এম. আনোয়ারুল আজিম (ভোলা)

36

 

এম. আনোয়ারুল আজিম (ভোলা মিয়া) ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বৈলছড়ী ইউনিয়নের চেচুঁরিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এলাকায় তিনি ভোলা মিয়া নামেই পরিচিত। তিনি বৈলছড়ী নজমুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকেইে ছাত্রদের দাবি আদায়ে ভোলা মিয়ার কন্ঠ ছিলো সোচ্চার। বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম কখনো বৃথা যায় না। আন্দোলন-সংগ্রামে আপসহীন থেকে যাঁরা নিজেদের বিপ্লবী জীবনকে উৎসর্গ করেন, মানুষ কখনো তাঁদের ফিরিয়ে দেয়নি। এ ছাড়া আদর্শিক সংকটে চরম বিশ্ববাস্তবতায় বস্তুবাদের ধারণাকে শাণিত করেন। বাস্তবতাকে ধারণ করে প্রগতিশীল লোকজনকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন বেগবান করেছিলেন ভোলা মিয়া। সম্পৃক্ত ছিলেন রাজনীতির সাথে। পালন করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতির দায়িত্ব। চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যায়নকালে ভোলা মিয়া ছাত্রদের সংগঠন ‘যাত্রিক’ প্রতিষ্ঠা করেন। মেজর জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করার পর তিনি এতে যোগদেন। বাঁশখালী উপজেলার সভাপতি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন চট্টগ্রাম-১৫ বাঁশখালী আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন।
তিনি ‘চেচুঁরিয়া আদর্শ গ্রাম প্রকল্প ও চচুঁরিয়া কৃষি ও ক্ষুদ্রশিল্প সমিতি’ গঠন করেছেন। যেই প্রকল্প সমগ্র বাশঁখালীতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জনাব আজিম ফসল ফলার অনুপোযোগী দৃষ্টি বিদকে ফসল কনার উপযোগি করে সোনালি ধানে ভরিয়ে দিয়েছেন। এম আনোয়ারুল আজিম রাজনীতির পাশাপাশি নিজেকে আজীবন জড়িয়ে রেখেছিলেন এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাÐে। নিজের এলাকাকে নিরক্ষরমুক্ত করে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন- শাহ আলাউদ্দীন মাদ্রাসা, চেচুঁরিয়া আদর্শ বিদ্যানিকেতন। বাড়ির পাশে স্থাপন করেছেন। ‘চেচুঁরিয়া জামে মসজিদ। পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, বাঁশখালী আলাওল ডিগ্রি কলেজ, বৈলছড়ী নজমুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়, পালেগ্রাম হাকিমিয়া মাদ্রাসা, বাগমারা অলী শাহ মাদ্রাসাসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জনাব আজিমের স্বপ্ন ছিল- নিজ এলাকায় একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করা। সেই স্বপ্নটির বাস্তব রূপ লাভের আগেই তাকে ছাড়তে হয়েছে এই নশ্বর পৃথিবী। তার সেই স্বপ্নটির বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন তার রেখে যাওয়া যোগ্য উত্তরসুরীরা। যার ফল ভোগ করছে আজ হাজারো জ্ঞান পিপাসু। এলাকাবাসীর স্বার্থে জনাব আজিম একজন এমবিবিএস ডাক্তার ও চারজন সেবিকার সমন্বয়ে গঠিত একটি চিকিৎসক টিমকে দান করেছিলেন ভ‚মি, স্থাপন করেছিলেন চিকিৎসা কেন্দ্র। আনোয়ারুল আজিম লেখালেখি ও সৃজনশীল কাজেও নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তখন তিনি ‘সাপ্তাহিক হলিডে’ ও ‘দি ওয়েভ’ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। তাছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ‘পিপলস ভিউ’ পত্রিকার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। জনাব আজিম সমাজসেবায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম সমাজ কল্যাণ পরিষদ কতৃক স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। ২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ব্যাংকক যান উন্নত চিকিৎসা লাভের আশায়। সেখানে প্রায় নয় দিন চিকিৎসা গ্রহণ শেষে ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় ২টা ৩০ মিনিটে সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে চলে যান পরপারে। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে প্রথম জানাজা শেষে কফিন বাঁশখালীর গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে হাজারো মানুষের অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় পারিবারিক কবরস্থানে জনাব আজিমকে শায়িত করা হয়। এই মহান দেশপ্রেমিক মানুষটির ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই- গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মরহুম আজীম সাহেবকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।