খুলছে বঙ্গবন্ধু টানেল নতুন ইতিহাসের ছায়ায় চট্টগ্রাম

21

স্বপ্ন কি সবসময় অধরা থাকে? এপিজে আব্দুল কালাম বলেছেন, স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে যাও। স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন হলো সেটাই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রত্যয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজের ঘুম হারাম করেছেন। আর প্রতিটি দিন একেকটি পরিবর্তনের মাইলফলকে নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশকে। এবার এমন একটি মাইলফলক রচনা করতে যাচ্ছে দেশ, যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। এটির নাম কর্ণফুলী টানেল। এটি শুধু দেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল যা চট্টগ্রামেই বাস্তবায়ন হতে চলছে। এ টানেলটি আরমাত্র একদিন পর পরিপূর্ণ দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণাধীন টানেলের মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছে নদীর উভয়পাড়। অর্থাৎ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা পয়েন্ট ও আনোয়ারা পয়েন্ট। এর মাধ্যমে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম হবে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন।’ দেশজুড়ে চলমান মেগা প্রকল্পসমূহের মধ্যে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর তা ঐতিহাসিক একটি ঘটনায় পরিণত হবে নিঃসন্দেহে।
গতকাল বুধবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি খবর চট্টগ্রামবাসীকে পুলকিত করেছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলের দ্বিতীয় টিউবের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী শুক্রবার মধ্যরাতে টানেল উন্মুক্ত করা হবে। এ সুসংবাদটি দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এম এ মান্নান বঙ্গবন্ধু টানেল খুলে দেয়ার কথা জানান। তবে টানেল দিয়ে আপাতত কোনো গাড়ি চলাচল করতে দেয়া হবে না। টিউব নির্মাণ শেষ হলেও চলছে দুই টিউবের ভিতর দিয়ে পিচঢালা সড়ক নির্মাণের কাজ। দুই টিউবে চারলেনের সড়ক হবে। এছাড়া স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেলকে নিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের উন্নতি আসছে। শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে আনোয়ারা কালাবিবির দিঘি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়কের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক নেটওয়ার্ক সংযুক্ত হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৪শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সূত্র জানায়, নির্মাণাধিন এ কর্ণফুলী টানেলটি ডিসেম্বরে খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও টিউবের মূল কাজ শেষ হওয়ায় আগামী শুক্রবার মধ্যরাতে খুলে দেওয়া হচ্ছে। পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান এটিকে খুবই আনন্দের সংবাদ হিসাবে অভিহিত করে বলেছেন দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে এটা খুব রোমাঞ্চকর একটা বিষয়। আমরা জানি, চীনের সাংহাই নগরীর আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় টানেল নির্মাণের কাজ চলছে। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর এ মেগা প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের মূল খনন কাজ উদ্বোধন করেন। নির্মাণ কাজে জড়িত রয়েছে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও চায়না রোড এ্যান্ড ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। এ টানেল নির্মাণযজ্ঞ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের একটি লাইন উদ্ধৃত বলেছিলেন, ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না। তিনি বলেছিলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ’। বাংলাদেশ যে উন্নয়নের রোল মডেল তা দেশে চলমান মেগা প্রকল্পসমূহই প্রমাণ দিচ্ছে।
বর্তমান সরকারের আমলে একের পর এক যে মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেল বিশেষ আকর্ষণ। দীর্ঘদিনের লালিত এ স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে। এটি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হলে, চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যিক জংশন। সর্বাধুনিক এ যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে দেশের অর্থনীতিকে আরো গতিশীল ও সমৃদ্ধ করবে। চট্টগ্রাম শহরে শিল্প, বাণিজ্য ও আবাসনের চাপ কমবে। মানুষ নতুন উপশহরকে তাদের ঠিকানা বানাবে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার মেগাপ্রকল্পের এ বঙ্গবন্ধু টানেল আগামীর উন্নত বাংলাদেশের টার্নিংপয়েন্ট হবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।