এসএমএস পাওয়া না পাওয়াদের ভিড় বিআরটিএতে

14

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম কার্যালয়ে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরণ কেন্দ্রের সামনে শত শত চালকের ভিড় দেখা গেছে। এর মধ্যে অনেকেই এসেছেন মোবাইলে এসএমএস (শর্ট মেসেজ সার্ভিস) পেয়ে আবার অনেকে এসেছেন অন্যজনের কাছ থেকে শুনে।
গতকাল বুধবার বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গেলে এমন চিত্র দেখা যায়। লাইসেন্স না আসায় অনেককে ফিরে যেতে হয়েছে। তবে চট্টগ্রামের ৮৬ হাজার ৬৬৫টি পেন্ডিং লাইসেন্স এর প্রিন্ট শেষ করেছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)। এ পর্যন্ত ৪৪ হাজারেরও অধিক লাইসেন্স বিআরটিএ কার্যালয়ে এসেছে।
বাকিগুলো কয়েকদিনের মধ্যে চলে আসবে বলে জানা যায়। অর্থাৎ, এক মাসের মধ্যে পেন্ডিং সব লাইসেন্স বিতরণ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মো. শফিকুজ্জামান ভূঞা।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে পরীক্ষা ও বায়োমেট্রিক দেয়া চালকদের নানা জটিলতায় ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট ও বিতরণ দীর্ঘদিন ধরে আটকে ছিল। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তি শেষ হলে পরবর্তীতে বিএমটিএফ’কে প্রিন্ট করার দায়িত্ব দেয় বিআরটিএ। ২০২১ সালের ১ নভেম্বর থেকে কিছু কিছু স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরণ শুরু হয়। তবে চলতি মাসের শুরুতে চট্টগ্রামের সবগুলো স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট শেষ হয়। এখন শুধু বিতরণের পালা। প্রতিদিন দুই হাজার চালকের মোবাইলে এসএমএস প্রেরণ করা হচ্ছে, যাতে তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করেন। কিন্তু যারা এসএমস পাননি তারাও এসে ভিড় জমাচ্ছেন বিতরণ বুথের সামনে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি বুথ থেকে (নম্বর-৪০৩) প্রিন্ট হওয়া লাইসেন্স সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে বুথের সামনে থেকে প্রায় ১০০ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। একজনের স্মার্ট লাইসেন্স পেতে আধা ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। তবে লাইনে থাকা অনেকের মোবাইলে এসএমএস আসেনি বলে জানান।
নজরুল ইসলাম নামে এক চালক বলেন, আমার বন্ধু নাসির আর আমি একসাথে পরীক্ষা ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েছি। গত ৫ দিন আগে তার মোবাইলে এসএমএস আসলেও আমার মোবাইলে কোনো এসএমএস আসেনি। তারপরও তার সাথে আমাকে বিআরটিএ’তে আসতে বলে। এখানে এসে দেখি আমার কার্ড প্রিন্ট হলেও এখনও আসেনি। আসতে আরও কয়েকদিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
বিএমটিএফ চট্টগ্রাম বিআরটিএ শাখার ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামের সব লাইসেন্সের প্রিন্ট সম্পন্ন হয়েছে। লাইসেন্স ছাপা হওয়ার পর চট্টগ্রাম অফিসে আসলে আবেদনকারী চালককে মোবাইল বার্তার মাধ্যমে সংগ্রহের তারিখ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী চালকরা আমাদের কার্যালয়ে এসে বুথ থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে লাইসেন্স বিতরণের খবর পাওয়ার পর প্রতিদিন শত শত চালক লাইসেন্সের জন্য ভিড় জমাচ্ছেন। শুধুমাত্র এসএমএস প্রাপ্তদের কার্ড আমাদের কাছে আসছে। বাকিগুলো এখনও আসেনি। তবে কিছুদিনের মধ্যে সেগুলোও আমাদের কাছে চলে আসবে।
বিআরটিএ সদর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রিন্ট হওয়া লাইসেন্স কার্ড প্যাকেজিং করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলা ও মেট্রো সার্কেল অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। যিনি যে অফিসে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন তিনি সেই অফিস থেকে লাইসেন্স পাচ্ছেন। চলতি মাসের মধ্যে পেন্ডিং সব লাইসেন্স দেয়া যাবে বলে আশা করছেন বিআরটিএ সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশে বিআরটিএ’র ৫৪টি মাঠ পর্যায়ের অফিস রয়েছে, যার অধীনে মোট ৭০টি সার্ভিস ডেলিভারি আউটলেট রয়েছে। এসব সার্ভিস ডেলিভারি আউটলেট থেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করা হচ্ছে।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মো. শফিকুজ্জামান ভূঞা পূর্বদেশকে বলেন, বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পরে আবেদন দাখিল করে বায়োমেট্রিক প্রদানের পর এক মাসের মধ্যে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রাহকের হাতে তুলে দিচ্ছি। প্রায় ২ থেকে ৩ বছরের মতো ঝুলে থাকা চট্টগ্রামের ৮৬ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রিন্ট ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে সব লাইসেন্স বিতরণ করছি। প্রতিদিন এসএমএস প্রাপ্তরা বিআরটিএ কার্যালয়ে এসে লাইসেন্স নিয়ে যেতে পারছেন।
তিনি আরও বলেন, এসএমএস প্রাপ্তদের বেশিরভাগই নির্ধারিত সময়ে সংগ্রহ করেন না। ফলে এসব লাইসেন্স থেকে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৪৪ হাজারেরও বেশি লাইসেন্স আসলেও আমরা বিতরণ করতে পেরেছি মাত্র সাড়ে ১৬ হাজারের মত। বাকিগুলো এখনও রয়ে গেছে। এসএমএস প্রাপ্তদের বিআরটিএ কার্যালয়ে এসে নির্ধারিত সময়ে লাইসেন্স সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। আর বাকিদের এসএমএস পাওয়ার আগে ভিড় না করার আহবান জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ‘ডুয়েল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট স্মার্ট কার্ড’-এ ছাপা ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের কাজ পেয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড’। গত বছরের ২৯ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ১২০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের চুক্তি হয় বিআরটিএ’র। এরপর গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে আঙুলের ছাপ নেওয়া বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। এ কারণে দুই দফায় সময় বাড়িয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছরে ৪০ লাখ স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করবে।
এর আগে ‘টাইগার আইটি’ ২০১৬ সালে পাঁচ বছরে ১৫ লাখ লাইসেন্স সরবরাহের কাজ পেয়েছিল। ২০১৮ সালের আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের পর লাইসেন্সের আবেদনকারীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই লাইসেন্স ফুরিয়ে যায়।