ওপারের বার্মিজ গরুর নিরাপদ স্থান এপারের খামার

22

মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকার গহীণ অরণ্য এখন অবৈধ বার্মিজ গরু মজুদের নিরাপদ স্থান। সম্প্রতি আইন শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতায় কৌশল পাল্টেছে চোরাকারবারীরা। এবার তারা ভ্যাটেরিনারি বিভাগ থেকে বৈধতা নিয়ে খামার গড়ে তুলছে। সেখানে অবৈধভাবে বার্মিজ গরু এনে বৈধ করা হচ্ছে প্রতিদিন। চলতি অর্থ বছর বান্দরবানে তিন ক্যাটাগরিতে অন্তত ৩১টি গবাদি পশুর খামারের অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। বার্মিজ গরু পাচারের নিরাপদ এলাকাগুলোতে তড়িগড়ি করে এসব খামারের জন্য সুপারিশ করেছে উপজেলা ভ্যাটেরিনারি দপ্তরগুলো।
তবে ‘তড়িগড়ি করে খামার অনুমোদন’ বিষয়টি অস্বীকার করে বান্দরবান জেলা ভ্যাটেরিনারি কর্মকর্তা পলাশ কান্তি চাকমা বলেন, দুধ, ডিম, মাংশের চাহিদা পূরণের জন্য নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় খামার অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে খামারে অবৈধ কোন কাজ করলে অবশ্যই আইন শৃংখলা বাহিনী ব্যবস্থা নিবে।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত অনুমোদন দেওয়া খামারগুলোর মধ্যে অধিকাংশ নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদম উপজেলায়। চলতি মাসে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় গরু মোটাতাজাকরণ ও হৃষ্টপুষ্ট খামারের অনুমোদন নিয়েছেন বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম। মেসার্স আলম গবাদিপশু খামার নামে তিনি উত্তর বাইশারী এলাকায় খামারটি করেছেন। ভ্যাটেরিনারি বিভাগে দেয়া তথ্যমতে তার খামারে ১৪০টি দেশীয় গবাদিপশু রয়েছে। এছাড়া করলিয়ামুরা এলাকায় মেসার্স আবুল কালাম ফার্মের অনুমতি নিয়েছেন সাবেক ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আবুল কালাম। তার খামারে ১২৮টি গরু থাকার তথ্য দিয়েছেন। কাগজিখোলা এলাকায় মেসার্স সুলতান গবাদিপশু খামার অনুমোদন নিয়েছেন মো. ইব্রাহিম। তার খামারে ৫০টি এবং সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জারুলিয়াছড়ি এলাকার মৌজা হেডম্যান মংওয়াইন মারমা মেসার্স প্যারেন্ট ফার্ম নামে অনুমোদন নিয়েছেন। বর্তমানে তার খামারে ৫০টি গবাদি পশু রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন।
এদিকে নতুন গড়ে উঠা খামারের বিষয়ে বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সাদেক হোসেন ও আবু তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, তাদের এলাকায় খামারগুলোতে ৮-১০টির মত গরু রয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয়রা জানান, মায়ানমার থেকে আনা চোরাই গরু মজুদের জন্য মূলত খামারগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন সময় আইন শৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে খামারগুলোতে বার্মিজ গরু আনা-নেওয়া হয়। দিনের বেলায় এরকম গরু দেখা গেলেও পরের দিন তা দেখা যায় না। নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদম দুই উপজেলার সীমান্ত দিয়ে গত তিন মাসের অধিক সময় ধরে মায়ানমার থেকে অবৈধ বার্মিজ গরু পাচার বেড়েছে। গরুর আড়ালে একটি সিন্ডিকেট মাদকও নিয়ে আসছে। বিশেষ করে আলীকদম-দোছড়ি-বাইশারী এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আশারতলী-কম্বনিয়া-ফুলতলী, জারুলিয়াছড়ি সীমান্তে প্রতিদিন বার্মিজ গরুর সঙ্গে পাচার হচ্ছে মাদক। সম্প্রতি আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তা স্বীকার করেন বিজিবির কর্মকর্তারা।
নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী, আশারতলী, কম্বনিয়া ও আলীকদম সদরে সরেজমিনে স্থানীয়রা জানান, কিছু জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের ব্যক্তিদের কাছের মানুষগুলো হঠাৎ করেই খামার গড়ে তোলায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা জানান, চোরাকারবারীরা মায়ানমার থেকে আনা চোরাই গরু পাহাড়ে এবং খামারে মজুদ করে। পরবর্তীতে বাজার ইজারাদার থেকে রশিদ সংগ্রহ করে খামারীর গরু পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে থাকে। সচেতন মহলের মতে, আপাতদৃষ্টিতে গরু ব্যবসায় স্থানীয় এক শ্রেণী উপকৃত হলেও বিপরীতে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে গরু ব্যবসার আড়ালে মাদকের চালানও ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র।