এক ছাত্রকে এসএসসি থেকে বিরত রাখার যুদ্ধ

171

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার একজন অনিয়মিত ছাত্রকে পরীক্ষা থেকে বিরত রাখতে রীতিমতো ‘যুদ্ধে’ নেমেছে নগরীর দক্ষিণ খুলশীর ‘রেডিয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ’ কর্তৃপক্ষ। মো. আলভী ইকবাল নামে ওই শিক্ষার্থী এ স্কুল থেকে জেএসসিতে জিপিএ-৫ পায়, কিন্তু গত বছর এসএসসি দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে একটি বিষয়ে সে ফেল করে। অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে এবার এসএসসিতে অংশ নিতে স্কুলে দুইবার নির্বাচনী পরীক্ষা দিয়েও তাকে ফরম পূরণের সুযোগ দিচ্ছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে তার পিতা অভিযোগ করার পর জেলা প্রশাসন স্কুল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে, কিন্তু তাও গ্রাহ্য করেননি অধ্যক্ষ। অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ব্যাপারে শিক্ষাবোর্ডের সুস্পষ্ট বিধি থাকার পরও তাকে পরীক্ষায় অংশ দিতে দেওয়া হচ্ছে না। স্কুলের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়ার কারণেই এমন হয়রানি করছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের।
আলভী ইকবালের পিতা জাবেদ ইকবাল পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমার ছেলে এ স্কুল থেকেই পিইসি, জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সব পরীক্ষায় তার ফলাফল ভাল ছিল। কিন্তু এসএসসিতে অসুস্থতার কারণে একটি পরীক্ষা খারাপ হয়। অনিয়মিত ছাত্র হিসাবে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেয়ার আবেদন করলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তালবাহানা শুরু করে। ইচ্ছাকৃতভাবে তারা নির্বাচনী পরীক্ষায় আমার ছেলেকে ফেল দেখাচ্ছে। যে সবগুলো বিষয়ে ভাল ফলাফল করে সে কিভাবে ফেল করে? এমনই যদি হয়, তাহলে ১২ বছর এই স্কুলের শিক্ষকরা কি করেছিল?’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসাবে রেডিয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মো. আলভী ইকবাল। এতে সবগুলো বিষয়ে ভাল ফলাফল করলেও অসুস্থতা নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ায় একটি বিষয়ে (গণিত) অকৃতকার্য হয় সে। যদিও জেএসসি পরীক্ষায় আলভী জিপিএ-৫ পেয়েছিল। প্রথমবার অকৃতকার্য হওয়ায় ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অনিয়মিত ছাত্র হিসাবে অংশ নিতে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নেয় আলভী। বোর্ডের নির্দেশনাতেও অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণের বিষয়টি শিথিলযোগ্য করা হয়েছে। এরপরও অনিয়মিত শিক্ষার্থী আলভী ইকবালকে বোর্ডে পরীক্ষায় এক বিষয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ না দিতে নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। আলভীর অভিভাবকরা বারবার স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্না দিলেও কারো কোনো কথাই গ্রাহ্য করছে না তারা। মনগড়াভাবেই শিক্ষার্থীকে পড়ালেখা থেকে বিরত রাখতে তৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ আলভীর অভিভাবকদের।
এ বিষয়ে কথা বলতে রেডিয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ অরুনাশি তালুকদার উর্মিলার মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন করার পর অপর প্রান্ত থেকে তিনি মার্কেটে গেছেন বলে জানানো হয়। একই বিষয়ে কথা বলতে রেডিয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান হাসিনা জাকারিয়ার ফোনেও বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্রটা শিক্ষা জীবনের পুরো সময় একই স্কুলে পড়েছে। শারীরিক অসুস্থতায় সে এসএসসিতে একটা বিষয়ে ফেল করে। তার সবগুলো পরীক্ষার ফলাফল আমি দেখেছি। সে আসলে ভাল ছাত্র। তাকে তালবাহানা করে পরীক্ষায় অংশ নিতে না দেওয়াটা মারাত্মক অন্যায় কাজ হবে। বোর্ডের নির্দেশনা আছে অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না।’
এদিকে গত ১৮ নভেম্বর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু হাসান সিদ্দিক স্বাক্ষরিত রেডিয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ অধ্যক্ষকে উল্লেখ করে এক পত্রে বলা হয়, রেডিয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী মো. আলভী ইকবাল ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ৬ বিষয়ে ‘এ+’, ৩ বিষয়ে ‘এ-’ ও ১ বিষয়ে ফেল করে। ২০২০ সালে অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য দুইবার তার টেস্ট পরীক্ষা গ্রহণ করলেও তাকে ফরম পূরণের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না মর্মে জানিয়ে এ কার্যালয়ে একটি আবেদন করে এবং সে কৃতকার্য হবে মর্মে অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। উল্লেখ্য, জেএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছিল এবং ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলও সন্তোষজনক মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।’
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘শিক্ষা বোর্ডের বর্ণিত নির্দেশনার অনুবলে তাকে ২০২০ সালের অনিয়মিত এসএসসি পরীক্ষার্থী হিসেবে ফরম পূরণসহ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘যে সকল শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হয়েছে তাদের নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণের বিষয়টি শিথিলযোগ্য।’