এমভি আবদুল্লাহ ও নাবিকদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিন

12

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়া সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ২৩ নাবিকসহ জলদস্যুদের কবলে পড়েছে প্রায় ৮দিন হতে যাচ্ছে। কিন্তু এখনও জাহাজ ও ক্রুদের উদ্ধারের কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছেনা। তবে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মারিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছের জাহাজের থাকা ২৩ বাংলাদেশি নাবিক সবাই সুস্থ আছেন। তিনি জলদস্যুদের কবল থেকে জাহাজ ও বাংলাদেশি নাবিকদের উদ্ধারের তৎপরতা চলছে বলে আশ্বস্থ করে বলেন, সকল নাবিকসহ জাহাজ ফেরত আনাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য থেকে আমরা বিচ্যুত হবো না। এদিকে দৈনিক পূর্বদেশসহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে সোমালিয়ার পুলিশ সূত্রে প্রাপ্ত খবরের উদ্ধেৃতি দিয়ে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহসহ জিম্মি নাবিকদের জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত করতে সোমালি পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ভারতীয় কমান্ডোরা জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে থাকা মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রুয়েনে অভিযান চালিয়ে ১৭ ক্রুকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করার পর এমভি আবদুল্লাহ অভিযানের এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরের সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে। নাবিকরা সবাই বাংলাদেশি। এরমধ্যে আতিকুল্লাহ খানসহ ১৮ জন চট্টগ্রাম জেলার অধিবাসী বলে জানা গেছে। পান্টল্যান্ড সোমালিয়ার একটি আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, যেখানে অনেকগুলো জলদস্যু দলের ঘাঁটি রয়েছে। ওই এলাকার পুলিশ বাহিনী বলেছে, এমভি আবদুল্লাহকে দখল করে থাকা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর অভিযানের একটি পরিকল্পনা তারা জানতে পেরেছে। সে কারণে তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং অভিযানে অংশ নিতেও প্রস্তুতি রয়েছে। এর আগে ১২ মার্চ জাহাজটি জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ আইএনএস সতর্কবস্থায় এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণ করে জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধার করার চেষ্ঠা করেছিল। এমনকি তারা অনেকটি এমভি আবদুল্লাহর কাছকাছিও চলে গিয়েছিল, কিন্তু নাবিকরা সশস্ত্র জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকায় সে সময় অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকেন ভারতীয় নৌ সেনারা। অপরদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মিরিটাইম ইউনিটের একটি কমান্ডো ইউনিটও অভিযান পরিচালনা করতে প্রস্তুতি নিয়েছিল, কিন্তু জিম্মি নাবিকদের ক্ষতির আশঙ্কায় বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ মালিক তাতে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়নি। জানা যায়, জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়ার পাননটল্যান্ড উপকূলীয় এলাকা থেকে ৪০/৫০ মাইল দূরে নোঙর করে আছে। কিন্তু জলদস্যুদের কাছ থেকে কোন বার্তা বা কোন মুক্তিপণ দাবি কারো কাছে করা হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে, সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড এলাকার অধিকাংম মানুষ জেলে এবং তাদের অনেকেই জলদস্যুবৃত্তিতে জড়িত। এমভি আদুল্লাহর আগে এমভি রুয়েন নামক মাল্টার একটি জাহাজ জরদস্যুদের কবলে পড়ে। সোমালিয়া উপকূলে ৪০ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে এমভি রুয়েনকে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করেন ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডোরা। জাহাজটির ১৭ ক্রুকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করার পাশাপাশি জাহাজে থাকা ৩৫ জলদস্যুর সবাইকে তারা আটক করেন। জানা যায়, ভারত এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া জানা যায়, পূর্ব আফ্রিকা উপকূলে জলদস্যুতা নির্মূলে কাজ করে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সও তাদের ‘অপারেশন আটলান্টার’ অংশ হিসেবে এমভি আবদুল­াহর ওপর নজর রাখছে।
আমরা মনে করি, সরকার কৌশলগতভাবে নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জাহজটি উদ্ধারের তৎপরতা চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে বিভিন্ন দেশকে সম্পৃক্ত করে জাহাজটি উদ্ধারের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সামুদ্রিক বিষয়ক ইউনিট সচিব সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা এখনও জানি না জলদস্যুদের কি দাবি-দাওয়া।
আমরা যদি জানতে পারি, তখন হয়তো কৌশলগতভাবেই গণমাধ্যমকে পুরোপুরি জানাতে পারব না। তবে যেভাবে ‘জাহান মনিকে আনা হয়েছে, যেভাবে ‘আল-বেদো’ থেকে নাবিকদের অক্ষত আনা হয়েছে সেই অভিজ্ঞতার অলোকে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। ‘জাহান মনি’ আনতে একশ’ দিন লেগেছে, আর মালয়েশিয়ান জাহাজ থেকে সাতজন ক্রু ফেরত আনতে লেগেছে তিন বছর চারমাস। কাজেই সময় একটা ব্যাপার। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, জাহাজটির খাদ্য মজুদের উপর দস্যুদের ভাগ বসানোর বিষয়টি। দস্যুদের কাছে মানবিকতা প্রত্যাশা করা যায় না। তাই সরকারের প্রচেষ্টার জায়গাটি আরো জোরালো কৌশলি হতে হবে। যত দ্রæত সম্ভব জাহাজ ও নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা জরুরি।