এদিন প্রথমবার স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন

29

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একাত্তরের ৩ মার্চ এক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে পল্টন ময়দানে ছাত্ররা প্রথমবারের মতো স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। একাত্তরের ৩ মার্চ আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদিন দেশব্যাপী অর্ধ-দিবস হরতাল আহŸান করেন এবং তা শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়। এদিন ছিল জাতীয় পরিষদের নির্ধারিত অধিবেশনের প্রথম দিন। পরবর্তীতে তা পালিত হয় ‘জাতীয় শোক দিবস’ হিসেবে।
ওইদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে ‘সেনাবাহিনী প্রত্যাহার এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের’ দাবি জানান। বিকেলে পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিশাল রাজনৈতিক সমাবেশের আয়োজন করে। অনির্ধারিতভাবে সেই সমাবেশে যোগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি উপস্থিত ছাত্র-জনতাকে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের আহবান জানান। তিনি একাত্তরের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে তার সমাবেশ পর্যন্ত জনগণকে অপেক্ষা করতে বলেন। তিনি এও উল্লেখ করেন, সাতই মার্চের সমাবেশে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেবেন। ছাত্ররা সমাবেশে ‘স্বাধীন বাংলাদেশের ম্যানিফেস্টো’ পড়ে শোনায় এবং বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে।
এরইমধ্যে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মো. ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে টেলিফোন করেন এবং ১০ মার্চ ইসলামাবাদে সর্বদলীয় আলোচনা অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এদিন রাত আটটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আবার কারফিউ জারি করা হয়। প্রতিবাদকারীরা আবারও কারফিউ চ্যালেঞ্জ করে। কিন্তু এসময় ঢাকায় বিক্ষোভকারীদের ওপর কোনোরকম গুলিবর্ষণ করা হয়নি। তবে দেশের অন্যান্য এলাকার পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। সিলেট, রংপুর, চট্টগ্রাম ও খুলনায় রাস্তায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। সেখানে পাকিস্তানি পতাকা ও অন্যান্য প্রতীক পোড়ানো হয়। প্রশাসন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত আবারও কারফিউ জারি করে। বিক্ষুব্ধ জনতা তা প্রত্যাখ্যান করে। পাকিস্তানি সৈন্যরা জেলা শহরগুলোতে গুলি চালায় এবং অনেককে হতাহত করে। একাত্তরের পয়লা মার্চ থেকেই বাঙালি পুলিশ সদস্যরা ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে।