এক বছরে সড়কে প্রাণহানি ৮১০৪ জনের

10

পূর্বদেশ ডেস্ক

২০২২ সালে মোট ৭০২৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে ৮১০৪ জনের। আহত হয়েছেন ৯৭৮৩ জন। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তৃতীয় তলায় ২০২২ সালের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
‘২০২২ সালের সড়ক দুর্ঘটনা পরিসংখ্যান উপস্থাপন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, ২০২২ সালে সড়ক পথে ৫০৭০টি দুর্ঘটনায় ৫৭৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৭৩৩১ জন। রেলপথে ২৫৬টি দুর্ঘটনায় ২৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৫১ জন। নৌপথে ৭৭টি দুর্ঘটনায় ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ হয়েছেন ১৮৬ জন, আর আহত হয়েছেন ১৪৪ জন।
এছাড়া অপ্রকাশিত তথ্য ও হাসপাতালে ভর্তির পর এবং হাসপাতাল থেকে রিলিজের পর মৃত্যুর সংখ্যা আনুমানিক ৩০ শতাংশ ধরে আরও ১৮৭০ জনের মৃত্যুর তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।এক্ষেত্রে আরও ১৬২১টি দুর্ঘটনা যোগ করা হয়েছে। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে পুরুষ রয়েছেন ৫২৪২ জন এবং মহিলার সংখ্যা ৯৯২ জন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনা গত দুই বছরের তুলনায় বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে ২০৪১টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২৪১৫ জন এবং আহতের সংখ্যা ৩৯৭৮ জন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৮১ জন, ফেব্রæয়ারিতে ৪৮৯, মার্চে ৬৭৫, এপ্রিলে ৫৫৫, মে মাসে ৫৯৫, জুনে ৫৭৬, জুলাইয়ে ৫৭৬, আগস্টে ৪৩৪, সেপ্টেম্বরে ৪১৩, অক্টোবরে ৩৭৪, নভেম্বরে ৫০৬ এবং ডিসেম্বরে ৪৬০ নিহত হয়েছেন।
গত বছর সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার (সড়ক, নৌ, রেল পথ ও বিমানপথ) জন্য যেসব কারণকে চিহ্নিত করেছে নিসচা হয়েছে সেগুলো হলো- সড়কের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের অভাব, টাস্কফোর্স কর্তৃক প্রদত্ত ১১১টি সুপারিশনামা বাস্তবায়ন না হওয়া, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা, দৈনিক চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালনা, লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ, মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া চালানো মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার না করা, সড়ক, মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়কে গতিসীমা নির্ধারণ না করা, চালকদের মাদকে আসক্তি, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, বিপজ্জনক ওভারটেকিং ও ওভারলোডিং করা, বিরতি ছাড়াই দীর্ঘসময় ধরে গাড়ি চালনা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালনা বন্ধে আইনের প্রয়োগ না থাকা, সড়ক ও মহাসড়কে বৈধ ও অবৈধ গাড়ি বৃদ্ধি- বিশেষ করে দুই চাকার যানবাহন, মহাসড়কের নির্মাণ ত্রæটি, একই রাস্তায় বিভিন্ন গতির যানবাহন চলাচল, রাস্তার পাশে হাটবাজার ও দোকানপাট, প্রশাসনের চোখের সামনে দিতে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালনায় প্রায়শই দুর্ঘটনার খবর আমাদের চোখে পড়েছে। অনেকে আবার ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে অসাধু পন্থায় টাকা কামাতে গিয়ে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। তাছাড়া ব্যাটারিচালিত যান সড়ক মহাসড়কে উঠে বেপরোয়া গতিতে চলতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
এছাড়াও সকল ধরনের যানবাহনে অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৮ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া মূল কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়। পাশাপাশি সড়কপথে সংঘটিত বড় দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে অতিরিক্ত গতি, ওভারলোড ও বিপদজনক ওভারটেক। এছাড়া সড়কে যান নামানোর পূর্বে গাড়ির যন্ত্রাংশসমূহ ও ব্রেক চেকিং না করায় এ বছর কিছু দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে।
সেইসাথে রেলপথে সংঘটিত দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে অরক্ষিত রেলক্রসিং পারাপারে মোটর সাইকেল, অটোরিক্সা, মহেন্দ্র, লেগুনা, সিএনজি, ও বাস-ট্রাক সতর্কতা অবলম্বন না করায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এছাড়া ট্রেনে কাটা পড়ে যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই মোবাইল ফোনে কথা বলা ও এয়ারফোন ব্যবহারের কারণে।
এবার নৌপথে সংঘটিত দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে আমাদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে বেপোরোয়াভাবে নৌ চলাচল ও ঘন কুয়াশার কারণে। বিশেষ করে বাল্কহেড, ছোট লঞ্চ ও নৌকা নৌপথে ইচ্ছেমত চালনার কারণে। এছাড়া লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনা হলো অসতর্কতা, দাহ্য পদার্থ সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও মনিটরিংয়ের অভাব এবং ক্ষেত্রবিশেষে যাত্রীদের অসতর্কতা যেমন ধুমপান করা ও কয়েল জ্বালানো ইত্যাদি।