গোলাগুলিতে ২ জনের প্রাণহানি

43

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি

মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরসা ও আরএসও’র মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির এলাকা গতকাল বুধবার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে ২ রোহিঙ্গা নিহত হন। নিহত রোহিঙ্গা হামিদ উল্লাহর (২৭) নাম জানা গেলেও অপর জনের নাম জানা যায়নি। তিনি আরসার সদস্য বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি আহত হন। তাদের মধ্যে মহিদ উল্লাহ (২৫) ছাড়া আর কারো নাম জানা যায়নি। তিনি শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে থাকেন। এছাড়া ৫ আরসা সদস্যকে বন্দি করে আরএসও। তাদের নাম জানা যায়নি।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলছিল। এছাড়া রাত সাড়ে ৯ টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে আগুন জ্বলছিল। যা ক্রমান্বয়ে পুরো শিবিরে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ আগুন কারা দিয়েছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ সময় ওই শিবিরের রোহিঙ্গারা বান্দরবানের তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেন। এসব ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। মাঝে-মধ্যে বিচ্ছিন্ন আওয়াজ ভেসে আসলেও, তা ছিল মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দূরবর্তী এলাকায়।
গতকাল ভোর থেকে গোলাগুলির ঘটনা চলছে বলে দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা সাংবাদিকদের বলেন, সকাল থেকে তমব্রু সীমান্তের শূণ্যরেখায় থেমে থেমে গোলাগুলির খবর স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারি।
ইউএনও আরও বলেন, ঘটনাটি যেহেতু শূন্যরেখায়, সেখানে আন্তর্জাতিক রীতি মতে বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। তারপরও সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। প্রশাসন এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছে।
দুপুরের দিকে শূন্যরেখার রোহিঙ্গাক্যাম্প থেকে দুইজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কুতুপালং আশ্রয়শিবির সংলগ্ন এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় বলে জানান উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, এ সময় হাসপাতালের চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে কক্সবাজার জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত রোহিঙ্গার নাম হামিদ উল্লাহ। আর আহতের নাম মহিদ উল্লাহ। অপর নিহত আরসার সদস্যের নাম পাওয়া যায়নি।
তুমব্রু বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, বুধবার সকাল ৬ টায় হঠাৎ গোলাগুলির আওয়াজে বাজার কেঁপে উঠে। চলতে থাকে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ। এক পর্যায়ে পুরো রোহিঙ্গাক্যাম্প এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
শূণ্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা আবদুল মাজেদ ও রশিদ আহমদ বলেন, এ সময় মূলত আল-ইয়াকিন বা আরসার উপর প্রথম হামলা শুরু করে আরএসও’র সদস্যরা। সকালে শুরু হওয়া প্রথম হামলায় আরসার ২ জন সদস্য গুরুতর আহত হন। অনেক লোক কমবেশি আঘাতপ্রাপ্ত হন। এরপর আরএসও কঠোর হলে পিছু হঠে আরসা বাহিনী। তাদের মধ্যে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েক হাজার রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়।
এদিকে তুমব্রু গ্রামের বাসিন্দা আলী আকবর, আবদু রাজ্জাক ও সোহেল মিয়া জানান, তুমব্রু শূন্যরেখার রোহিঙ্গাক্যাম্পসহ পুরো এলাকা গতকাল সারাদিন ছিলো রণক্ষেত্র। মেশিন গান, একে -৪৭ রাইফেলসহ ভারী অস্ত্রের গুলির আওয়াজে আতঙ্কিত স্থানীয় অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। এছাড়া ধারণা করছি পুরো রোহিঙ্গক্যাম্প আগুনে পুড়ে গেছে।
এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সকাল থেকে অব্যাহত গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। সেখানে কী হচ্ছে বলা যাচ্ছে না। ঘটনায় স্থানীয়রা চরম আতঙ্কে রয়েছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরীকে মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে গতকাল রাতে থমথমে তুমব্রু এলাকায় বিজিবি সদস্যদের সতর্ক টহল দেখা গেছে। বাংলাদেশিদের অভয় দিচ্ছিলেন তারা।