কোণঠাসা উপজেলা চেয়ারম্যানরা হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়ন চান ইউএনও’র পরিবর্তে উপজেলা পরিষদ কার্যালয় লেখা সাইনবোর্ড টাঙানোর নির্দেশ

35

উপজেলা পরিষদ ভবনে ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়’ এর পরিবর্তে ‘উপজেলা পরিষদ কার্যালয়’ লেখা সাইনবোর্ড টাঙানোর হাইকোর্টের নির্দেশে আশান্বিত ক্ষমতা ও কর্মে কোণঠাসা উপজেলা চেয়ারম্যানরা। তাঁরা এ রায়ে ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে ক্ষমতা ও কার্যপরিধিতে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা করেন।
এ প্রসঙ্গে আনোয়ারার উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী পূর্বদেশকে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আইন অনুসারে উপজেলা পরিষদের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। কিন্তু বাস্তবে বিভিন্ন পরিপত্রের কারণে ক্ষমতা ও দায়িত্বে অস্পষ্টতা থেকে যায়। উপজেলা পরিষদের সাথে ইউএনও’রা আরেকটি অফিসের সাইনবোর্ড ব্যবহার করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। জনগণের সুখ-দুঃখ আমাদেরই জানার কথা। স্থানীয় পর্যায়ে কারা প্রকৃত কৃষক, মানুষের দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদী সমস্যাগুলো আমাদেরই জানা। কিন্তু নিরাপত্তা ও সম্মানজনক বিষয়ে যেমন উপজেলা চেয়ারম্যান উপেক্ষিত; একইসাথে সরকারি বরাদ্দ ঠিক করা ও বিতরণ করার বিষয়টি ইউএনওদের মাধ্যমে করা হয়। যেটা সরকার ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে সেতুর ভূমিকা পালনকারী উপজেলা চেয়ারম্যান পদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি উদাহরণ টেনে আরও বলেন, করোনা মহামারিতে সরকারি বরাদ্দ এসেছে। বিতরণ করেছেন ইউএনও’রা। সত্যিকার কৃষক, দিনমজুর জেলেরা কি বরাদ্দ পেয়েছে? আমাদের কাছে জনগণ বিভিন্ন বিষয়ে আসেন, কষ্টের কথা বলেন। বাস্তবিক জটিলতায় আমরা অনেক কিছু করতে পারি না। হাইকোর্টের রায়ের বাস্তবায়ন চান তিনি। এতে শুধু জনপ্রতিনিধির চেয়ার শক্তিশালী হবে না, জনগণের কাছে আওয়ামী রাজনীতির, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়নের সুফলের সুষম বন্টন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আকতার কামাল এ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্যে বলেন, জনগণের প্রতিনিধি উপজেলা চেয়ারম্যানকে স্থানীয় এমপিদের হাতের পুতুল বানিয়ে রাখা হয়েছে। স্থানীয় উন্নয়ন, স্কুল কমিটি, মাদ্রাসা কমিটি, উপজেলা পর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজটি উপজেলা চেয়ারম্যানের। কিন্তু এমপিদের চরমমাত্রার হস্তক্ষেপে কোণটাসা হয়ে আছে উপজেলা চেয়ারম্যানরা। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যানকে নিষ্ক্রিয় করতে ইউএনওকে ব্যবহার করা হয়। আইনি পরিপত্রের সুযোগের সদ্ব্যবহার করে জনগণের প্রতিনিধিকে জনগণ থেকে দূরে রাখা হয়। এতে আস্থা হারা হচ্ছে মানুষ। অথচ আইন অনুসারে স্থানীয় সবধরনের উন্নয়ন কর্মকাÐ ও তদারকি উপজেলা চেয়ারম্যানের করার কথা। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে উপজেলা চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও ক্ষমতা সঠিকভাবে চর্চার সুযোগ করে দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিষদের অধীনে ন্যস্ত সব দফতরের কার্যক্রম পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে করার জন্য ইউএনওদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ইউএনও’রা যাতে ওই সার্কুলার অনুসরণ করেন সেজন্য পৃথক আরেকটি সার্কুলার জারি করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের এক সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।
গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চের স্বাক্ষরের পর এসব আদেশের লিখিত অনুলিপি প্রকাশ হয়েছে।
আদালত তার আদেশে উপজেলা পরিষদ ভবনে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের পরিবর্তে ‘উপজেলা পরিষদ কার্যালয়’ লেখা সাইনবোর্ড টানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি একই আদেশে উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮-এর ধারা ১৩ (ক), ১৩ (খ) ও ১৩ (গ) কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। মামলার বিবাদিদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ও ড. মহিউদ্দিন মো. আলামিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস।
এর আগে ১৫ জুন উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা খর্ব করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের ক্ষমতা দেওয়ার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আজিজসহ তিনজন উপজেলা চেয়ারম্যান এ রিট দায়ের করেন। বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর সে আদেশের লিখিত অনুলিপি প্রকাশ হলো।