কেন্দ্রীয় আ.লীগে ঠাঁই পাননি নগরের কেউ!

70

রাহুল দাশ নয়ন

আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটিতে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পর যে দুইজন নেতা ঠাঁই পেয়েছেন তাঁরা চট্টগ্রামের। প্রথম প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ড. হাছান মাহমুদ। দুইজনই চট্টগ্রাম উত্তর জেলার বাসিন্দা। একইভাবে দক্ষিণ জেলার তিনজন কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে উত্তর ও দক্ষিণ জেলার নেতাদের রাজত্ব থাকলেও মহানগরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত কেউ কমিটিতে ঠাঁই পাননি। গত কমিটির মতো এবারও ‘খালিহাত’ নগরের।
চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বিষয়টি দেখছেন ভিন্নভাবে। তারা বলছেন, কেন্দ্রে স্থান পাওয়া নেতাদের উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর রাজনীতি বিবেচনা করে কমিটিতে রাখা হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া নেতারা আওয়ামী লীগের জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখার কারণেই এসেছেন। যদিও স্থানীয় রাজনীতিতে তাঁরা বিভিন্ন উপজেলার প্রতিনিধিত্ব করেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটি করার ক্ষেত্রে জেলা বিবেচনায় রাখা হয় না। যোগ্যতার ভিত্তিতেই নেতাদের কমিটিতে রাখা হয়। এক সময় ফরিদপুর জেলা থেকে শেখ হাসিনা ও সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আগামী নির্বাচন ও সংগঠনকে এগিয়ে নিতে পারে এমন নেতাদের বাছাই করেই কমিটিতে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতাকর্মী নেত্রীর প্রতি আস্থা রেখেছেন। ভবিষ্যতে হয়তো চট্টগ্রাম মহানগর থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে কেউ আসবে।’ গত ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় ঘোষিত আওয়ামী লীগের ৪৬ জনের কমিটিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ঠাঁই পান। গত রবিবার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বৈঠক শেষে কয়েকটি ছাড়া বাকিপদগুলো পূরণ করা হয়। এতে চট্টগ্রাম থেকে নতুন করে কেউ কমিটিতে আসেননি। যদিও কমিটিতে আসতে পারেন এমন কয়েকজনের নাম শোনা গিয়েছিল। এদিকে আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রকাশের পর চট্টগ্রামের দুই নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও ড. হাছান মাহমুদের গুরুত্ব বাড়ার বিষয়টি সামনে আসে। গত কমিটিতে প্রেসিডিয়ামের সাত নম্বর অবস্থানে থাকা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে প্রথম প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়েছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদের তৃতীয় অবস্থানে থাকা ড. হাছান মাহমুদকে এখন প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের জাতীয় রাজনীতিতে এই দুই নেতার গুরুত্ব আরও বেড়েছে। এই দুই নেতাকে প্রাধান্য দেয়ায় তাঁদের সংসদীয় আসনে উৎফুল্লতা বেড়েছে।
মিরসরাই ও রাঙ্গুনিয়ার নেতাকর্মীরা জানান, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আগামীতে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। শেষ সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নেতাকে প্রথম প্রেসিডিয়াম সদস্য করে সম্মান জানিয়েছেন। অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা আগামী রাজনীতির বার্তা হিসেবেই দেখছেন নেতাকর্মীরা। তাদের ধারণা, আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদকের হতে পারেন ড. হাছান মাহমুদ। যে কারণে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এই নেতাকে সাধারণ সম্পাদকের বিকল্প হিসেবে প্রস্তুত করতেই প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করেছেন।
মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, মোশাররফ ভাইকে প্রথম প্রেসিডিয়াম সদস্য করায় আমরা আনন্দিত। মিরসরাইবাসী উনার জন্য গর্বিত। আমরা দলীয় সভানেত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রেসিডিয়ামে যেসব নেতা আছেন মোশাররফ ভাই তাদের মধ্যে সিনিয়র। বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনীতি করা নেতা উনি। রাজনীতিতে উনার অনেক অবদান। এসব বিবেচনা করেই দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নেতাকে সম্মান জানিয়েছেন।
রাঙ্গুনিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার পূর্বদেশকে বলেন, ‘হাছান ভাইকে নেত্রী প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে শুধু রাঙ্গুনিয়াবাসী নয়, চট্টগ্রামের মানুষকে সম্মান দিয়েছেন। নেত্রী হাছান ভাইয়ের কাজের মূল্যায়ন করেছেন। উনি এত বেশি পরিশ্রম করেছেন তা অবিশ্বাস্য। মন্ত্রণালয়, দল ও নির্বাচনী এলাকা সবখানেই সমানভাবে কাজ করেছেন। জাতীয় নেতা হিসেবে উনি মন্ত্রণালয় ও উত্তরবঙ্গে দলের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করলেও উনার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা এলাকা সামাল দিয়েছি। একজন অলরাউন্ডার নেতা উনি। প্রধানমন্ত্রী সঠিক জায়গায় রেখেছেন আমাদের নেতাকে। আগামীতে হয়তো নেত্রী আরও ভালো কিছুতে রাখবেন সে চিন্তা থেকেই প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করেছেন।’