এমপি হওয়ার শখ ছিল নাথান বমের

46

রাহুল দাশ নয়ন

বান্দরবান আসন থেকে সংসদ সদস্য হতে চেয়েছিলেন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথানা লনচেও বম। স্থানীয়ভাবে বম পার্টির নেতা হিসেবে পরিচিত এই নেতা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন। সেসময় ভোটারের স্বাক্ষরে অমিল থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। তবে কেএনএফ গঠন নিয়ে সরকারের চাপে থাকায় শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে নাথানের মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে নির্বাচন কমিশন।
বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘নাথান বম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিল। সেসময় আমাদের কাছে এত পরিচিত ছিল না ছেলেটি। পরে জানলাম ওই ছেলে এমপি হতে নাকি ফরম নিয়েছিলেন। যদিও পরে প্রার্থীতা বাতিল হওয়ায় নির্বাচন করতে পারেনি। এরপর থেকেই মূলত সে নিজে দল গঠন করে শক্তিশালী অবস্থান নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। যার ফলশ্রুতিতে গঠন করেছে কেএনএফ’।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এরমধ্যে তিনজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। প্রত্যাহার করেন দুইজন প্রার্থী। বৈধ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন চারজন প্রার্থী। নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বীর বাহাদুর উশৈসিং। এই নির্বাচনে মনোনয়ন বাতিল হওয়া তিনজনের মধ্যে একজন ছিলেন নাথান লনচেও বম।
২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া নাথান বম হলফনামায় উল্লেখ করেন, বান্দরবানের রুমা উপজেলার ৩৫৬নং পলি মৌজার ইডেন পাড়ার জাওতন লনচেও ও বৌকিল বম দম্পতির সন্তান নাথানা বম। বিএ (অনার্স) পাস করা নাথানের পেশা চিত্রশিল্পী ও লেখক। তার অঙ্কিত ও প্রকাশিত গ্রন্থাদি বিক্রয় এবং শিল্পসৃষ্টি করেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন।
আয়ের উৎসের মধ্যে নাথান বম দেখান বাড়ি ভাড়া থেকে নিজে দেড় লক্ষ টাকা, নির্ভরশীলের আয় ৫০ হাজার টাকা, পেশাগত শিল্পকর্ম থেকে নিজের আয় ছয় লক্ষ টাকা ও নির্ভরশীলরা আয় করেন এক লক্ষ টাকা। অস্থাবর সম্পদেও মধ্যে নিজ নামে নগদ টাকা ছিল তিন লক্ষ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল নিজ নামে দুই লক্ষ টাকা, স্ত্রীর নামে চার লক্ষ টাকা, স্বর্ণ ছিল নিজ নামে পাঁচ লক্ষ টাকার, স্ত্রীর নামে দুই লক্ষ টাকা, ব্যবহার্য্য সামগ্রী ছিল নিজ নামে তিন লক্ষ টাকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে কৃষি জমির মূল্য তিন লক্ষ টাকা, অকৃষি জমির মূল্য চার লক্ষ টাকা, দালানের মূল্য সাত লক্ষ টাকা, বাড়ির মূল্য তিন লক্ষ টাকা।
মনোনয়নপত্র জমার সাথে নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎসের বিবরণী জমা দেন নাথানা বম। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, নিজ আয় শিল্পকর্ম (পেইন্টিং ও স্থাপত্যকর্ম) থেকে সৃষ্টি ও প্রকাশিত গ্রন্থাবলী বিক্রয় থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা নির্বাচনে ব্যয় করবেন। এছাড়াও নাথান বমের কাকা রুমার ইডেনপাড়ার রুয়ালতিøন বম দুই লক্ষ টাকা, মামাতো ভাই বেথেলপাড়ার লালরামত্নিং বম দুই লক্ষ টাকা, বড় ভাই ইডেন পাড়ার তোয়ারলম বম এক লক্ষ টাকা দেয়ার তথ্য উল্লেখ করেন। এই তিনজন বাগান চাষের আয় থেকে নাথান বমকে নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। একইভাবে রুমার ইডেন পাড়ার বড় ভাই লালবৌপুই বম ৫০ হাজার টাকা, বড় ভাই জুয়ামভাম বম ৫০ হাজার টাকা, সারণ পাড়ার কাকাতো ভাই চেউসিম বম এক লক্ষ টাকা দান হিসেবে নাথান বমের নির্বাচনে ব্যয় নির্বাহের তথ্য দেয়া হয়। রুমার সুনসং পাড়ার লালমুনধিয়াল বম, লাইলুনপি পাড়ার ভানলালরুযাত মুরং দুই লক্ষ টাকা নাথানকে ধার দেয়ার প্রতিশ্রæতি দেন। এছাড়াও ইডেন পাড়ার লালথংথাং বম ২৫ হাজার টাকা, মুনলাই পাড়ার জিনমযান বম ৫০ হাজার টাকা, বাকলাই পাড়ার রামময় বম ৫০ হাজার টাকা, গীর্জাপাড়ার তনলিয়ান বম ৫০ হাজার টাকা দান হিসেবে নাথানকে নির্বাচনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। নিজের আয়ের পাশাপাশি এই ১২ জন ব্যক্তির দেয়ার অর্থেই মূলত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন নাথান লনচেও বম।
বান্দরবানের রুমা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শৈমং মারমা পূর্বদেশকে বলেন, ‘সেসময় নাথান তেমন পরিচিত না থাকলেও বম সম্প্রদায়ের নেতা হিসেবে কাজ করতো। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম জমা দিলেও প্রার্থীতা বাতিল হয়েছিল। ভোটারের স্বাক্ষরে মিল না থাকায় তার প্রার্থীতা বাতিল করেছিল ইসি। সেসময় কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও বম সম্প্রদায়ের নেতা হিসেবে সে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এমপি হতে চেয়েছিল। এরপরে সে কোন পথে গেছে তা কারও অজানা নয়। পত্র-পত্রিকা খুললেই এখন তাকে সবাই দেখছে’।