গ্রামে শিক্ষক সংকট শহরে অতিরিক্ত

170

সন্দ্বীপ সরকারি হাজী এবি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক আছেন মাত্র ২ জন! উদ্ভিদ বিদ্যা ও প্রাণী বিদ্যা বিষয়ের একজন শিক্ষকও নেই। অথচ থাকার কথা ছিল ৩ জন করে ৬ জন। এছাড়া রসায়ন, পদার্থ ও গণিত বিষয়ে শূন্য রয়েছে ২টি করে পদ। বিপরীতে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলোর জন্য শিক্ষক রয়েছেন ৫৮ জন। তাদের মধ্যে পদার্থ বিজ্ঞানে ১২ জন, রসায়নে ১৮ জন, গণিতে ৮ জন, উদ্ভিদ বিদ্যায় ৯ জন ও প্রাণী বিদ্যায় ১১ জন।
এটিই চট্টগ্রামের শহর ও গ্রামের সরকারি কলেজগুলোর শিক্ষক পদায়নের বাস্তবতা। এমন ভারসাম্যহীনতায় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে নির্ধারিত পদের চেয়ে অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছেন শহরের সরকারি কলেজগুলোতে। এর পেছনে প্রধান কারণ কোচিং বাণিজ্য!
শিক্ষকতার চেয়ে মুখ্য হয়ে উঠে এ বাণিজ্য। এ থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করার স্বার্থেই শহরে নিজেদের পদায়নে জোর লবিং করেন তারা- এমনটায় জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা ২০১২-এ উল্লেখ রয়েছে, কোন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়াতে পারবেন না। আবার কেউ কোচিং করাতে চাইলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। তবে তাদের সকলকে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হতে হবে এবং নাম, রোল নম্বর প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে জমা দিতে হবে। তবে বাস্তবতা হল এ আইন বাস্তবায়নের কোন বালাই শহরে নেই। যার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই ব্যাচ পড়াচ্ছেন। এমনকি কোনো কোনো শিক্ষক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন ব্যাচে পড়ান।
অন্যদিকে স›দ্বীপ সরকারি হাজী এবি কলেজে বাংলা বিষয়ে একজন শিক্ষক না থাকলেও চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজে এ বিষয়ে রয়েছেন ১০ জন। একইভাবে সাতকানিয়া সরকারি কলেজে ইংরেজি বিষয়ে ২টি, পদার্থ বিজ্ঞানে ১টি, প্রাণী বিদ্যায় ৩টি, উদ্ভিদ বিদ্যায় ৩টি, গণিতে ৩টি পদ খালি রয়েছে। এটি শুধু এ দুইটি কলেজের নয়, গ্রামের প্রায় সবকটি কলেজের সংকট।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ শ্রেণির নতুন শিক্ষার্থীেেদর ক্লাস শুরু হবে আগামী জুলাইয়ে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষকরা ব্যাচ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এসব কোচিংয়ে আগেভাগেই চলছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা ‘বুকিংমানি’ দিয়ে ভর্তি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর চকবাজার এলাকার সাইমুন হোটেলের চতুর্থ তলায় দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যাচ পড়ান বাকলিয়া সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামাল হোসেন। ইতিপূর্বে তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজেও কর্মরত ছিলেন।
গতকাল সন্ধ্যায় অভিভাবক সেজে কথা বললে তিনি মুঠোফোনে বলেন, শিক্ষার্থী নিয়ে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে ওই ঠিকানায় যেতে। তখন ব্যাচে ভর্তি হওয়া নিয়ে বিস্তারিত জানাবেন।
একই কলেজের প্রাণী বিদ্যার শিক্ষক পলাশ কুমার সরকার নিয়মিত ব্যাচ পড়ান। প্রতি কোর্সে ৭ হাজার টাকা করে নেন বলে জানা গেছে। ওই একই ঠিকানায় চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হকও ব্যাচ পড়ান। তিনি গত ১৩ বছর ধরে চট্টগ্রাম কলেজেই কর্মরত। আবার ওই ভবনের তৃতীয় তলায় রসায়নের ব্যাচ পড়ান একই কলেজের সহযোগী অধ্যাপক কনক কুমার বড়ুয়া।
আবার চকবাজার হাবিব প্লাজার ৩য় তলায় সরকারি সিটি কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু মো. মেহেদী হাছান ব্যাচ পড়ান। অবশ্য এ শিক্ষকের ব্যাচে পড়লে অগ্রিম ৮ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। অন্যথায় পড়ান না তিনি।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম কলেজের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হয়েও পিছিয়ে নেই প্রফেসর প্রণব কুমার চক্রবর্তী। তিনি কলেজের পাশেই সানসিটি স্কুলের ৩য় তলার একটি ফ্ল্যাটে ব্যাচ পড়ান।
আবার চকবাজারের গুলজার মোড়ে ডা. মাহফুজুর রহমান ল্যাবের ৩য় তলায় পিপারেশন কোচিং হচ্ছে ব্যাচ পড়ানো শিক্ষকদের তীর্থস্থান! এখানেই চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের রসায়নের সহযোগী অধ্যাপক একেএম শামসুদ্দীন আজাদ, সরকারি সিটি কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল মোস্তাফা, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রঞ্জিত কুমার দত্ত ব্যাচ পড়ান।
এছাড়া চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচএম সাইফুল আলম, জামালখান আইডিয়াল স্কুলের সামনে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের হিসাব বিজ্ঞানের প্রফেসর আলাউদ্দিন আল আজাদ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামরুল আলম চৌধুরী ও গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুর রহিমসহ বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষকরা ব্যাচ পড়াতেই ব্যস্ত থাকেন বলে জানা গেছে।
শিক্ষকদের ব্যাচ পড়ানো নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, নীতমালা বহির্ভূতভাবে যারা পড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।