কার্বন নিঃসরণ কতটা কমাবেন বলুন

10

প্যারিস সম্মেলনের প্রতিশ্রুতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তার আলোকে কার্বন নির্গমণ কমিয়ে আনার জাতীয় মাত্রা নির্ধারণের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহব্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল সোমবার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় ২৬তম জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে মূল অধিবেশনে ভাষণে তিনি এই আহŸান জানান।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও আয়োজক দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও মূল অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
২০১৫ সালে প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাক শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যেন না বাড়ে, তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিতে রাজি হয়েছিল। সেই চুক্তির ফলে কার্বন নির্গমণ ২০৫০ সালের মধ্যে কার্যত শূন্যে নামিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশকে এখন কার্বন নির্গমণ ব্যাপক হারে কমাতে হবে।
বিশ্বের বেশি কার্বন নির্গমণকারী উন্নত দেশগুলো বছরে কী পরিমাণ কমাবে, তার যে পরিকল্পনা দিচ্ছে, তাতে লক্ষ্য অর্জন দূরে সরে যাচ্ছে বলে জাতিসংঘ কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে ২০০ দেশের রাষ্ট্রনায়ক-প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে গøাসগো সম্মেলনে প্যারিস সম্মেলনের কথা উন্নত দেশগুলোকে মনে করিয়ে দিলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, যারা বেশি কার্বন নির্গমণ ঘটাচ্ছে, তাদের উচ্চাভিলাষী এনডিসি (ন্যাশনাল ডিটারমিন্ড কন্ট্রিবিউশন) প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
এটিসহ চারটি প্রস্তাব সম্মেলনে উত্থাপন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, যিনি একইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জোট সিভিএফের চেয়ারপারসন হিসেবেও এই সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করছেন। জলবায়ু ক্ষতি কাটাতে উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রæত বার্ষিক ১০০ কোটি ডলার তহবিল গঠন এবং অভিযোজন ও প্রশমনে আধাআধি বরাদ্দের প্রস্তাব দেন তিনি।
সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে সাশ্রয়ী মূল্যে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ প্রযুক্তি দেওয়া এবং সিভিএফ দেশগুলোর উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করতে উন্নত দেশগুলোকে বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ প্রস্তাবে বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদী ভাঙন, বন্যা এবং খরার কারণে বাস্তুচ্যুত জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বিশ্বব্যাপী দায়বদ্ধতা ভাগ করে নেওয়াসহ লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টির অবশ্যই সমাধান করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী নির্গমনের মাত্র ০.৪৭ শতাংশেরও কম অবদান রাখা সত্তে¡ও বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। তার মধ্যেও তিনি কার্বন নির্গমণ কমাতে বাংলাদেশের নানা পরিকল্পনা জলবায়ু সম্মেলনে উপস্থাপন করেন।
দেশের এনডিসি হালনাগাদ করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগের ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে শক্তির ৪০ শতাংশ জোগানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিস্তৃত সৌরশক্তি কার্যক্রম। আমরা আশা করি, ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আমাদের ৪০ শতাংশ জ্বালানি থাকবে। আমরা ১২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করেছি। খবর বিডিনিউজের
উষ্ণায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ২০০৯ সালে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেইঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, গত সাত বছরে আমরা জলবায়ু সম্পর্কিত ব্যয় দ্বিগুণ করেছি। বর্তমানে আমরা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রস্তুত করছি। ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি জলবায়ুর ঝুঁকি থেকে টেকসই ও জলবায়ু সমৃদ্ধির পথে যাত্রা। জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত ১১ লাখ মিয়ানমারের নাগরিক বা রোহিঙ্গাদের কারণে জলবায়ু প্রভাবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সিভিএফ ও ভি-২০ এর সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ৪৮টি দেশের স্বার্থ প্রচার করছি। গেদ্বাবাল সেন্টার অফ অ্যাডাপ্টেশনের ঢাকার দক্ষিণ এশিয়া অফিসের মাধ্যমে আমরা আঞ্চলিকভাবে সর্বোত্তম অনুশীলন এবং অভিযোজন অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে চলেছি। সিভিএফের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ একটি জলবায়ু জরুরি চুক্তির চেষ্টা করছে।’