কক্সবাজার ঘিরে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার

25

রাসেল চৌধুরী, কক্সবাজার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছেন, তখনই জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে দেশের অগ্রযাত্রা রদ করা হয়। আজ জাতির পিতার আদর্শে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে-ইনশাআল্লাহ।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) বহুতল অফিস ভবন উদ্বোধনকালে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে উপরোক্ত কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যটন শিল্প বিকাশে সরকার কক্সবাজারকে ঘিরে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। দেশীয় পর্যটকদের সুযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে মহেশখালীর সোনাদিয়া, টেকনাফের সাবরাং এবং জালিয়ার দ্বীপে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক করা হচ্ছে। যেখানে বিদেশি পর্যটকদের জন্য পৃথকভাবে সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে। এছাড়া কোরাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় নতুন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের উন্নয়নে সরকারের দৃষ্টি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সড়কের উন্নয়নের পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ কাজ দ্রæত শুরু করা হবে। ইতিমধ্যে দোহাজারি থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইনের কাজের সিংহভাগ শেষ হয়েছে। যেটি বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারের জনগণ খুবই স্বল্প সময়ে রাজধানীসহ দেশের যেকোন স্থানে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন। বিদেশি পর্যটকরা যাতে সহজে কক্সবাজার আসতে পারেন, সেজন্য কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা আমাদের সমুদ্রসীমা অধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন। তাকে হত্যার পরে অনেক সরকার ক্ষমতায় এলেও সমুদ্র সীমার অধিকার রক্ষায় কেউ কথা বলেনি। ৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে মামলাটির অগ্রগতি নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করি। কিন্তু ২০০১ সালে ক্ষমতায় রদবদল হওয়ায় সে উদ্যোগ থেমে যায়। ২০০৮ সালে আবারো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সমুদ্রসীমার অধিকারের মামলা নিয়ে নতুন করে কাজ করে। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের মাধ্যমে মিয়ানমার আর ভারতের কাছ থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করেছি।
দেশে গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ছিল না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় আমার দেশের ছেলে মেয়েরা গবেষণা করার সুযোগ পেত না। শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য কৃষি, মৎস্য, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট করেছি। যেখানে মেধাবী শিক্ষার্থীরা গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে এর সুফলও পাচ্ছি।
৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার কয়েক লাখ মানুষ গৃহহারা হয়ে পড়ে। সেদিন আমি দেখেছি ঘর হারা মানুষের কষ্ট। এসব মানুষের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার খুরুশকুলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে থাকার ব্যবস্থা করেছে। গৃহহারা মানুষগুলো মৎসজীবী ছিলেন বলে সেখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক শুটকি হাট বসানো হবে।
জাতির পিতার স্বপ্ন পুরণে দেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না বলেও জানান সরকার প্রধান।
লবণ চাষের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি আরও বলেন, লবণ শিল্প রক্ষায় লবণ চাষিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি আমরা। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে লবণ উৎপাদন বাড়ানো গেলে দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। সেই লক্ষ্যেই আমাদের এগুতে হবে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করতে প্রতি বছর সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ঝাউবাগান এবং ম্যানগ্রোভ চারা রোপন করার আহŸান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলকে প্রাকৃতিক ঝড় বা জলোচ্ছ¡াস থেকে রক্ষা করতে এসব গাছ রোপন করা যেতে পারে। বৃক্ষরোপন কাজটি বেশি কঠিন হবে না।
দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মহেশখালীকে ইতিমধ্যে ডিজিটাল আইল্যান্ড ঘোষণা করা হয়েছে। বাস্তবায়ন হচ্ছে অর্থনৈতিক জোন, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্র বন্দর। এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মহেশখালীর চেহারা বদলে যাবে।
সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় সবার ভূমিকার উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সময় সমুদ্রের লাল কাঁকড়া হারিয়ে গিয়েছিলো। হারিয়ে যাওয়া লাল কাঁকড়া ফিরে এসেছে। ডলফিনও মাঝে মাঝে দেখা মিলছে। তাই সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষা করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব। কক্সবাজারকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) গঠন করা হয়েছে। মহাপরিকল্পনায় সেটি বাস্তবায়নে বহুতল কউক ভবন উদ্বোধন হলো।
কউকের বহুতল অফিস ভবন উদ্বোধনে সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরিফ আহম্মদ, এমপি। এ সময় বক্তব্য রাখেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দাকার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ। উদ্বোধনের আগে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।