তার সরাসরি তেমন প্রভাব বাংলাদেশে আসেনি। এটি কেটে গিয়ে এখন বিক্ষিপ্তভাবে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি নামছে। সাগরে লঘুচাপের ঘনঘটায় বৃষ্টিরও দেখা মিলে নি। এতে সর্বত্র উষ্ণতা ক্রমান্বয়ে সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, এশিয়া অঞ্চলের আবহাওয়াবিদরা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি এবং ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে গননা করেন।