গ্যাস লাইন ফুটো হয়ে বিস্ফোরণ কাট্টলীতে নিহত ১, দগ্ধ ৫ জন

21

নিজস্ব প্রতিবেদক
আকবরশাহ থানাধীন উত্তর কাট্টলী এলাকার একটি ছয়তলা ভবনে বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে দগ্ধ হয়ে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। নিহত ও আহত সকলেই একই পরিবারের সদস্য। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে রাত সাড়ে ৭টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাজেদা বেগম (৩৯)। গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কমিউনিটি সেন্টার রোডের মরিয়ম ভিলার ষষ্ঠ তলায় বসবাসকারী জামাল শেখের বাসায় বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। গ্যাস লাইনের ফুটো থেকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। জামালপুরের ইসলামপুর থানার বাসিন্দা জামাল শেখ স্থানীয় হাক্কানি আয়রন মার্টের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কর্মরত।
বিস্ফোরণের পর হাসপাতালে ভর্তি দগ্ধরা হলেন- জামাল শেখের স্ত্রী সাজেদা বেগম (৩৯), বড় ছেলে সানি শেখ (২৫), মো. জীবন শেখ (১৭), মো. স্বাধীন শেখ (১৪), মেয়ে মাহিয়া আক্তার (১০) এবং সানি শেখের স্ত্রী দিলরুবা বেগম (১৮)।
চিকিৎসকরা জানান, আহতদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। সাজেদা বেগমের শরীরের ৮৫ শতাংশ, তার ছেলে স্বাধীনের ৪২ শতাংশ, জীবনের ৪০ শতাংশ, মেয়ে মাহিয়ার ৩৫ শতাংশ, শাহজাহানের ২০ শতাংশ ও তার স্ত্রী দিলরুবার শরীরের ৭ শতাংশ পুড়ে গেছে। এরমধ্যে দিলরুবা বেগম পুরোপুরি সুস্থ আছেন। এরমধ্যে সাজেদা বেগম গতকাল রাতেই মারা যান। বাকি চারজন অতিরিক্ত অগ্নিদগ্ধ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।
গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ষষ্ঠ তলার বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের মহিলা ওয়ার্ডে জামাল শেখের স্ত্রী সাজেদা বেগম ও মেয়ে মাহিয়াকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পাশের পুরুষ ওয়ার্ডে সানি শেখ, মো. জীবন শেখ, মো. স্বাধীন শেখকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় মাহিয়াকে গতকাল রাতেই ঢাকায় পাঠানোর কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। অগ্নিদগ্ধ স্বজনদের চিকিৎসায় দেখভাল করছেন জামাল শেখ নিজেই। সাথে আছেন বেঁচে যাওয়া ছেলে লিমন শেখ ও পুত্রবধূ দিলরুবা।
বেঁচে যাওয়া লিমন শেখ পূর্বদেশকে বলেন, আমি বাথরুমে থাকায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই। কিন্তু আমাদের পরিবারের ছয়জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরমধ্যে আমার মা সাজেদা বেগম রাত সাড়ে ৭টার দিকে হাসপাতালে মারা যান।
জামাল শেখ পূর্বদেশকে বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ ঘরে আগুন লেগে যায়। এতে আমার পরিবারের ছয়জন সদস্য দগ্ধ হয়। এরমধ্যে আমার পুত্রবধূ ও এক ছেলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। এ ভবনের গ্যাসলাইনে ত্রুটি ছিল। যা আমি মালিককে বলার পরেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।’
ঘটনায় আহত দিলরুবা বেগম বলেন, আমরা সন্ধ্যা ৬টার দিকেই রান্না শেষ করি। রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে সবাই আড্ডা দিচ্ছিলাম। এরমধ্যে আমি বাথরুমে ব্রাশ করতে গেলে হঠাৎ চিৎকার শুনে বের হতেই আমার মাথায় আগুন ধরে যায়। এতে আমি নিজেও অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পরে কে বা কারা আমাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে আসে জানি না। গত চার মাস আগেই আমরা এই ভবনে উঠেছিলাম।
আকবর শাহ থানার ওসি জহির হোসেন বলেন, আকস্মিকভাবে ওই বাসায় বিস্ফোরণ হয়। এতে বাসার দরজা, জানালা ভেঙে পড়ে। বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। এতে শিশুসহ একই পরিবারের ছয়জন দগ্ধ হন। ঘটনাস্থলে গ্যাসের সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি আছে। সেখান থেকে নির্গত গ্যাস জমে দাহ্য কিছুর সংস্পর্শে আসার ফলে বিস্ফোরণ ঘটে।
আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের দায়িত্বরত মো. হাবিবুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, প্রাথমিকভাবে গ্যাস লিকেজের কারণে বৈদ্যুতিক স্পার্ক থেকেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের টিম। তদন্ত শেষ হলেই বিস্তারিত বলা যাবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক নুরুল আলম আশেক বলেন, আগুনে দগ্ধ ছয় জনকে সোমবার রাত ১২টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। এরমধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। অগ্নিদগ্ধ সবাইকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে পাথরঘাটার বড়–য়া ভবন ও বালুচরা এলাকায় ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার পর তদন্তে তোড়জোড় শুরু হয়। কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে নানা সুপারিশও আসে। কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না সেসব সুপারিশের অধিকাংশ। একেরপর এক ঘটনা ঘটে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর তৎপরতা থাকে কয়েকদিন। এরপর যার যার মতো চুপছে যায় সকলে। ফলে এসব ঘটনার কোনো প্রতিকার হয় না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।