এবার ২০ থানায় বিভক্ত হচ্ছে মহানগর পুলিশ

158

নিজস্ব প্রতিবেদক

কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু ট্যানেলসহ সম্ভাব্য ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় নগর পুলিশের ১৬ থানার পর নতুন করে আরও চারটি থানা সংযুক্ত হচ্ছে। নতুন এই চার থানা যুক্ত হলে সিএমপিতে থানার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২০ টিতে। থানার সংখ্যা বাড়লেও সাধারণের সেবা পাওয়া নিয়ে নানান প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আদৌ সাধারণ মানুষ তার কাঙ্খিত সেবা পাবে, না কী মানুষের সেবার স্থলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারকদের সেবার ব্যাপ্তি ঘটবে- এ নিয়েই চলছে আলোচনা।
যুক্ত হতে যাওয়া এই প্রস্তাবিত নতুন থানাগুলো হচ্ছে সিএমপির উত্তর বিভাগের আওতায় মোহরা থানা, পশ্চিম বিভাগের আওতায় কাট্টলী থানা, বন্দর বিভাগের আওতায় বঙ্গবন্ধু টানেল উত্তর থানা এবং বঙ্গবন্ধু টানেল দক্ষিণ থানা।
এর আগে সর্বশেষ ২০১২ সালে মহানগর এলাকায় চারটি নতুন থানা স্থাপনের মাধ্যমে সিএমপির মোট থানার সংখ্যা ১২টি থেকে ১৬টিতে বিভক্ত হয়ে সিএমপির কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল।
এর আগে ২০১২ সাল থেকে ১৬ থানায় বিভক্ত হয়ে কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া সিএমপি ২০১৫ সালে চারটি, ২০১৮ সালে আটটি, ২০২১ সালে ৬টি থানা গঠনের উদ্যোগ নিলেও সীমানা জটিলতা এবং জেলা পুলিশের আপত্তি এবং পুলিশ সদর দপ্তরও মন্ত্রণালয়ের বিধি-বিধানের মারপ্যাঁচে পড়ে তা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। তবে বঙ্গবন্ধু টানেলের নিরাপত্তাকে ঘিরে সব বাধা পেরিয়ে নগর পুলিশে নতুন করে আরও চারটি থানা যুক্ত হওয়ার বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিএমপির এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডিং বিভাগের উপ-কমিশনার এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, থানা স¤প্রসারণের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেয়া হলেও নানা জটিলতায় তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ নতুন করে চারটি থানা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনার ফাইলটি পুলিশ সদর দপ্তর হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন শেষে তা বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আমরা আশা করছি, যথাশীঘ্রই এ বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
সিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা সীমানা নির্ধারণ এবং জনবল কাঠামোর বিষয়গুলো বিচার বিশ্লেষণ করে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। তা যথাযথ হয়েছে। এ নিয়ে কোনো আপত্তি ছিল না বলেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গেছে। প্রজ্ঞাপন জারি হলে থানার অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য বিষয়াদি চূড়ান্ত করা হবে। যদিও এরই মধ্যে আমরা কিছু কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্নও করেছি। প্রজ্ঞাপন জারি হলে থানার আনুষ্ঠানিকভাবে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করতে আর বেশি সময় লাগবে না।
সিএমপি সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যার বিচারে রাজধানী ঢাকার চেয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়। তাছাড়া কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেল, বঙ্গোপসাগরের সৈকতের পাশ দিয়ে নির্মিত আউটার রিং রোড, প্রস্তাবিত কালুরঘাট নতুন সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ মেগা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বন্দরনগরীকে ঘিরেই। এ কারণে পরবর্তী সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে চারটি থানা স্থাপন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল ও নগরীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকে কেন্দ্র করে সিএমপির বন্দর বিভাগের পতেঙ্গা থানাকে ভাগ করে ৪১ নম্বর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের সাথে নেভাল একাডেমি, বিমানবন্দর, পতেঙ্গা সৈকত ও টানেলের উত্তরাংশ আওতায় নিয়ে নতুন করে স্থাপিত হবে বঙ্গবন্ধু টানেল উত্তর থানা। নদীর অপর প্রান্তে স্থাপিত হবে বঙ্গবন্ধু টানেল দক্ষিণ থানা। আনোয়ারা থানার কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার (কাফকো), ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল), আনোয়ারা পারকি সমুদ্র সৈকত এবং টানেলের টোল প্লাজা থাকবে এই থানার আওতায়।
একইভাবে সিএমপির উত্তর বিভাগের চান্দগাঁও থানার মোহরায় নির্মিতব্য জান আলী হাট রেল স্টেশন, প্রস্তাবিত নতুন কালুরঘাট সড়ক কাম রেল সেতু, ওয়াসার পানি শোধনাগার প্রকল্প, কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকা ও বিসিক এলাকার নিারাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে সমগ্র মোহরা ওয়ার্ড এলাকাকে নিয়ে স্থাপিত হবে মোহরা থানা। ইতোমধ্যে বিদ্যমান কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির স্থলে ছয় তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। মূলত সেই ভবনটিই মোহরা থানা হিসেবে ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি সিএমপির পশ্চিম বিভাগের আকবরশাহ থানা এলাকার ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের সাথে শহরতলীর সীতাকুন্ডের ছলিমপুর এলাকার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হবে কাট্টলী থানা। যেখানে আউটার রিং রোড, বায়েজিদ লিংক রোড এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা স্থাপনা রয়েছে। যদিও ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু টানেলকে ঘিরে বঙ্গবন্ধু টানেল থানা, বড় উঠান থানা ও বিমানবন্দর থানা এবং চান্দগাঁও থানার একাংশ নিয়ে মোহরা থানা, চান্দগাঁও ও বায়েজিদ বোস্তামি থানার একাংশ নিয়ে অনন্যা থানা এবং আকবরশাহ ও পাহাড়তলী থানার একাংশ নিয়ে কাট্টলী থানা করার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন পক্ষের আপত্তির মুখে ওই প্রস্তাবনাটি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ফেরত আসে। বর্তমানে সিএমপির ১৬ থানা ও রিজার্ভ ফোর্সসহ মোট পুলিশ ফোর্সের সংখ্যা সাত হাজারের বেশি। এই চারটি থানার কার্যক্রম শুরু হলে অন্ততপক্ষে আরও পাঁচশ’ অফিসার ও ফোর্স বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ বন্দরনগরীর চট্টগ্রাম মহানগরে ১৯৭৮ সালের ৩০ নভেম্বর সিএমপির কার্যক্রম শুরু হয় ছয়টি থানা নিয়ে। মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশের বর্তমানে ৬০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনজুড়ে সিএমপির কার্যক্রম বিস্তার লাভ করেছে। বিগত ২০০০ সালে থানার সংখ্যা আরও ছয়টি বাড়িয়ে ১২টিতে উন্নীত করা হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালে মহানগর এলাকায় আরও চারটি নতুন থানা স্থাপনের মাধ্যমে মোট ১৬টি থানায় বিভক্ত হয়ে সিএমপির কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এরইমধ্যে অবশ্য সিএমপির অপরাধ ও ট্রাফিক বিভাগ চার জোনে বিভক্ত হয়েছে। তন্মধ্যে উত্তর জোনের আওতায় চান্দগাঁও, খুলশী, পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ, দক্ষিণ জোনের আওতায় কোতোয়ালী, বাকলিয়া, চকবাজার ও সদরঘাট, পশ্চিম জোনের আওতায় পাহাড়তলী, হালিশহর, আকবরশাহ ও ডবলমুরিং এবং বন্দর জোনের আওতায় বন্দর, পতেঙ্গা, কর্ণফুলী ও ইপিজেড থানার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।