খালেদার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে গুঞ্জন

36

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে মন্তব্য করেছেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি বলেছেন, কয়েকটি সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্যারোল নিয়ে যেসব বক্তব্য এসেছে সেগুলো পরস্পরবিরোধী এবং সংশ্লিষ্ট আইনের বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
গতকাল রবিবার সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতি ভবনের নিজ চেম্বারে খন্দকার মাহবুব বলেন, খালেদা জিয়াও প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা এবং তার তা চাইতে হবে। খবর বিডিনিউজের
তাদের নেত্রীর প্যারোলে মুক্তির চিন্তা করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এখানে আমার কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আমরা তার মামলা করি, মামলা নিয়ে বলতে পারি। প্যারোলটা মামলা সংক্রান্ত ব্যাপার না। এটা একটা বিশেষ বিধান। তবে যখন একটি লোক চরম অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তার চিকিৎসা দরকার। আর আইন অনুযায়ী আদালতে জামিন পেতে তার অনেক সময় লেগে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকার ইচ্ছা করলে তাকে প্যারোলে মুক্তি দিতে পারেন। চিকিৎসার জন্য দিতে পারেন। বিশেষ কারণেও দিতে পারেন। সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিকার সংরক্ষণ করা আছে। যে কোনো সময়ের জন্য প্যারোল দিতে পারেন।
খালেদা জিয়া প্যারোল চাইতে পারেন বলে যে গুঞ্জন রয়েছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, নীতিনির্ধারকরা যদি তাকে পরামর্শ দেন, স্ট্যান্ডিং কমিটি যদি তাকে পরামর্শ দেয়, সে পরামর্শ অনুযায়ী তিনি প্যারোলে যাবেন কি যাবেন না, এটা সম্পূর্ণ তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। যেহেতু খালেদা জিয়া সাধারণ কোনো ব্যক্তি নন, তিনি তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, রাজনৈতিক অঙ্গনের শতকরা ৮০ ভাগ লোকের সমর্থনপুষ্ট। অতএব তার সিদ্ধান্ত অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে।
তবে তার আগেই প্যারোল নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে খন্দকার মাহবুব বলেন, ২০১৬ সালের ১ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নীতিমালা করা হয় প্যারোলের ব্যাপারে। ২০০৭ সালের যে নীতিমালা ছিল সে নীতিমালা বাতিল করে দিয়ে সরকার নতুন নীতিমালা করে।
সে নীতিমালা অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত আসামি, কয়েদি যাকে বলা হয় বা হাজতি আসামি, যারা সাজাপ্রাপ্ত না হয়েও কারাভোগ করছেন, সবাই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন। মৃত্যু, জানাজায় অংশ নেওয়া ইত্যাদি ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে কেনো সাজাপ্রাপ্ত আসামি বা হাজতি আসামিকে বিশেষ ক্ষেত্রে প্যারোল দিতে পারেন।
এখানে কোনো বাধ্যবাধকতা নাই এবং দিন, তারিখও ঠিক নাই। যতদিন সরকার মনে করবে ততদিন দিতে পারে। বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যে জেলায় আসামি থাকেন, সেই জেলা কর্তৃপক্ষও প্যারোল দিতে পারেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে যে কোনো ব্যক্তিকে যে কোনো দিন যতদিন খুশি প্যারোল দিতে পারেন। কিন্তু ইদানিং আমরা কয়েকটি সংবাদপত্রে কয়েকজন আইনজীবীকে বলতে দেখেছি সাজাপ্রাপ্ত আসামির ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য না। এ বক্তব্য সঠিক নয়। তাদের আমি অনুরোধ করব, তারা যেন ২০১৬ সালের পহেলা জানুয়ারি যে নীতিমালা প্রকাশ করেছে, সেই নীতিমালাটা দেখেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন গত বছরের ১৩ জুন চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছিলেন। খালেদার অসুস্থতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, বিচারিক আদালতে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলার বিচার চলছে। তাই আইনি প্রক্রিয়ায় তার মুক্তিতে সময়ের প্রয়োজন।
আমরা সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে দেখেছি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্যরোলে মুক্তি দিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বেসরকারি হাসপাতাল স্কয়ারে তার চিকিৎসা হয়েছিল। এক সময় তাকে বিদেশে চিকিৎসারও সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। গতকাল রবিবার সেই কথারই পুনরাবৃত্তি করেন খন্দকার মাহবুব।
তিনি বলেন, আমরা ইতিপূর্বেও দেখেছি আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তিনিও কিন্তু প্যারোলে গিয়ে বিদেশে চিকিৎসা করে এসেছেন। আমাদের অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্যারোলে গিয়েই চিকিৎসা নিয়েছেন। অতএব প্যারোল সম্পর্কে এ ধরনের বিভ্রান্তি থাকার জন্যেই আজকে আপনাদের কাছে এ বক্তব্য দিচ্ছি। শেখ হাসিনা বা তারেক রহমান যখন প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন তখন তারা সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন না। কিন্তু খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার বিষয়টি তোলা হয় তার আইনজীবীর কাছে। আইনে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি, হাজতি সবার ক্ষেত্রে প্যারোল সমানভাবে প্রযোজ্য। ২০১৬ সালে যে নতুন নীতিমালা হয়েছে, সেখানে সাজাপ্রাপ্ত বা হাজতির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে সরকারের উপর। কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবেন উনি কতদিন বাইরে থাকতে পারবেন এবং কতদূর তিনি যেতে পারবেন। এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্ত। এখানে কোনো আইনের বিধান নেই। আদালতের কোনো ভ‚মিকা নাই।
খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে কোনো বাধা আছে কি না জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, সেটা সরকারের উপর নির্ভর করে। তাকে প্যারোল দেওয়া হবে কি না সেটাও সরকারের উপর নির্ভর করছে। এমনকি যিনি প্যারোলে যেতে চান তারও মতামতের উপর নির্ভর করে।
আপনাদের হয়ত মনে আছে আমি একবার বলেছিলাম, তখন সরকার তরফ থেকেও বলা হয়েছে, যদি আবেদন করা হয় তারা সেটা বিবেচনা করবে। পরবর্তীতে রাজনৈতিক মতবিরোধ হওয়ার কারণে সেটা প্রসিড করেনি।
প্রসঙ্গত দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদন্ড নিয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া। আর্থ্রাইটিসসহ নানা জটিলতায় ভোগা খালেদাকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিতে কারা কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিলেও তার আপত্তিতে তা হয়নি। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হতে পারে বলে স¤প্রতি গুঞ্জন উঠেছে।