কি হতে যে কি হয়ে গেল মেয়েটির!

47

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেরশাহ কলোনির ডা. মাজহারুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সামিহা আফরিন মৌ (১৫)। প্রেমিক জিসানকে খুঁজতে কক্সবাজার গিয়েছিল। কিন্তু তার প্রেমিক দেখা করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফেরার পথে রুবেল নামে এক টমটম চালক তার পুরো কাহিনী শুনে জিসান তার পূর্ব পরিচিত বলে জানায়। এক পর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে কালক্ষেপণ করে। এরপর একটি আবাসিক হোটেলে তুলে দেয়। সেখানে ভয়-ভীতি দেখিয়ে রুবেল একাধিকবার ধর্ষণ করে মৌকে। এ ঘটনার পর মৌ বাসায় ফিরে রাগে ক্ষোভে আত্মহত্যা করে।
এ ঘটনায় নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছিল বলে জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান। ওই ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মৌ আত্মহত্যা করেছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ভিকটিমের বোন সালমা আক্তার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
আত্মহত্যার আগে মৌ একটি চিরকুট লিখেছিল। সেই চিরকুট ও তার বান্ধবীর সূত্র ধরে ধর্ষককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গেপ্তাররা হলেন রুবেল (১৯) ও জিসানুল ইসলাম (২০)।
গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
তিনি জানান, সামিহা আফরিন মৌ (১৫) এর বন্ধু জিসান চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি থানা এলাকায় ফুলকলি মিষ্টির কারখানায় কাজ করতো। তার সাথে ফেসবুকে পরিচয়ের সুবাধে একবছর ধরে তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে জিসানুল ইসলাম আরও বেশি বেতনে কক্সবাজারে চাকরি পাওয়ায় সে বায়েজিদ বোস্তামি এলাকা থেকে নতুন কর্মস্থলে চলে যায়। তাদের সাথে মোবাইলে নিয়মিত যোগাযোগের এক পর্যায়ে বন্ধু জিসানুলের আমন্ত্রণে গত ৩১ মে মৌ তার বান্ধবী মাহমুদা মুক্তাকে (১৫) সাথে নিয়ে কক্সবাজারে যায়। সেখানে গিয়ে মৌ তার বন্ধু জিসানুলের সাথে যোগাযোগ করলে সে ব্যস্ত আছে বিধায় দেখা করতে পারবে না বলে জানায়। পরে জিসান তার তিনজন বন্ধুকে মৌ এর কাছে পাঠিয়ে দেখা করতে অস্বীকৃতির কথা জানায় এবং তাদেরকে চট্টগ্রাম ফিরে যাওয়ার জন্য বলে। তখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে মৌ ও তার বান্ধবী মুক্তা একটি টমটম নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে যায় চট্টগ্রামে ফিরে যাওয়ার জন্য। টমটম চালক রুবেল (১৯) মৌয়ের কাছ থেকে ঘটনা জানার পর মৌকে আশ্বস্ত করে যে, জিসান তার পূর্ব পরিচিত। তাকে সময় দিলে সে যেভাবেই হোক জিসানের সাথে মৌয়ের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিবে। টমটম চালক রুবেলের কথায় আশ্বস্ত হয়ে মৌ সরলমনে তা বিশ্বাস করে। রুবেল মৌ এর বান্ধবী মুক্তাকে তখন একটি চট্টগ্রামগামী বাসে তুলে দেয়।
এর পরের ঘটনা তুলে ধরে তিনি জানান, রুবেল জিসানকে খুঁজে বের করার অভিনয় করে মৌকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কালক্ষেপণ করে। এক পর্যায়ে সে জানায়, জিসানকে খবর দেয়া হয়েছে। রাতে ৬নং ঘাটের পার্শ্ববর্তী ‘হোটেল আল আমিন’ এ এসে মৌ এর সাথে দেখা করবে মর্মে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে উক্ত হোটেলে রুম নেয়।
রাতে জিসান এসেছে বলে মৌকে হোটেল রুমের দরজা খুলতে বলে। তখন রুবেল উক্ত হোটেল রুমে প্রবেশ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক একাধিকবার ধর্ষণ করে কৌশলে পালিয়ে যায়। মৌ নিরুপায় হয়ে ১ জুন রাতে নগরীর বায়েজিদে তাদের বাসায় ফিরে আসে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মৌ রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে, অভিমানে ৩ জুন ভোরে নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।
মৌ এর বোন আয়েশা আক্তার জানান, গত ৩১ মে স্কুলে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় আমার বোন। তখন আমরা বায়েজিদ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করি। কিন্তু রাতে জানতে পারি, ফেসবুকে পরিচয় হওয়া এক যুবকের সাথে দেখা করতে বান্ধবীর সাথে কক্সবাজার যায় সে। তারপর সে ফাঁদে পড়ে ধর্ষণের শিকার হয়। এতে সে দুঃখে-অপমানে আত্মহত্যা করে। পরে বায়েজিদ থানায় একটি মামলা দায়ের করি। আমরা তার ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করছি।