কক্সবাজারে ধ্বংস করা হলো ৯১ লাখ ইয়াবা

10

কক্সবাজার প্রতিনিধি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, মিয়ানমারের সাথে জল-স্থল-পাহাড় মিলে আমাদের ২৭৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সীমান্ত দিয়েই মাদক আনে চোরাকারবারিরা। সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অনেক দুরূহ ব্যাপার। এরপরও মাদকরোধে কঠোর হতে হবে। অপরাধী ও চোরাকারবারিদের কোন দলীয় পরিচয় নেই। সীমান্ত চোরাচালান ও মাদকরোধে যাতায়াত সহজতর করতে বিজিবিতে হেলিকপ্টার থেকে শুরু অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজারের রামু বিজিবি রিজিয়ন মাঠে বিজিবি আয়োজিত মাদকদ্রব্য ধ্বংসকরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, সীমান্তে মাদক ও মানবপাচাররোধে কাজ করছে বিজিবি। আমাদের দেশে মাদকসেবীর ৫০ শতাংশ হচ্ছে তরুণ। দেশে ২৪ প্রকার মাদক আসে মিয়ানমার থেকে। বিজিবি সদস্যরা দেশের জন্য দুঃসাহসিক কাজ করে যাচ্ছেন। বিজিবি সক্ষমতা দিয়ে সীমান্তে কাজ করছে, আজকে ধ্বংস করা মাদক তারই প্রমাণ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বাস্তবায়ন করা। আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। ২০৪০ সালে উন্নয়নশীল দেশে উপনীত হবো। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে তরুণদের সক্ষম করতে হবে। তাই, মাদকের সাথে জড়িতরা যে দলের হোক, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, বিজিবি সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী। দেশকে মাদকমুক্ত করতে সীমান্তে ভূমিকা পালন করছে বিজিবি। নির্বাচন থেকে শুরু করে দেশের দুর্যোগকালীন সময়েও বিজিবি নিরলসভাবে কাজ করে। তাই, বিজিবিকে আরও আধুনিকায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী কাজ করছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ও সার্বজনীন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সীমান্তে মাদক পাচাররোধে বিজিবি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
বিজিবিকে বিশ্বমানের একটি আধুনিক ত্রিমাত্রিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজিবি’র পাশে থেকে সাহস জোগানোর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান বিজিবি প্রধান। সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিতে বিজিবিকে সহযোগিতা করতে সকলের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, বিজিবি’র কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজম-উস-সাকিব, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. ফখরুল আহসান, কক্সবাজার ত্রাণ ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজোয়ান হায়াত, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদসহ উচ্চপদস্থ সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিজিবি কক্সবাজার রিজিয়ন সূত্র জানায়, গত ১ বছরে মালিকবিহীন উদ্ধারকৃত ৯০ লাখ ৮০ হাজার ৪৭৭ পিস ইয়াবা, ২৩ হাজার ৭৫২ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ৬ হাজার ৭৬৭ ক্যান বিয়ার, ১ হাজার ৩৩৯ বোতল মদ, ১৫৪ বোতল ফেন্সিডিল, ২০৬ লিটার বাংলা মদ, ১৭ কেজি গাঁজা, ৪৮ হাজার ১৯ পিস বিভিন্ন প্রকার ট্যাবলেট, ১০ হাজার ৯৮৪ প্যাকেট সিগারেট এবং ৭ বোতল এ্যামোনিয়াম সালফার ধ্বংস করা হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে আটক ১ হাজার ৯৭৯ জন আসামিসহ ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৩০ পিস ইয়াবা, ২৭ হাজার ৪৪৮ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১ হাজার ৩০৫ ক্যান বিয়ার, ৯৮ বোতল মদ, ১৩৭ বোতল ফেন্সিডিল, ৫৮ লাখ ৬ হাজার ৮০০ লিটার বাংলা মদ, ২২ হাজার ৯৯৫ কেজি গাঁজা, ৩ হাজার ১৫০ কেজি আফিম মামলার মাধ্যমে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।