কালুরঘাট নতুন সেতুর স্বপ্ন পূরণের পথে বাস্তবায়নের অপেক্ষায় চট্টগ্রামবাসী

59

রেলমন্ত্রীর আগমনেই জানান দিল দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে কর্ণফুলরি নদীর উপর প্রাচীনতম সংযোগসেতু কালুরঘাট সেতুটি পুনঃনির্মাণ হতে যাচ্ছে। ফলে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল কালুরঘাট নতুন সেতুর স্বপ্নপূরণ। দীর্ঘদিন ধরে এই সেতুর দাবিতে আন্দোলন করছেন স্থানীয়রা। আশ্বাসের বাণী শোনা গেলেও এবার আলোর মুখ দেখবে বলে আশাবাদী দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর মানুষ। গত বুধবার রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সেতুটি পরিদর্শনে এসে এ সুসংবাদ দিয়ে যান। তিনি গতমাসে এ সেতুর অর্থায়নে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্মতি মিলেছে বলে জানিয়েছিলেন। মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, যেহেতু অর্থায়ন মিলছে তাই এবার নতুন কালুরঘাট সেতু আগামী ২০২২ সালের মধ্যেই নির্মাণ হবে। সূত্র জানায়, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কালুরঘাট সেতু নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও মতামত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত দ্য ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ডের (ইডিসিএফ) কাছে পাঠিয়েছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়া কিছু টেকনিক্যাল বিষয়ের ওপর মতামত জানতে চেয়েছে। ইডিসিএফের সিনিয়র লোন অফিসার ইয়েলি কিম স্বাক্ষরিত চিঠিতে রেলওয়ে কাম রোড ব্রিজ অথবা শুধু রেল সেতু নির্মাণের বিষয়ে রেলওয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি সর্বনিম্ন স্ট্যান্ডার্ড নেভিগেশনাল ছাড়পত্র কত হবে, সিঙ্গেল নাকি ডাবল রেললাইন, লেন সংখ্যা, সেতুর টাইপ (এক্সট্রা ডোজড/ট্রাশ), রেলওয়ে গেজ (সিঙ্গেল/ডাবল), ব্রডগেজ বা মিটার গেজ এবং প্রকল্পের সম্ভাব্য আর্থিক ব্যয় সম্পর্কে কূটনৈতিক চ্যানেলে বিস্তারিত প্রস্তাব পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেগুলো নিয়ে কাজ করছে।
প্রত্যাশিত সেতু বাস্তবায়নে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থায়নে নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ সেতুর নির্মাণে প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ১১০০ কোটি টাকা দক্ষিণ কোরিয়া ও অবশিষ্ট ৯০০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করবে জানিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। সেতু নির্মাণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ বছর।
আমরা জানি, কালুরঘাটে সেতু নির্মাণের দাবিতে জাতীয় সংসদে আমৃত্যু দাবি জানিয়েছিলেন প্রয়াত সাংসদ মঈন উদ্দীন খান বাদল। তার শূন্য আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দীন আহমদ প্রয়াত এমপি বাদলের স্বপ্ন পূরণে এক বছরের মধ্যে কালুরঘাটে সেতু নির্মাণের কাজ দৃশ্যমান করার প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত করেন। সেই লক্ষ্যে বর্তমান সংসদ মরিয়া হয়ে কাজ করছেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনদের সূত্রে জানা যায়। এছাড়া, এই সেতুর দাবিতে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন বোয়ালখালীর কিছু স্বপ্নবাজ তরুণ। তাঁরা রাজপথে মানববন্ধন থেকে শুরু করে তৎপর ছিলেন সরকারের প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরে ধর্নার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদানসহ নানাবিধ কর্মতৎপরতায়। তারুণ্যের এই সঞ্চিত সাহসে ভর করে সমগ্র বোয়ালখালীর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের দাবি শুধু একটাই ‘বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু চাই’ এই স্লোগানকে ধারণ করে নানা আন্দোলনে শরিক হন।
সেতু নির্মিত হলে চট্টগ্রাম শহরের আবাসনের চাপ, যানজট বহুলাংশে কমে আসবে। এছাড়া অর্থনৈতিক সোনালী দ্বার উন্মোচিত হবে বলে আশাবাদ নাগরিক সমাজের। পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজার এলাকার সাথে চট্টগ্রাম নগরীর যোগাযোগ আরো সহজ হবে। কালুরঘাট বোয়ালখালী সেতু নির্মাণের উদ্যোগে নদীর দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে নতুন করে আশার আলো দেখা দিয়েছে। এই সেতু নির্মিত হলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া অংশের প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষের চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াত ভোগান্তি অনেক কমবে। বোয়ালখালী উপজেলার জৈষ্ঠ্যপুরা ও দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার মধ্যে যোগাযোগ তৈরিতে যে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সঙ্গেও যাতায়াত সহজতর হবে। চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়াসহ বান্দরবান জেলার বড় একটি অংশের দূরত্ব অনেক কমবে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উন্নয়নে বিশেষ করে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, মিরসরাই ও আনোয়ারা উপজেলায় বিশেষ শিল্প এবং ইকোনমিক জোন তৈরি, নগরীতে যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার নির্মাণসহ নানাবিধ কর্মতৎপরতা চলছে। চট্টগ্রামের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা এবং তাঁর নির্দেশে উন্নয়নের যে কর্মযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে সেই কারণে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার পূর্বাংশের লক্ষ লক্ষ মানুষের দৃঢ বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতুর দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু হবে। চট্টগ্রামবাসী কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় থাকবে।