ওটিটি নীতিমালার খসড়ায় ‘গোপনীয়তা’ লঙ্ঘনের শঙ্কা টিআইবির

6

পূর্বদেশ ডেস্ক

ডিজিটাল, সোশ্যাল ও ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ ও তদারকিতে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ কমিশনের খসড়া নীতিমালার কয়েকটি ধারা কার্যকর হলে ব্যক্তির গোপনীয়তা ‘সরাসরি লঙ্ঘিত হবে’ বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
এসব ধারার অপব্যবহারের শঙ্কা প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সেগুলো পরিবর্তনের তাগিদ দিয়েছেন।
গতকাল রবিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্লাটফর্মস ২০২১’ এর খসড়া নীতিমালায় দেশের পুরো সীমানা ‘নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা’ করা হয়েছে, এর এর মাধ্যমে মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার কিছু কিছু জায়গায় ‘অরক্ষিত’ রয়ে গেছে।
তা সুরক্ষিত করার আহ্বান জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ওই খসড়ায় কিছু ধারা ও শব্দ ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ বসানো হয়েছে, যা পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
‘খসড়া নীতিমালার ধারা ৭.০৩ অনুযায়ী, বার্তা পরিষেবা প্রদানকারীকে আদালত বা বিটিআরসির নির্দেশে প্রত্যেক সেবাগ্রহণকারী বা ব্যবহারকারীকে যাতে শনাক্ত করা যায়, তার কার্যকর পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে বেশিরভাগ বার্তা পরিষেবা প্রদানকারী মাধ্যমসমূহ মূলত ইন্ড-টু-ইন্ড এনক্রিপশন পদ্ধতি ব্যবহার করছে। কিন্ত আলোচ্য ধারাটি বলবৎ হলে বার্তা পরিষেবা প্রদানকারীকে এই এনক্রিপশন ব্যবস্থা ভাঙতে হবে। এতে করে জনসাধারণের মৌলিক অধিকার ‘ব্যক্তি গোপনীয়তা’ সরাসরি লঙ্ঘিত হবে’।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বৈশ্বিক পর্যায়ের সন্ত্রাসবাদ ও শিশু পর্নোগ্রাফি রোধে এ ধরনের বিধিনিষেধ ‘ঠিক থাকলেও’ বিরুদ্ধ মত ও সমালোচনা বন্ধ করা বা বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির ওপর নজরদারি করার জন্য এ ধরনের নিয়ম বৈধতা পেতে পারে না।
তার শঙ্কা, এই ধারা কার্যকর হলে, নিরাপত্তা ও হেনস্তার ভয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অ্যাপগুলোতে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে অনেকেই বার্তা আদান-প্রদান করবেন না। পাশাপাশি, আইনের বেড়াজালে আটকে মেসেজিং সার্ভিসগুলো বাংলাদেশে তাদের সেবা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে।
টিআইবির পরিচালক শেখ মো. মঞ্জুর-এ-আলম মূল প্রবন্ধে বলেন ডিজিটাল মিডিয়া, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করাই হবে খসড়া নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য।
ধারা ১(৩) উল্লেখ করে টিআইবি পরিচালক বলেন, এখানে বলা হয়েছে যে, এটি মূলত ‘ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা প্রদানকারী’ যারা অনলাইনে কনটেন্ট, সেবা, অথবা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট দেবেন, তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
অথচ খসড়া নীতিমালায় ‘ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা প্রদানকারী’, ‘সেবা’ অথবা ‘অ্যাপ্লিকেশন’ এর মত শব্দগুলোর সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা জানানো হয়নি। ফলে এই ধারা প্রয়োগে সংশ্লিষ্টদের ‘মর্জির উপর’ নির্ভর করতে হবে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া বিদেশি মালিকানাধীন বা বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমানার বাইরের সেবা প্রদানকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বা সহযোগিতার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়নি। অথচ সমধর্মী বিদেশি প্ল্যাটফর্ম, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তির ইঙ্গিত রয়েছে। খবর বিডিনিউজের
নীতিমালাটির এ ধরনের অস্পষ্টতা দেশের বাইরের সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে বলে মনে করে টিআইবি। নীতিমালাটি কার্যকরভাবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে অন্তত দুই বছর সময় দেওয়া উচিত বলে মত দেন টিআইবির পরিচালক।
খসড়ায় বিটিআরসিকে যেভাবে ‘নিবন্ধন সনদ’ বাতিল, স্থগিত ও প্রত্যাহারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তাতে দেশের বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসা পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছে টিআইবি।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০০১ আইনের ধারা ৬৪ এবং ৬৬এ (ধারা ১০ এবং ১২এ উল্লেখ করা হয়েছে) এর অধীনে সর্বোচ্চ ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক জরিমানা এবং সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদÐের কথা বলা আছে। যেখানে শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে তা অপরাধের সমানুপাতিক হওয়ার মূলনীতি ‘উপেক্ষিত’ হয়েছে।