গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫২১১

14

২০১৯ সালে দেশে ৪ হাজার ৬৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছে ৫ হাজার ২১১ জন। এছাড়া আহত হয়েছে ৭ হাজার ১০৩ জন। নিহতের মধ্যে ৬১৩ জন শিশু ও ৭৮৯ জন নারী। দুর্ঘটনার এক-চর্তুর্থাংশই মোটরসাইকেল সংশ্লিষ্ট। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। দেশের ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে দেখা গেছে, দুর্ঘটনায় ২ হাজার ২৭ জন পথচারী নিহত হয়েছেন যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। বাইসাইকেল চালানো, হেঁটে পথচলা, রাস্তা পার হওয়ার সময় এবং রাস্তার পাশে অবস্থান করার সময় এসব মানুষ মোটরযানের চাপায় নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৩ হাজার ২৪৭ জন যা মোট নিহতের ৬২ দশমিক ৩১ শতাংশ। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। ১ হাজার ১৮৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯৪৫ জন যা মোট নিহতের ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। এছাড়া মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
আঞ্চলিক সড়কে দুর্ঘটনা বেশি : প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সড়কে ঘটেছে ২ হাজার ৭৩৫টি যা মোট দুর্ঘটনার ৫৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। অপরদিকে মহাসড়কে ঘটেছে ১ হাজার ৯৫৮টি যা মোট দুর্ঘটনার ৪১ দশমিক ৭২ শতাংশ। এসব দুর্ঘটনায় দায়ী যানবাহনের সংখ্যা ১০ হাজার ৯৯২ টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল এক হাজার ১৮৯টি, বাইসাইকেল, রিকশা, ভ্যান ১ হাজার ৫২৫টি, সিএনজি ৯৯৩টি, ইজিবাইক ও টেম্পু এক হাজার ৭৫৩, নসিমন, করিমন, ভটভটি ও টমটম এক হাজার ৯৭টি, বাস ৯৩৪টি, মিনিবাস এক হাজার ৪১টি, মাইক্রোবাস ও পিকআপ ৮৫৭টি, কার বা জিপ ৪৯৬টি, ট্রাক, ট্রাক্টর ও লরি ৭১৪টি এবং কাভার্ডভ্যান ২৯৩টি।

রেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৯৬, নৌপথে ৬৭
২০১৯ সালে দেশে ১৫৯টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৯৬ জন নিহত ও ৪৭১ জন আহত হয়েছে। এছাড়া নৌপথে ৩২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৬৭ জন। নিখোঁজ রয়েছে ১১৭ জন।
দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত : রোড সেফটি ফাউন্ডেশন দুর্ঘটনার বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে। এগুলো হচ্ছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে ইজিবাইক, নসিমন, করিমনসহ স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব।
দুর্ঘটনারোধে সুপারিশ : রোড সেফটি ফাউন্ডেশন দুর্ঘটনারোধে বেশ কিছু সুপারিশও প্রণয়ন করেছে। এতে দক্ষ চালক তৈরির প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা তৈরি, পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার, সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমানো এবং বারবার কমিটি গঠন এবং সুপারিশ তৈরির চক্র থেকে বেরিয়ে একটি টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা পোষণের কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।